এলোমেলো ব্যাটিংয়ে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ
উইকেট পাবার পর নাহিদ রানার উদযাপন।
টেস্ট ক্রিকেটের আসল যেই ‘টেস্ট’, সেটাই দিচ্ছেন না ব্যাটসম্যানরা। ২২ গজে ধৈর্য্য ধরে রাখার যে মানসিকতা সেটাই দেখাচ্ছেন না। অতিরিক্ত শট খেলার প্রবণতা স্রেফ এলোমেলো করে দিচ্ছে ব্যাটিংয়ের চিত্র।
টপ অর্ডার থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার, মিডল অর্ডার থেকে লেট অর্ডার; সবখানে চিত্রটা এক। তাই তো স্কোরবোর্ডের চিত্রটাও পাল্টাচ্ছে না। অ্যান্টিগা টেস্টের পর কিংসটন টেস্টেও বাংলাদেশ হতশ্রী ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতায় আটকে থাকল।
১৬৪ রানে শেষ বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ উইকেটে ৭০ রান তুলে দিন শেষ করেছে। তারা পিছিয়ে ৯৪ রানে। মন্থর দিনে দুই দল মিলিয়ে ৭৮.৫ ওভারে রান উঠেছে কেবল ১৬৫।
২ উইকেটে ৬৯ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ দুই সেশনে ৪টি করে উইকেট হারায়। শুরুতে শাহাদাত হোসেন দিপু পেসার শামার জোসেফের গতিতে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন। এই পেসারের ভয়ংকর স্পেলে এরপর শিকার হন লিটন ও জাকের। দু্জনই আউট হন আলগা শটে। বিরতির ঠিক আগে শামারের আরেকটি ধাক্কায় বাংলাদেশ হারায় টপ স্কোরার সাদমানের উইকেট। ২০৭ মিনিট লড়াই করে ১৩৭ বলে ৬৪ রান করা সাদমান লেট সুইংয়ে পরাস্ত হয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন।
বিরতির পর শুরু হয় সিলসের তাণ্ডব। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দাঁড়াতে দেননি তিনি। ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ের মধ্যেও মিরাজ ও তাইজুল ১১৬ বলে ৪১ রানের জুটি গড়েন। তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের সামনে কিছুটা লড়াই করার তেজ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাগতিকদের মাটিতে বেশিক্ষণ লড়াই করার সুযোগ হয়নি।
এই জুটি ভাঙেন আলজারি জোসেফ। শর্ট বলে তাইজুল স্লিপে ক্যাচ দেন ৬৬ বলে ১৬ রান করে। মিরাজ সাজঘরে ফেরেন ৭৫ বলে ৩৬ রান করে। সিলসের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে নাহিদ রানা বোল্ড হলে অল্পতেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
শামার জোসেফ ৩৯ রানে নেন ৩ উইকেট। সিলসের বোলিং ফিগার ছিল চমকপ্রদ। ১৫.৫ ওভারে ৫ রানে ৪ উইকেট নেন ডানহাতি পেসার। ২ উইকেট পেয়েছেন কেমার রোচ।
ব্যাটিংয়ে না পারলেও বোলিংয়ে বাংলাদেশ মান রেখেছে। পেসার নাহিদ রানা গতির ঝড় তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের বড় পরীক্ষা নিয়েছেন। নিয়মিত ১৪৫ কিলোমিটারের বেশি বল করে সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। বারবার পরাস্ত করেছেন ব্যাটসম্যানদের। কতবার যে একটুর জন্য ব্যাটের কানা স্পর্শ করেনি। তাতে বেড়েছে হতাশা।
তবে ভালো বোলিংয়ের পুরস্কার পেয়েছেন ঠিকই। দুর্দান্ত এক আউটসুংয়ে ওপেনার মিকাইল লুইসকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করিয়েছেন। ৪৭ বলে ১২ রান করে ফেরেন এই ওপেনার। সব মিলিয়ে তার ৯ ওভারে ২৮ রান খরচ হয়েছে। কিন্তু গতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের নাচিয়ে ছেড়েছেন।
তাইজুলও ছিলেন দারুণ। ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৭ রান দিয়েছেন। উইকেটও পেতে পারতেন। তার বোলিংয়ে কাভারে ক্যাচ তুলেছিলেন ক্যারিবীয়ান অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট। হাতের মুঠোয় বল জমাতে পারেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক মিরাজ। ১১৫ বলে ৩৩ রানে আপরাজিত থেকে ব্র্যাথওয়েট দিন শেষ করেছেন। তার সঙ্গে আছেন কার্টি (১৯)। দুজনের জুটিতে এসেছে ৪৫ রান।
ভেজা মাঠ ও আলোকস্বল্পতায় টেস্টের অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে। তৃতীয় দিন কী অপেক্ষা করছে সেটাই দেখার।
ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়