দাপুটে জয়ে সিরিজ আফগানিস্তানের
চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। ব্যাটিংয়ে মান রাখল। বোলিংয়েও তা-ই। ফিল্ডিংটাও হলো আঁটসাঁট। ভুলে করে ফিরে এসে সুযোগও সৃষ্টি করল ভালোভাবে। কিন্তু দিনটা আজ বাংলাদেশের ছিল না।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিততে নিজেদের সামর্থ্যের সবটাই উজার করে দিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু ভাগ্যদেবী এদিন পাশে দাঁড়াল আফগানিস্তানের। বাংলাদেশের চেয়ে সেরা ক্রিকেট খেলে তৃতীয় ওয়ানডে জিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজটাও জিতে নিল আফগানিস্তান।
নিজেদের পরিচিত ডেরায় বাংলাদেশকে কোনো সুযোগ না দিয়ে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে আফগানিস্তান। শারজায় টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ২৪৪ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান ১০ বল হাতে লক্ষ্যে পৌঁছে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখে দারুণভাবে। দুই দলের সবশেষ সিরিজে বাংলাদেশে আফগানিস্তান ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে আরো একবার বিজয়ের হাসি হাসল তারা।
আগের দুই ওয়ানডে হয়েছিল ব্যবহৃত উইকেটে। তৃতীয় ওয়ানডেতে নতুন উইকেটে ধারনা করা যাচ্ছিল ব্যাটিং বান্ধব হবে। বাংলাদেশের শুরুটা সেই সুরও বেঁধে দেয়। কিন্তু ভালো শুরুর পর যা হলো, রীতিমত অভাবনীয়।
প্রথম ১৫ ওভারে ৪ উইকেটে ৭২ রান তুলে নেয় বাংলাদেশ। আরো গভীরে গেলে, ৮.৩ ওভারে সৌম্য সরকার (২৪) যখন প্লেড অন হয়ে সাজঘরে ফেরেন তখন বাংলাদেশের রান ৫৩। পরের ওভারে ওই একই রানে আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান (১৯) ফেরেন সাজঘরে। শান্তর পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পাওয়া জাকির হাসান (৪) ৫৮ রানে লম্বা ওয়াক দেন ড্রেসিংরুমে। মিরাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে। তাওহীদ হৃদয় (৭) আরেকবার ব্যর্থ হয়ে যখন আউট হন তখন ১৪.৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ৭২।
সেখান থেকে ১৮৮ বলে ১৪৫ রানের জুটি গড়েন মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ। দলের পরিস্থিতি, আফগানিস্তানের আক্রমণ এবং অনভ্যস্ততা বিবেচেনায় এই জুটি লেটার মার্কস পাবে। কিন্তু দুই ব্যাটসম্যান যেভাবে বিপরীত চরিত্রে ব্যাটিং করেছে তা প্রশ্ন তুলছে।
মিরাজ ফিফটি পেয়েছেন ১০৬ বলে। যা ২০০৫ সালের পর বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাটসম্যানের মন্থরতম ফিফটি। অন্যদিকে মাহমুদউল্লাহ ফিফটি পেয়েছেন ৬৩ বলে। দুজনের ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে মনে হচ্ছিল দুজন ভিন্ন উইকেটে ব্যাটিং করছিলেন। মিরাজ ১১৯ বলে মাত্র ৪ বাউন্ডারিতে ৬৬ রান করেন। মাহমুদউল্লাহ ইনিংসের শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরির প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও ৯৮ রানের বেশি করতে পারেননি। ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ইনিংসটি সাজিয়ে এক আকাশ হতাশা নিয়ে ফেরেন।
তবে তার এই ইনিংস নিশ্চিতভাবেই স্বস্তি ফিরিয়েছে। শেষ চার ওয়ানডে ইনিংসে রান ছিল যথাক্রমে ০, ১, ২ ও ৩। মাহমুদউল্লাহ ছিলেন প্রবল চাপে। সঙ্গে যোগ হয় তার হ্যামস্ট্রিং চোট। ইনিংসের শুরুতে ৪ রানে থাকা অবস্থায় কোমড়ে ব্যথা শুরু হয়। ব্যাকফুটে গিয়ে একটি শট খেলতে গিয়ে কোমড়ে টান পড়ে। মাঠেই পেইনকিলার নিয়ে আবার ব্যাটিং শুরু করেন।
কিন্তু জড়তা কাটছিল না। ফিফটির পর হ্যামস্ট্রিং চোটে রানিং বিটিউন দ্য উইকেটে সমস্যা বাড়তে থাকে। তবুও চেষ্টার কমতি রাখেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। নিবেদনে রাখেননি ঘাটতি। তার ৯৮ রানের ঝকঝকে ইনিংসে বাংলাদেশ ২৪৪ রানের পুঁজি পায়।
আফগানিস্তানও অপেক্ষায় ছিল আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের ফাইফারের। ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত সুযোগ ছিল। কিন্তু ৭ ওভারে ৩৭ রানে ৪ উইকেটে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। দলের সেরা বোলারও ছিলেন তিনি।
বোলিংয়ে উইকেটের খোঁজে থাকা বাংলাদেশ অষ্টম ওভারে প্রথম সাফল্য পায়। অভিষিক্ত পেসার নাহিদ রানার তোপে বোল্ড হন সেদিকুল্লাহ অটল। পেসার তাসকিন গত দুই ম্যাচে নতুন বলে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে শুরুতেই বাংলাদেশকে আনন্দে ভাসিয়েছেন। আজ তাসকিন ছিলেন না। তাতে গুরবাজও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। এমন-ই স্বস্তিতে ব্যাটিং করেছেন যে, পেয়ে গেছেন ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরির স্বাদ। ৭ ছয় ও ৫ চারে ১১৭ বলে পৌঁছে যান তিন অঙ্কের মাইলফলকে।
দুই অভিজ্ঞ রহমত শাহ (৮) ও হাশমতউল্লাহ শাহিদীকে (৬) বাংলাদেশ টিকে দেয়নি। ৮৪ রানে ৩ উইকেট হারানো আফগানিস্তান চতুর্থ উইকেটে ম্যাচে ফেরে। শতরানের জুটি গড়েন গুরবাজ ও আহমতউল্লাহ। দুজনের প্রতি আক্রমণের ব্যাটিং পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে কালো মেঘ দেখা দিতে থাকে। জয়টা যেন হাতের নাগাল থেকে ছুটে যেতে থাকে।
চার-ছক্কায় রান তুলতে থাকা এই জুটি ভাঙেন অধিনায়ক মিরাজ। আফগানিস্তান যখন জয় থেকে ৬১ রানে দূরে তখন সেঞ্চুরিয়ান গুরবাজকে সীমানায় আটকে দেন বাংলাদেশের দলপতি। ১০১ রান করে আফগান ওপেনার আউট হওয়ার পরপরই নাহিদ রানা বোলিংয়ে ফিরে গুলবাদিন নাইবকে আউট করেন। ৪ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট তুলে বাংলাদেশ আবারও ম্যাচে ফিরে।
কিন্তু আগের দুই ম্যাচে রানের খাতাই খুলতে না পারা ওমারজাই যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন তাতে ভয় পিছু ছাড়ছিল না। দারুণ ব্যাটিংয়ে পেস অলরাউন্ডার ৫৭ তুলে নেন ফিফটি। তাকে সঙ্গ দিয়ে থিতু হওয়ার পর নবীও চালান আক্রমণ। এই জুটিতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। তাদের ৪৮ বলে ৫৮ রানের জুটিতেই আফগানিস্তান জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে। ওমারজাই ৭৭ বলে ৭০ রানে অপরাজিত থাকেন ৫ ছক্কা ও ৩ চারে ইনিংস সাজিয়ে। নবী ২৭ বলে ৩৪ রান করেন চোখের পলকে।
জয় নিশ্চিতের পর আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের উল্লাস এবং ড্রেসিংরুমের আবহ বলে দিচ্ছিল ম্যাচটা তারা যেকোনো মূল্যে জিততে চায়। ব্যাট-বলের দারুণ লড়াইয়ে জয়ের মালা তাদেরই প্রাপ্য।
ঢাকা/ইয়াসিন