তারার মেলায় ক্রিকেটানন্দ ও শহীদ জুয়েল-মুশতাককে স্মরণ
এক দলের জার্সি সবুজ রঙের, আরেক দলের লাল। দুইয়ে মিলে লাল-সবুজের সমারোহ মিরপুর শের-ই-বাংলায়। ২২ জনের দল দুটিকে মনে হচ্ছিল একগুচ্ছ বাংলাদেশ।
এক রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির জন্ম। বাংলাদেশ সেই বীরের জাতি যারা নয় মাস নিজের দেশকে বাঁচানোর জন্যে লড়েছে। এই নয় মাসে দেশ হারিয়েছি ত্রিশ লাখ শহীদদের। বিজয়ের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে গোটা জাতি।
স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন ক্রিকেটার শহীদ আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েল ও সংগঠক মুশতাক আহমেদ। তাদের স্মৃতির উদ্দেশে ১৯৭২ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বিজয় দিবস প্রদর্শনী ম্যাচ’। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচের মধ্য দিয়ে তাদের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সোমবার মহান বিজয় দিবসের সকালে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
যেখানে আকরাম, নান্নু, হাবিবুল, রফিক, পাইলটরা মাঠে নেমেছিলেন। ক্রিকেটানন্দের সঙ্গে বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদ জুয়েল ও মুস্তাককে স্মরণ করা হয়। মিলনমেলার এই ম্যাচে শহীদ জুয়েল একাদশ ৯ উইকেটে জয় লাভ করে। আগে ব্যাটিং করে শীহদ মুশতাক একাদশ ৫ উইকেটে ১২৮ রান করে। জবাবে ১৪.২ ওভারে শহীদ জুয়েল একাদশ ম্যাচ জিতে নেয়।
ব্যাটিংয়ে রান ও বোলিংয়ে উইকেট পেয়েছেন মোহাম্মদ রফিক। ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৬ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫৮ এবং বোলিংয়ে ১৩ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট। এছাড়া তালহা জুবায়ের ২৫ রানে ২ উইকেট নেন। ব্যাটিংয়ে আলো ছড়ান এহসানুল হক সেজান। ৩৯ বলে ৪৩ রান করেন তিনি। এছাড়া হান্নান সরকার ১৬ বলে ২৫ রান করেন।
শহীদ আব্দুল হালিম চৌধুরী, যিনি জুয়েল নামে পরিচিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শাহাদাৎ বরণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানি সেনারা তাকে ধরে নিয়ে যায়। কয়েকদিন পর তাকে হত্যা করে। অসীম সাহসিকতার জন্য তাকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়।
শহীদ মুশতাক ছিলেন শহীদ জুয়েলের বন্ধু। তিনিও অসাধারণ প্রতিভাধর ক্রিকেটার ও সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে নিহত বন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। স্বাধীনতার মাত্র একদিন আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তিনিও শাহাদাৎ বরণ করেন।
ক্রীড়াজগতের অন্যতম সেরা দুই কৃতি সন্তানের স্মরণে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের দুটি স্ট্যান্ডের নামকরণ করা হয়েছে।
শহীদ মুশতাক একাদশ:
আব্দুল হান্নান সরকার, ফাহিম মুনতাসির সুমিত, গাজী আশরাফ হোসেন, হাসানুজ্জামান ঝরু, হাসিবুল হোসেন শান্ত, খান আব্দুর রাজ্জাক, খন্দকার সাইদুল ইসলাম ইফি, মাহমুদুল হাসান রানা, আকরাম খান, মেহরাব হোসেন অপি, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, মোহাম্মদ আলী, মুশফিকুর রহমান বাবু, নাজমুল হোসেন ও সাজ্জাদ আহমেদ শিপন।
শহীদ জুয়েল একাদশ:
এএসএম রাকিবুল হাসান, এহসানুল হক সেজান, এনামুল হক মনি, ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স, হাবিবুল বাশার সুমন, হারুনুর রশিদ লিটন, জাভেদ ওমর বেলিম, খালেদ মাসুদ পাইলট, মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ রফিক, নাইমুর রশিদ রাহুল, সেলিম শাহেদ, সানোয়ার হোসেন, শাহরিয়ার নাফিস ও তাহলা জুবায়ের।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল