উইন্ডিজকে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার ধবলধোলাই
ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
বাংলাদেশ ১৮৯/৭ (২০ ওভার)
উইন্ডিজ: ১০৯/১০ (১৬.৪ ওভার)
ফল: বাংলাদেশ ৮০ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩-০ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ চার উইকেট হারায় মাত্র ১৪ রানে। ১৬.৪ ওভারে অলআউট হয় ১০৯ রানে। তাতে বাংলাদেশ পায় ৮০ রানের দাপুটে জয়। প্রথমবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশের কৃতিত্ব অর্জন করলো বাংলাদেশ। উইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন শেফার্ড। ২৩ রান করেন চার্লস। আর কেউ বিশের বেশি করতে পারেননি। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন রিশাদ। ২ উইকেট করে নেন তাসকিন আহমেদ-মেহেদী হাসান। এর আগে জাকের আলীর ৭২ রানের ঝড়ো ইনিংসে বাংলাদেশ ১৯০ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে। ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতে। আর ৩ ম্যাচে ৮ উইকেট ও ৩৭ রান নিয়ে সিরিজ সেরা হন মাহেদী।
শেষে এসে উইকেটের মিছিল
শুরুর মতো শেষে এসে ধস নামে উইন্ডিজ ব্যাটিংয়ে। ১৫তম ওভারে রিশাদ ফেরান মোতি-আলজারিকে। এরপর টানা দুই ওভারে শেফার্ড-ম্যাককয়কে ফিরিয়ে উইন্ডিজ ইনিংসের ইতি টানেন তানজীম-তাসকিন। শেফার্ড সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন।
ফিরলেন পাওয়েল
রিশাদের ফ্লাইট ডেলিভারিতে পরাস্ত পাওয়েল। বল পিচ করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। হালকা টার্ন ছিল। পাওয়েল ব্যাট চালিয়েছিলেন ঠিকাঠাক, কিন্তু বল টার্ন করায় খোঁচা লেগে যায় উইকেটের পেছনে। ৬০ রানে ৬ষ্ঠ উইকেট হারালো উইন্ডিজ। ক্রিজে শেফার্ডের সঙ্গী মোতি।
তাসকিন-মেহেদীর পর হাসান, ধুঁকছে উইন্ডিজ
পাওয়ার প্লের পর হাসান এসেই উইকেট নেন। শর্ট বল মিড উইকেট দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন চেজ। টাইমিংয়ে গড়বড়। বল উঠে যায় উপরে। দারুণ ক্যাচ নেনে মেহেদী। ১ বল পরেই রিশাদের থ্রোতে সাজঘরে ফেরেন চার্লস। রভম্যানের সিঙ্গেলে সাড়া দিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। ২৩ রান আসে চার্লসের ব্যাট থেকে। ৪৬ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় উইন্ডিজ। ক্রিজে রভম্যান পাওয়েলর সঙ্গী গুদাকেশ মোতি।
পাওয়ার প্লেতে দুর্দান্ত বাংলাদেশ
ছয়-চার মেরে ঝড়ের আভাস দিয়েছিলেন পুরান। তাকে অবশ্য বেশিদূর যেতে দেননি মাহেদী। কুইকার ডেলিভারিতে বোল্ড করেন এই বিস্ফোরক ব্যাটারকে। ১০ বলে ১৫ রান করেন পুরান। মেহেদীর এটি দ্বিতীয় উইকেট। তাসকিনের পর মেহেদীর ঘূর্ণিতে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ দারুণ করে। ৪৫ রান তুলতেই উইন্ডিজ হারায় ৩ উইকেট।
এবার মাহেদীর ঘূর্ণিজাদু
মাহেদীকে লং অনে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আফিফের হাতে ধরা পড়েন গ্রিভস। টানা দ্বিতীয় ওভারে উইকেট হারালো উইন্ডিজ। ৭ রানে নেই ২ উইকেট। ক্রিজে চার্লসের সঙ্গী পুরান।
শুরুতেই তাসকিনের আঘাত
ইনিংসের দ্বিতীয় বলে তাসকিনের উইকেট। বল আঘাত করে কিংয়ের পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিলেও লাভ হয়নি। শূন্যরানে ফিরতে হয় উইন্ডিজ ওপেনারকে। শূন্যরানে উইকেট হারায় উইন্ডিজ। ক্রিজে চার্লসের সঙ্গী গ্রিভস। তবে ওভার শেষের আগেই হানা দেয় বৃষ্টি। মিনিট কয়েক বন্ধ থাকার পর অবশ্য আবার খেলা শুরু হয়।
জাকের ঝড়ে ১৯০ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ল বাংলাদেশ
তিন ছক্কায় শেষ ওভারে জাকের নেন ২৫ রান! বাংলাদেশ পায় ১৮৯ রানের বড় সংগ্রহ। শেষ ৩৩ বলে বাংলাদেশ করে ৭৫ রান! সর্বোচ্চ ৭২ রান করে অপরাজিত থাকেন জাকের আলী। ৬টি ছক্কা ও ৩টি চারে ইনিংসটি সাজান তিনি। ফিফটির দেখা পান ৩৬ বলে। এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। অথচ তার ইনিংসটি ছিল নাটকীয়তায় ভরা। রানআউটে ফিরে গিয়েছিলেন ড্রেসিংরুমেও। এরপর ফিরে এসে যা করলেন তা ছিল দুর্দান্ত।
এর আগে দারুণ শুরুর পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। ইমন ২১ বলে ৩৯ রান করেন ওপেনিংয়ে। মাঝে মিরাজ ২৯ রান করেন। এরপর দুই রানআউটে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। তবে জাকেরের ব্যাটে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। তানজীমকে সঙ্গে নিয়ে গড়েন ২৭ বলে ফিফটির জুটি। ১৭ রান করেন তানজীম। এরপর রিশাদকে নিয়ে শেষ করে আসেন এই ব্যাটার। সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন শেফার্ড। খরুচে ছিলেন আলজারি জোসেফ। ৫৯ রান দেন তিনি!
জাকের ঝড়ে বাংলাদেশের দেড়শ পার
জাকের-তানজীমে বাংলাদেশ দেড়শ পার করে ১৭.৪ ওভারে। দুজনে ১৮তম ওভারে নেন ২০ রান। প্রথম বলে ছক্কায় বল স্টেডিয়াম পার করেন জাকের। জুটির ফিফটি হয় মাত্র ২৭ বলে। ১৯তম ওভারের শেষ বলে শেফার্ডকে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন তানজীম। তার ব্যাট থেকে আসে ১৭ রান। ক্রিজে জাকের সঙ্গী রিশাদ।
রানআউটে বিদায় শামীম-মেহেদীর
নাটকীয় রানআউট শামীম! ১৫.২ ওভারে ডাবলস নিতে গিয়ে জাকের-শামীম এক প্রান্তেই এসে দাঁড়ান! রানআউট ভেবে জাকের হাঁটতে থাকেন ড্রেসিংরুমের দিকে। পরে রিপ্লেতে দেখা যায় এক প্রান্তে দুজন এলেও আগে ব্যাট প্লেস করেন জাকের। ড্রেসিং রুম থেকে ফিরে আসেন জাকের, সাজঘরে ফেরেন শামীম। ২ রান করেন তিনি। ক্রিজে এসে ১ বল পর নতুন ব্যাটার মাহেদীও ফেরেন রানআউটে। এবার দ্রুত রান নিতে গিয়ে রানআউট হন মাহেদী। শূন্যরানে ফিরেন তিনি। পরপর ২ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ। ক্রিজে জাকেরের সঙ্গী তানজীম।
বাংলাদেশের শতরানের পর মিরাজের বিদায়
দারুণ শুরুর পর হঠাৎ ছন্দপতন। এরপর মিরাজ-জাকেরের পথচলা শুরু হয়। দুজনের ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। মিরাজ থিতু হয়েও লম্বা করতে পারেননি ইনিংস। চেজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিরাজ ধরা পড়েন বাউন্ডারি লাইনে। তার ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ২৯ রান। ইনিংসটি সাজানো ছিল ৩টি চারের মারে। ক্রিজে জাকেরের সঙ্গী শামীম। মিরাজের আউটের আগে বাংলাদেশ ১২.২ ওভারে শতরান পার করে।
ঝড়ের পর থামলেন ইমন
সৌম্যর ইনজুরি তাকে দলে সুযোগ করে দেয়। সেই সুযোগ যেন কাজে লাগালেন কড়ায়-গণ্ডায়। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এনে দিয়েছেন উড়ন্ত শুরু। অবশেষে ইমন থামলেন ২১ বলে ৩৯ রান করে। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো ছিল ইনিংসটি। ক্রিজে মিরাজের সঙ্গী তানজীদ। পাওয়ার প্লে’র শেষ বলে বিদায় নেন ইমন। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫৪ রান।
বাংলাদেশের দারুণ শুরুর পর আউট লিটন
রান খরায় ভুগছিলেন লিটন। শেষ দুই ম্যাচে ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘর। শেষ ম্যাচে এসে ভালো শুরু করেন। ভালো কিছুর আভাস দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সঙ্গী ইমনকে দিচ্ছিলেন ভালো সঙ্গ। তবে লিটন বেশিদূর যেতে পারেননি। থামতে হয়েছে ১৪ রানে। ১৩ বলে এই রান করেন তিনি। শেফার্ডকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন এক্সট্রা কাভারে। তার আউটে ভাঙে ২৮ বলে ৪৪ রানের জুটি। ক্রিজে ইমনের সঙ্গী তানজীদ হাসান।
একাদশে এক পরিবর্তন
ইনজুরিতে আঙুল ফেটে তিন সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে সৌম্য সরকার। তার পরিবর্তে জায়গা পেয়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন।
বাংলাদেশ একাদশ
লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক), শামীম হোসেন, তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলি, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান, শেখ মাহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: ব্র্যান্ডন কিং, জনসন চার্লস, নিকোলাস পুরান, জাস্টিন গ্রেভস, রোস্টন চেইস, রভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), রোমারিও শেফার্ড, গুদাকেশ মোতি, আলজারি জোসেফ, জেডেন সিলস ও ওবেড ম্যাককয়।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
কিংস্টাউনে তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২-০ ব্যবধানে জিতে ইতিমধ্যে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এখন সুযোগ ধবলধোলাই করার। টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন লিটন দাস।
ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল