ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি বাংলাদেশের ব্যাটিং, হার টানা পাঁচ টেস্টে
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে রান করেছে ৪৫০। দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের রান যোগ করলে হয় ৪০১। উইন্ডিজের প্রথম ইনিংসের রান বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ এখানেও হেরে যায় ৪৯ রানে। দুই ইনিংস মিলিয়ে হারের ব্যবধান চারগুণ তথা ২০১ রান!
হারের ধরনই বলে দিচ্ছে বাংলাদেশ একের পর এক টেস্ট হেরে যাচ্ছে ব্যাটিং ব্যর্থতায়। ভারত সফর থেকে শুরু, মাঝে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা আর বর্তমানে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। টানা পাঁচ টেস্টের কোনোটিতে লড়াইটুকু করতে পারেনি লাল সবুজের দল, যায়নি শেষ দিন শেষ সেশন পর্যন্তও।
এই সিরিজ খেলছে নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আর অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ছাড়া। দুজনে আগের চাআর টেস্টে থাকলেও ফল ছিল একই। নামের পরিবর্তন হলেও পারফরম্যান্স যেই সেই। ইনজুরির কারণ হোক কিংবা ফর্মহীনতায় বাদ পড়ার পর বিকল্প যে আসছে তার পারফরম্যান্সও সেই একই।
প্রথম ইনিংসে উইন্ডিজের এক ব্যাটার পেয়েছেন সেঞ্চুরি, দুজন আউট হয়েছেন নব্বইয়ের ঘরে। আর বাংলাদেশ? সর্বোচ্চ রান জাকের আলীর ৫৩, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অভিজ্ঞ মুমিনুল হকের ৫০! এর মধ্যে ১ উইকেট হাতে থাকার পরও ১৮১ রানে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ইনিংস ঘোষণা দেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
দ্বিতীয় ইনিংসে তাসকিন আহমেদের বোলিং তোপে উইন্ডিজ থামে মাত্র ১৫২ রানে! তাসকিন দেখা পান প্রথম ফাইফার। একাই নেন ৬ উইকেট। তাতে কী। বরাবরের মতো বোলারদের কীর্তি ডাকা পড়ছে ব্যাটারদের ব্যর্থতায়। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩৪!
তখন বাকি চার সেশন। এত রান তাড়া করে জয় সম্ভব না হলেও সম্ভব ছিল ড্র। সেই মানসিকতার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি কোনো ব্যাটারদের মধ্যে। দুই ওপেনার জাকির হাসান (০) ও মাহমুদুল হাসান জয় (৬) ফেরেন ৭ রানের মধ্যে। শান্তর বিকল্প হিসেনে দলে আসা শাহাদাত (৪) এই ইনিংসেও ব্যর্থ। অথচ উইন্ডিজের বিমান ধরার আগে জাতীয় ক্রিকেট লিগে পেয়েছিলেন সেঞ্চুরির দেখা।
পরপর দুই জীবন পাওয়া মুমিনুল হক ১১ রানের বেশি করতে পারেননি। চোখের পলকে বাংলাদেশের স্কোর ২৩ রানে ৪ উইকেট! এরপর লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে এগোচ্ছিলেন মিরাজ। ছক্কা মারতে লিটনের (২২) আউটে ৫৯ রানে হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট।
এবার জাকের আলীকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন মিরাজ। দুজনের জুটিতে সামাল দেন ধাক্কা। দলীয় রান পার করেন তিন অঙ্কের ঘর। এরপরেই মিরাজের ছন্দপতন। খোঁচা দিয়ে ফেরেন ৪০ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ। তাইজুল ইসলাম এসে অনুসরণ করেন বাকিদের। এক প্রান্ত আগলে রাখা জাকের আলী দিন শেষ করে আসেন হাসান মাহমুদকে নিয়ে।
পঞ্চম দিন এসে দ্বিতীয় ওভারে ফেরেন হাসান মাহমুদ। এরপর জাকের আলী (৩১) ফিরতেই বেজে যায় হারের ঘণ্টা। শরিফুল ইসলাম আঘাত পাওয়ায় ইনিংস শেষ করতে হয় ১ উইকেট হাতে রেখেই। বাংলাদেশ হেরে যায় ২০১ রানের বিশাল ব্যবধানে! কেমার রোচ-জায়দিন সিলস নেন সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট।
জ্যামাইকায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে নামবে ৩০ নভেম্বর। ব্যাটাররা কি ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরোতে পারবেন? ব্যর্থতায় বৃত্তে ঘুরাপাক খাওয়া কাউকে বাদ দিয়ে যে কাউকে আনবে সেই বিকল্পও নাই হাতে। শেষ পর্যন্ত কি হয় বলে দেবে সময়।
ঢাকা/রিয়াদ/এসবি