ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২৭ ১৪৩১

১১ ম্যাচ পর বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১০, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১০:১১, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
১১ ম্যাচ পর বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

২০১৮ সালের পর দেশে, বাইরে কিংবা নিরপেক্ষ ভেন্যুতে কখনো বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে হারাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জয়-পরাজয়ের অনুপাত ছিল এরকম, ০:১১। বিব্রতকর এমন পরিসংখ্যানকে অবশেষে পরিবর্তন করতে সক্ষম হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ দুই দলের প্রথম ওয়ানডে চলাকালীন বলছিলেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে ম্যাচ জিততে হবে।’’ সেই যাত্রাটা সেন্ট কিটসে কি শুরু হলো? দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশকে ছয় বছর পর ওয়ানডে ক্রিকেটে হারাল তারা।

বাংলাদেশের দেওয়া ২৯৫ রানের লক্ষ্য ১৪ বল আগে, ৫ উইকেট হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। যে জয় নিশ্চিতভাবেই দিচ্ছে স্বস্তি। বাড়াচ্ছে আনন্দ।

আরো পড়ুন:

জয়ের নায়ক শেরফান রাদারফোর্ড। বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ৮০ বলে ১১৩ রানের নজরকাড়া ইনিংস খেলে গড়ে দেন ব্যবধান। ৭ চার ও ৮ ছক্কায় ১৪১.২৫ স্ট্রাইক রেটে সাজানো ইনিংসটি বাংলাদেশকে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।

এছাড়া, অধিনায়ক শেই হোপ ৮৮ বলে ৮৬ রান করে রাখেন দারুণ অবদান। ইনিংসের মধ্যভাগে দুই ব্যাটসম্যানের ৯৯ রানের জুটি বাংলাদেশের থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেয়।

এর আগে, তানজিদ হাসান তামিম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ফিফটি এবং জাকের আলীর দ্রুত ৪৮ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ লড়াকু পুঁজি পেয়েছিল। নতুন বলে বোলাররাও চালিয়েছিল চেষ্টা। শতরানের আগে তুলে নেয় ৩ উইকেট। কিন্তু, রাদারফোর্ড ও হোপ দাপট দেখিয়ে ম্যাচটা বের করে নেন অনায়াসে। দুজনের কেউই জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়তে পারেননি। জয়ের শেষ তুলির আঁচড় ছড়িয়েছেন জাস্টিন গ্রেভস ৪১ রান করে।

এর আগে, টস জেতা বাংলাদেশের ব্যাটিং পরিকল্পনা বোঝা গেছে ইনিংসের শুরু থেকে। তানজিদের লং অন দিয়ে বল সীমানার বাইরে পাঠানো, সৌম্যর দৃষ্টিনন্দন ড্রাইভ ও কাট শটে পাওয়া চার বুঝিয়ে দিচ্ছিল দল বড় রানের লক্ষ্য করেছিল। তানজিদ লম্বা সময় ক্রিজে থাকলেও সৌম্য পারেননি।

আলজারি জোসেফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১৯ রানে। ক্রিজে লিটন ২ রানে জীবন পান। তার ব্যাটে বল চুমু খেয়ে উইকেটের পেছনে গেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেউ উইকেটের আবেদন করেননি। লিটন স্বাগতিকদের জন্য হুমকি হতে পারেননি। পরের ওভারে শেফার্ড আক্রমণে এসে তাকে উইকেটের পেছনেই তালুবন্দি করান। দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে উদ্ধার করতে মেহেদী হাসান মিরাজ চারে ব্যাটিংয়ে এসেছিলেন। শেফার্ডের ওই ওভারে আম্পায়ার তাকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। সেখান থেকে শুরু হয় তানজিদ ও মিরাজের প্রতিরোধ। তখন রান তোলার গতি কিছুটা কমে আসে।

তানজিদ সাবলীল খেললেও মিরাজের শুরুটা ছিল জড়সড়। দুইবার তাকে জীবন দেন কার্টি। প্রথমবার সীমানায়। পরেরটা পয়েন্টে। জীবনগুলো অবশ্য কাজে লাগিয়েছেন ফিফটি তুলে। তবে, তার ইনিংসটি ছিল ধীরগতির। অন্যদিকে তানজিদ সাবলীল খেলে ৪৬ বলে তুলে নেন ফিফটি। এর আগে, দুইবার ফিফটি পেলেও সেঞ্চুরি ছোঁয়া হয়নি তার। এবারও বাঁহাতি ওপেনার একই ভুল করলেন। আটকে যান ৬০ রানে। ৬টি চার ও ৩ ছক্কার ইনিংসটি থেমে যায় আলজারি জোসেফের বলে পয়েন্টে চেজের হাতে ক্যাচ দিয়ে।

লম্বা সময় পর জাতীয় দলে ফেরা আফিফ হোসেন নিজের প্রত্যাবর্তন রাঙানোর চেষ্টায় ছিলেন। পেসার সিলসকে পুল ও পয়েন্ট করে যে দুটি চার মেরেছিলেন তা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল। এর আগে, স্পিনার মাটেওকে কাভারের ওপর দিয়ে হাঁকান চার। কিন্তু অল্পতেই তুষ্ট আফিফ। শেফার্ডকে তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন। ২৯ বলে  ৪ বাউন্ডারিতে ২৮ রানে আউট হন আফিফ।

আরেক প্রান্ত আগলে রাখা অধিনায়ক মিরাজ এগিয়ে যাচ্ছিলেন ধীরগতিতে। ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে ফিফটি পেতে তাকে খেলতে হয়েছে ৭১ বল। বল-ব্যাটের এই ব্যবধান কমানোর চেষ্টায় মিরাজ ঝুঁকি নিতে থাকেন। তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। রাদারফোর্ডের হাতে মিড অনে মিরাজ যখন ডাউন দ্য উইকেটে এসে ক্যাচ দেন তখন তার রান ১০১ বলে ৭৪। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজিয়ে মিরাজ আউট হন সিলসের বলে।

দলপতি যখন আউট হন তখন বাংলাদেশের রান ৩৭.৩ ওভারে ১৯৮। সেখান থেকে তিনশ রানের পুঁজি পেতে প্রয়োজন ছিল ঝড়ো ইনিংস। জাকের আলী ক্রিজে এসে দলের দাবি মেটান। নিজের শক্তির জায়গায় লেগ সাইডে ৩টি ছক্কা হাঁকান চোখের পলকে। পেয়েছেন ৩ চারও। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শুরুটা ধীরগতির হলেও পরবর্তীতে তা পুষিয়ে দেন। দুজন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৭৪ বলে ৯৬ রানের জুটি গড়েন। যা দলের দলের স্কোর বোর্ডের চিত্র পাল্টে দেয়।

ইনিংসের শেষ ওভারে জাকের যখন ফিফটি ছোঁয়ার ২ রান আগে আউট হন ততক্ষণে মাহমুদউল্লাহ পেয়ে যান ক্যারিয়ারের ৩০তম ফিফটি। জাকের ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪০ বলে ৪৮ রান করে ফেরেন। মাহমুদউল্লাহ ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৫০ রানে। তার ব্যাট থেকেও আসে ৩টি করে চার ও ছক্কা। শেষ ওভারে শেফার্ডকে হাঁকানো তৃতীয় ছক্কা দিয়ে মাহমুদউল্লাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে দুইশ ছক্কা হাঁকানোর কীর্তি গড়েন।

ব্যাটিংয়ে-বোলিংয়ে বাংলাদেশ আহামরি খারাপ করেনি। কিন্তু, দিনটা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের, রাদারফোর্ডের। তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। একদিন পরই দ্বিতীয় ওয়ানডে। বাংলাদেশ সিরিজ বাঁচাতে পারে কি না সেটা দেখার।

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়