ঢাকা     শুক্রবার   ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৬ ১৪৩১

স্বাধীনতায় মেলেছে বিশ্বাসের ডানা

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪  
স্বাধীনতায় মেলেছে বিশ্বাসের ডানা

সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে ঢাকা। দূরত্ব ১৪ হাজার ৮৮৮ কিলোমিলার। দুই ট্রানজিটে পাক্কা দুদিনের সফর। পরিশ্রান্ত মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে এলেন মুুখে চওড়া হাসি নিয়ে। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাসখানেকের সফর নিয়ে তার কথায় ঘুরে ফিরে এলো- স্বাধীনতা, বিশ্বাস, সুস্থ পরিবেশ, পেশাদারিত্ব ও উন্নতির তাড়না।

তার মতে, ছেলেদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার কারণে বিশ্বাসের ডানা মেলেছে। তাতে উজ্জীবিত হয়ে ২২ গজে ভালো পারফর্ম করেছেন ক্রিকেটাররা। সঙ্গে ড্রেসিংরুমের আবহ খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়াতে মন খুলে কথা বলতে পেরেছেন ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফরা। তাতে ফুটে উঠে পেশাদারিত্ব।

এসবের কৃতিত্ব ছেলেদের পাশাপাশি প্রধান কোচ ফিল সিমন্সকে দিয়েছেন সালাউদ্দিন।  সফরের শেষটায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করায় মুখে চওড়া হাসি তার। মাসখানেকের লম্বা সফর, এই দ্বীপ থেকে ওই দ্বীপে ছোটাছুটি, ভ্রমণক্লান্তি, অনুশীলন, ম্যাচ খেলা সব কষ্ট স্রেফ উধাও।

‘‘রহস্য বলতে কিছু নেই। ছেলেরা দায়িত্ব নিয়ে খেলার অভ্যাস করেছে। বিশেষ করে আমাদের টিম মিটিংয়ে ছেলেরা ইনভলব হচ্ছে। ওরা বেশি কথা বলছে। এই জিনিসটা আমাদের খুব দরকার ছিল। তাদের মানসিকতা যেন পরিবর্তন হয় সেদিকে আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল। এজন্য প্রধান কোচ অনেক স্বাধীনতা দিয়েছেন। তারা যেন চিন্তাভাবনার পরিবর্তন করতে পারে। এ কারণে মনে হচ্ছে তারা একটু একটু সফল হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো ভালো হতে পারে।’’  
শুধু খেলোয়াড় নয়, সিমন্স স্বাধীনতা দিয়েছেন কোচিং স্টাফদেরও। কথার বলার মঞ্চ, কাজ দেখানোর সুযোগ, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে সহকারী কোচ, ব্যাটিং কোচ, ট্রেনার, ফিজিওর থেকে সেরাটা বের করে এনেছেন। 
‘‘আমরা যত কথা বলি, প্রধান কোচ যেভাবে চাইবে সেভাবেই দল চলবে। সে আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে। যদি না দিত, আমরা কথা বলতে পারতাম না। এখানে সিমন্সের একটা বড় ভূমিকা সে আমাদেরকে ওই স্বাধীনতা দিয়েছে। ‍যারাই আমরা ছিলাম, ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ, ফিল্ডিং কোচ সবাই আমরা নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পেরেছি। আমরা কিভাবে এগিয়ে নিতে পারব সেদিকে আমাদের লক্ষ্য ছিল। প্রধান কোচের দর্শনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।’’ 

