‘যেটা হয়েছে আমার কপালে ছিল, আমি শতভাগ ঠিক ছিলাম না’
লাল বলের ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দিয়েছেন ইমরুল কায়েস। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ সাদা পোশাকে লাল-সবুজের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন মাত্র ৩৯ ম্যাচ। অথচ তাকে ভাবা হয়েছিল লম্বা রেসের ঘোড়া হিসেবে। জাতীয় দলে অধিকাংশ সময় কেটেছে আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়ে।
এ নিয়ে ইমরুল প্রায়শই বোর্ড কর্তা থেকে শুরু করে নির্বাচকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তবে শেষে এসে এসবে নজর দিতে চান না এই বাঁহাতি ব্যাটার। যা কিছু হয়েছে নিজের কপালে লেখা ছিল বলে মনে করেন সুরমা পাড় থেকে উঠে আসা এই ক্রিকেটার।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) হোম অব ক্রিকেট মিরপুর শের-ই-বাংলায় শেষবারের মতো সাদা পোশাকে খেলতে নামেন। এ দিন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে তাকে দেওয়া হয় বিদায়ী সংবর্ধনা। উপহার হিসেবে হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট। বিদায়ী সংবর্ধনা শেষে মুখোমুখি হন সংবাদমাধ্যমের।
অবধারিতভাবে সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে তার আক্ষেপ-আফসোসের বিষয়গুলো। কিন্তু বিষোদগারের পথে না হেঁটে ইমরুল বলেন, ‘এই মুহূর্তে এসে এই বিষয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না। যেটা হয়েছে, আমি মনে করি সেটা আমার কপালে ছিল। আমি বলব না, আমি শতভাগ ঠিক ছিলাম। আমি হয়তো আরও ভালো খেলতে পারতাম। ভালো খেললে হয়তো ধারাবাহিক সুযোগ পেতাম।’
‘তবে হ্যাঁ সুযোগগুলো যদি আরেকটু ফ্লেক্সিবল থাকত, তাহলে হয়তো আমার ক্যারিয়ারটা ভিন্ন হতো। আমিও জানতাম না, খেলার পর আমি পরের ম্যাচে থাকব কিনা বা পরের সিরিজে থাকব কিনা। এজন্য একটু কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আর হতাশা নেই।’
২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নামেন ইমরুল। সবশেষ ২০১৯ সালে, ভারতের বিপক্ষে গোলাপি টেস্টে খেলেছিলেন। ৩৯ টেস্টের ক্যারিয়ারে ২৪.২৮ গড়ে তার রান ১৭৯৭। সেঞ্চুরি ৩টি, হাফসেঞ্চুরি ৪টি। সর্বোচ্চ ১৫০।
টেস্ট শুরুর ২ বছর আগে যাত্রা হয় প্রথম শ্রেণিতে। ১৩৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩৩.৭৪ গড়ে রান করেছেন ৭ হাজার ৯৩০টি। সেঞ্চুরি ২০টি, হাফসেঞ্চুরি ২৭টি। যখন প্রথম শ্রেণির ম্যাচ শুরু করেন তখনও ভাবতে পারেননি এতদূর আসতে পারবেন।
‘২০০৬ সালে যখন আমার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়, আমি চিন্তা করিনি যে বাংলাদেশ দলের হয়ে এতগুলো টেস্ট খেলতে পারব। আর সব শেষে এখন যেভাবে বিদায় নিলাম, আমি খুব খুশি যে বাংলাদেশের হয়ে ৩৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পেরেছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। কারণ, এক টেস্ট হোক পঞ্চাশ টেস্ট বা একশ টেস্ট খেলেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করাই বড়।’
লাল বলের ক্রিকেট ছাড়লেও সাদা বলে এখনো চালিয়ে যেতে চান খেলা। তার প্রমাণ পাওয়া গেলো আজও। সংবাদ সম্মেলন শেষে ছুটলেন সাদা বলের অনুশীলনে। পরিকল্পনা নিয়ে ইমরুল বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি বিপিএল ও ডিপিএল খেলব। এনসিএলেও টি-টোয়েন্টি খেলব। অবশ্যই আমি চেষ্টা করব... ওয়ানডে যেহেতু এখনও আছে, আমি অবসর নেইনি। সামনে প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলা আছে। আমি চেষ্টা করব ক্রিকেট উপভোগ করতে। বিপিএলেও চেষ্টা করব ভালো পারফর্ম করতে।’
ইমরুলের পরিবার থাকে অস্ট্রেলিয়ায়। ক্যারিয়ার শেষে ক্রিকেট নিয়ে থিতু হতে চান ওখানেই, ‘আমি বেশিরভাগ সময়ই অস্ট্রেলিয়ায় থাকি। সেখানেই আমার থাকতে হবে। কারণ, আমার পরিবার সেখানে থাকে। ওখানেও অস্ট্রেলিয়ার একটা দলের হয়ে প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলছি আমি। ওখানে একটা কোচিং একাডেমি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এরই মধ্যে কথাবার্তা চলছে, কাজ করছি। আশা করছি, আগামী বছরের দিকে এটা আমরা শুরু করব।’
ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল