সঠিক জায়গায় যোগ্যকেই নিতে চান রাজ্জাক
জাতীয় দলের নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক।
প্রতিশ্রুতিশীল কাউকে পেলে জাতীয় দলে নেওয়ার জন্য ‘অদৃশ্য চাপ’ নির্বাচকদের চলে আসতো। সেটা এমন যে, সুযোগ হলে জাতীয় দলে তিন ফরম্যাটেই অভিষেক করিয়ে দেওয়া হতো। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে বিশাল তফাৎ-পার্থক্য, সেটা ভাবনায় আনা হতো না।
তাতে যে বিপদের শঙ্কা ঘিরে ধরতো সেটাই হতো। অকালেই ঝরে পড়েছে অনেকে। জাতীয় দলে বাংলাদেশের অভিষেকের যে অনুপাত, টিকে থাকার অনুপাত তার চেয়ে যোজন-যোজন পিছিয়ে। ফলে যারা থিতু হয়ে যান তাদের ক্যারিয়ার লম্বা হয়। পারফরম্যান্সের ঘাটতি থাকলেও তাদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন না কেউ।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে আব্দুর রাজ্জাকের সম্পৃক্ততা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। খেলোয়াড় হিসেবে লম্বা সময় খেলেছেন। এখন জাতীয় দলের নির্বাচক। কোথায় কি হচ্ছে, কীভাবে কাজ হচ্ছে, কোথায় ঘাটতি আছে সবটাই তার জানা। যে দায়িত্ব বর্তমানে তিনি পালন করছেন সেটা ঠিকমতো করতে চাইছেন। এজন্য সঠিক জায়গায় যোগ্যকেই বেছে নিতে চান। হুট করে কাউকেই জাতীয় দলে নিয়ে ‘অথৈ সাগরে ফেলে’ দেওয়ার ইচ্ছা নেই তার।
বুধবার মিরপুরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রাজ্জাক সেই কথাই বললেন, ‘‘যদি কোনো ক্রিকেটার ১৫–২০ বছর ক্রিকেট খেলে চলে যায় তখন সঙ্গে সঙ্গে ঐ ক্রিকেটারের বদলি পাওয়া একটু মুশকিল। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি। তারপরও আমাদের দেশে যারা তরুণ ক্রিকেটার আছে। আমি খুব আশাবাদী তাদের নিয়ে।’’
‘‘জাতীয় লিগ আমাদের দ্বিতীয় বড় ক্রিকেট লিগ। এখানে প্রচুর ক্রিকেটার ভালো করছে। তবে এখান থেকেই যে আমরা জাতীয় দলে সরাসরি নিয়ে যাব ক্রিকেটারদের ব্যাপারটা এমন না। এখানে বিসিএল থাকবে। এ দলের সিরিজ সফর থাকবে। সবগুলোতে দেখে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে”- আরও যোগ করেন রাজ্জাক।
এই নির্বাচক আরও বলেন, “একটা টুর্নামেন্ট দেখে বলা মুশকিল। আমাদের এখন প্রচুর তরুণ ক্রিকেটার খেলছে। ওদের এই অল্প দেখে আমি মনে করি না যে একটা সিদ্ধান্ত আসা উচিত হবে। আমরা চেষ্টা করছি। যাতে আমাদের ব্রেক না থাকে। প্রত্যেকটা জোড়া যেন ঠিক মতো লাগে। বিশেষ করে জাতীয় দল যখন ফাকাঁ হয়ে যাচ্ছে তখন যাতে একজন দুইজন ক্রিকেটার যুক্ত হয়ে আস্তে আস্তে আগাতে পারে।’’
ঘরোয়া ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে দূরত্ব তা পুষিয়ে দিতে হলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে জোর দেওয়ার কথা বললেন রাজ্জাক, ‘‘জাতীয় দলের লেকিংস থাকলে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভাগে বড় একটা একটা সমস্যা। জাতীয় লিগকে আমাদের ক্রিকেটের আতুর ঘর বলা হয়। এনসিএল দিয়ে দলের ঘাটতি পূরণ করতে হয়। জাতীয় লিগকে ঐ মানদন্ডে নেওয়া যাচ্ছে না। জাতীয় লিগে একটা ক্রিকেটার ১০০ করে জাতীয় দলে ১০ রান করছে। এই গ্যাপটা কেন হচ্ছে?’’
দেশের ক্রিকেটের বাস্তবতা দেখিয়ে দিলেন রাজ্জাক, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে আমি মেনে নিচ্ছি, আবার কিছু ক্ষেত্রে আমি এটা মানব না। জাতীয় লিগে খেলা, কাউন্টি খেলা, অস্ট্রেলিয়া ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলা আর টেস্ট ম্যাচ আকাশ পাতাল পার্থক্য। কখনই এক হবে না। আমাদের দেশের টেস্টের মানদন্ডে নেওয়া তো সম্ভব না। কাছাকাছি হয়তো নেয়া যাবে।”
“বেশ কয়েকবছর আমাদের উইকেটের বেশ উন্নতি হয়েছে। যারা মাঠে যায় তারা হয়তো দেখছেন। বলও পরিবর্তন করা হয়েছে। কিভাবে ডিফিকাল্টি ফেস করতে হয় এটা দেখা যায়। একদিন দুইদিনে সব যুক্ত করা সহজ ব্যাপার হবে। একটু একটু করে হলেও যেন আগাচ্ছে ব্যাপারটা।’’- যোগ করেন তিনি।
ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়