২০ বছর ক্রিকেট খেলা ‘নট অ্যা জোক’
২২ গজে বছরের পর বছর খেলে গেছেন নিরবে নিভৃতে। হঠাৎ অবসরের ঘোষণায় চোখের পলকে চলে এলেন পাদপ্রদীপের আলোয়। ক্যামেরার ফোকাস খুঁজতে থাকে তাকে। মুঠোফোনে জমা পড়ে কলের পর কল।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে বিকেলে অবসরের আনুষ্ঠানিকতার পর সন্ধ্যায় ফরহাদ হোসেন বের হলেন পরিবার নিয়ে। বিশেষ সময়টাকে করে নিতে চাইলেন আরও বিশেষ।
তাইতো ঢাকায় বসে রাজশাহী থেকে মুঠোফোনের অপর প্রান্ত থেকে উত্তর এলো, ভাই, ‘পরিবার নিয়ে একটু বের হয়েছি, আপনাকে মধ্যরাতে কল দেব, যদি জেগে থাকেন।’
২০ বছর ধরে খেলেও যে ক্রিকেটার সর্বোচ্চ পর্যায় তথা জাতীয় দলের কোনো সংস্করণের জার্সি গায়ে জড়াতে পারেননি, তার জন্য সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করা কঠিন কিছু তো নয়।
অপেক্ষার পালা ফুরোয়। ঘড়ির কাটা মধ্যরাতে যাওয়ার আগে ফরহাদের কল বেজে ওঠে। এত লম্বা সময় ধরে খেলেছেন, জাতীয় দলে জায়গা পাননি, আফসোস কাজ করে না? এমন প্রশ্ন করতে তর সইছিল না, তাই শুরুতেই ছুঁড়ে দিলাম এমন প্রশ্ন। ফরহাদের উত্তর, ‘আমার কোনো আক্ষেপ নেই, আমি যেখানে খেলার যোগ্য সেখানে খেলে গেছি।’
তবুও আপনি কেন জায়গা পাননি, ক্যারিয়ারের শেষে এসে এখন এটি কি বুঝতে পেরেছেন? ফরহাদ বলেন, ‘একটা স্পোর্টসম্যান যখন খেলা শুরু করে তার গোল থাকে জাতীয় দল। আমারও ইচ্ছা ছিল। আমার ভাগ্যে লেখা ছিল না হয়তো। কিন্তু আমার ফোকাস ছিল, লক্ষ্য ছিল পারফরম্যান্স করা। আমি ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলাম, যেন কেউ কখনো পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলতে না পারে।’
ফরহাদ নিজেই বলছেন তিনি পারফরম্যান্স করে গেছেন। পারফর্ম করলে তো জাতীয় দলে ডাক পড়ার কথা। পাল্টা প্রশ্নে ফরহাদের উত্তর, ‘আমি যদি ফিট না থাকতাম এতদিন ক্রিকেট খেলতে পারতাম না। ২০ বছর ধরে খেলা নট অ্যা জোক। আল্লাহর বিশেষ রহমত আমি কখনো ইনজুরড হইনি। ফিটনেসের একটু আপস অ্যান্ড ডাউন হয়। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় তখনকার সময়ে আমি একটু কম উপভোগ করতাম। এই জায়গাটা আমাকে পিছে ঠেলে দেয়।’
ফরহাদ উদাহরণ দিতে গিয়ে এই প্রজন্মের ক্রিকেটারদের কথাও টেনেছেন। তার মতে এখনকার উঠতি ক্রিকেটাররা শুরুতে জাতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করে। তারা বুঝতে পারে কখন কোথায় কি করলে জাতীয় দলে জায়গা পাবে। তার সময়ে এই বিষয়টা এত সহজ ছিল না। সঙ্গে নিজেও উপভোগ করতেন না। সব মিলিয়ে পিছিয়ে দেয়।
ফরহাদের সঙ্গে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পথচলা শুরু করেন নাঈম ইসলাম, সোহরাওয়ার্দী শুভ ও ফরহাদ রেজা। মুশফিকুর রহিম থেকে শুরু করে সাকিব আল হাসানরা তার সমসাময়িক, বন্ধুতুল্য। ফরহাদ ছাড়া এদের প্রত্যেকে জাতীয় দলে খেলেছেন, মুশফিক তো এখনো পারফর্ম করে যাচ্ছেন দুই সংস্করণে। তাদের দেখেও কোনো আফসোস কাজ করে না ফরহাদের। খুশি আছেন নিজের জায়গাতে।
রাজশাহীর এই ক্রিকেটারের প্রথম শ্রেণিতে অভিষেক হয় ২০০৫ সালের মার্চে। শেষ ম্যাচ খেলতে নামেন নভেম্বর, ২০২৪ এ। ৩৫.৯৭ গড়ে ১৬১ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে রান আসে ৯ হাজার ৬৫টি। সেঞ্চুরি ১৮টি, ফিফটি ৪৬টি। একই বছরের মার্চে অভিষেক হয় লিস্ট ‘এ’ তে। ২৮.২৩ গড়ে এখন পর্যন্ত রান করেছেন ৩ হাজার ৩০৪টি। সেঞ্চুরি নেই, হাফসেঞ্চুরি ২০টি। আর ৩৫টি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে রান করেছেন ৩৭৬টি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ছাড়লেও সাদা বলের ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। প্রায় ৩৮ বয়সী এই ক্রিকেটার পরবর্তী জীবনে থাকতে চান ক্রিকেটের সঙ্গেই, ‘আমি ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকবো। কোচিং করাবো। এটা ছাড়া আপাতত কোনো ইচ্ছা নেই আমার।’
ঢাকা/আমিনুল