অপ্রাপ্তি-প্রাপ্তিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর বাংলাদেশের জন্য ছিল অম্লমধুর। সফরের শুরুতে টেস্ট সিরিজ ড্র, ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ এবং শেষে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার আনন্দ। পারফরম্যান্স, অর্জন, প্রাপ্তি যেমন-ই হোক, দূর্বলতাগুলোও কোচিং স্টাফদের আড়াল হয়নি। যে মঞ্চে বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন দাঁড়িয়ে সেখান থেকে ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলার কথা বললেন সালাউদ্দিন, ‘‘আমাদের তো দূর্বলতা আছে। আমাদের যেই দূর্বলতা আছে সেটা তো পাবলিকলি বলা ঠিক হবে না। আমরা সেগুলো কাটিয়ে উঠার চেষ্টায় আছি। আমরা জানি কোথায় আমাদের উন্নতি করতে হবে। আমরা টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলেও আমাদের দূর্বল জায়গাগুলো নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। এজন্য খুব সময় নেওয়া ঠিক হবে না। আমরা অপেক্ষা করতে করতে অনেক দিন পেরিয়ে যায়। এতো বছর কাটানোর পর আমাদের একটা স্টেজে আসা উচিৎ যেখানে আমরা ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলবো। এজন্য যেসব জায়গায় দেখা দরকার সেসব জায়গায় তাড়াতাড়ি নজর দিতে হবে।’’ 

‘‘টেস্ট সিরিজ থেকে আমরা মোটিভেশন পেয়েছিলাম। সেখান থেকে আমরা চিন্তা করছিলাম আমরা কি সারভাইব করবো নাকি আরো বেশি আক্রমণাত্মক হবো। স্বাভাবিক সময়ে যেটা হয়, আমরা সব সময় নিজেদেরকে নিয়ে চিন্তা করি। আমি কেমন খেলছি, কেমন পারফর্ম করছি, আজকে এভাবে আউট হলাম। এটা নিয়ে ছেলেরা বেশি চিন্তা করতো। কিন্তু যখনই আমাদের চিন্তাধারা প্রতিপক্ষকে নিয়ে শুরু হয়েছে তখনই তারা আগ্রাসী ক্রিকেট এবং খেলার প্রতি ধারনা পরিবর্তন করে দিয়েছে। ছোট্ট একটা কাজের কারণে, এটা টেস্ট থেকে হয়েছে। এরপর থেকে মনে হয়েছে পুরো সফরে ভালো খেলার সুযোগ আছে। মানসিক দিকটা খেয়াল করতে পারলে ছেলেরা ভালো খেলতে পারবে।’’

২০১০ সালের পর সালাউদ্দিন আবারো জাতীয় দলের কোচিং প্যানেলে যুক্ত হয়েছে সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরই ছিল তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। লম্বা সময় পর জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে ফেরা সালাউদ্দিনের চোখে তেমন পার্থক্য ধরা পড়েনি,  ‘‘পার্থক্য দেখি না। সবাইকে খেলোয়াড় হিসেবে দেখি। সবাইকে দেখে মনে হয়েছে অনুপ্রাণিত। ছেলেরা ভালো করতে চাচ্ছে। বুঝতে পারছে যে, এই স্টেজে বাংলাদেশের এই অবস্থানে থাকাটা শোভা পায় না। অনেক দিন হয়ে গেছে আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি। নিজেদের উন্নতি করে উপরে তুলতে হবে। এই উপলব্ধিটা ছেলেদের এসেছে। আমি জানি না, হয়তো আগেও ছিল। এটা আমার চোখে লেগেছে। তারা আসলে ভালো করতে চায়। সেটার জন্য আমরা যারা আছি, তাদেরকে যদি সঠিক গাইডলাইন দিতে পারি তাহলে ছেলেগুলোও ভালো খেলবে।’’

‘‘ছেলেদের মানসিকতা পরিবর্তন করার চেষ্টা ছিলাম। সেটা মনে হয় করতে পেরেছে। ভবিষ্যতে আরো করবে। কোনো কোচের পক্ষে বড় খেলোয়াড় তৈরি করা সম্ভব না। আমার কথা, ছেলেরা নিজেরা যেন চিন্তা করে নিজেদের খেলাটা কিভাবে উন্নতি করবে। ওরা গুছিয়ে উঠছে। তাদের চিন্তা ধারার পরিবর্তন আসছে। এগুলো আমরা আরো করতে পারলে সামনে আরো ভালো কিছু হবে।’’ 

ঢাকা/ইয়াসিন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়