রেড্ডির সেঞ্চুরি, আউট হয়ে পান্ত শুনলেন ‘স্টুপিড’!
জীবনের কঠিনতম তিন বল ননস্ট্রাইক প্রান্তে দেখলেন নীতিশ কুমার রেড্ডি। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বলে জসপ্রিম বুমরাহ স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। ভারত হারাল নবম উইকেট। ননস্ট্রাইক প্রান্তে নীতিশ তখন ৯৯ রানে নট আউট।
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দূরে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রায় লক্ষাধিক দর্শকের উৎকণ্ঠা। সেঞ্চুরিটা পাবেন তো নীতিশ? পরবর্তী ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ সিরাজের উপর ভরসা করা ছাড়া কোনো গতি ছিল না। সিরাজ মান রাখলেন। ওভারের শেষ তিন বল রুখে দিলেন। পরের ওভারে পেসার বোল্যান্ডকে স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মেরে নীতিশ পৌঁছে গেলেন তিন অঙ্কের ল্যান্ডমার্কে।
বক্সিং ডে টেস্টে শুরুর দিন থেকেই উত্তেজনায় ঠাসা। তবে নীতিশের সেঞ্চুরিতে স্টেডিয়ামের এক কোণে আবেগের কান্না ঝরল। বাবা মুত্যলা রেড্ডি ছেলের সেঞ্চুরির উদযাপন করলেন চোখে জল নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার করা ৪৭৪ রানের জবাবে তৃতীয় দিন শেষে ভারতের স্কোর ৯ উইকেটে ৩৫৮। এখনো তারা ১১৬ রানে পিছিয়ে। ব্যাকফুটে থাকা ভারতের স্বস্তি এবং প্রাপ্তি নীতিশের সেঞ্চুরি।
ইতিহাস সমৃদ্ধ মাঠে ডানহাতি ব্যাটসম্যান যেভাবে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন তা সত্যিই মুগ্ধ করেছে সবাইকে।
পরীক্ষিত ব্যাটসম্যানরা যখন প্যাভিলিয়নে তখন নীতিশ ছুটলেন রানের পেছনে। ওয়াসিংটন সুন্দর সঙ্গ ছিলেন ২৮৫ বল। স্কোরবোর্ডে দুজনের জুটি ১২৭ রানের। ফিফটির পর ওয়াসিংটন হাল ছেড়ে দিলেও নীতিশ মনোযোগ নষ্ট করলেন না। দুয়েকটি শট এদিক-সেদিক খেললেও বাকিটা পথ ছিল একেবারেই মসৃণ।
নীতিশ বীরত্বের দিনে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি ভারতের উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান রিশভ পান্ত। আউট হয়ে তাকে শুনতে হয়েছে, ‘স্টুপিড’! তা-ও একবার নয়। তিনবার। বলেছেন, কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার। যোগ করেন, ‘‘তার ভারতের ড্রেসিংরুমে যাওয়ার দরকার নেই।’’
কেন এমনটা হলো? তার আউট সম্পর্কে জানা যাক, রোহিত, রাহুল, কোহলিরা দ্রুত আউট হলে বিপদে পড়ে ভারত। রিশভ পান্ত ও রবীন্দ্রর জাদেজা তৃতীয় দিনের সকাল শুরু করেছিলেন ভালোভাবেই। দারুণ কয়েকটি শটে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের জবাব দিচ্ছিলেন। কিন্তু তার এক ভুল শটেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
পেসার বোলান্ডকে নিজের ট্রেডমার্ক শট খেলতে চেয়েছিলেন পান্ত। অফ স্টাম্পে সরে গিয়ে বল ফাইন লেগের ওপর দিয়ে উড়াতে চেয়েছিলেন। প্রথম বলটি মিস করেছিলেন। বল তার কাঁধের একটু নিচে আঘাত করেন। পান্ত ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান। পরের বলে আবার একই শট। এবার ব্যাটে লাগলেও টাইমিং মেলেনি। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় থার্ডম্যান অঞ্চলে। সেখানে লায়ন সহজ ক্যাচ নিয়ে পান্তকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান।
উইকেট ছুঁড়ে আসা পান্তের আউটে স্বম্ভিত ছিলেন ধারাভাষ্যে থাকা গাভাস্কার। আরেক ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে তখন কথা চালিয়ে নিচ্ছিলেন। গাভাস্কারের ক্ষোভ এতোটাই বেশি ছিল যে, প্রথম তিনটি শব্দই বলেছেন, ‘স্টুপিড, স্টুপিড, স্টুপিড।’
এরপর একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন, ‘‘দুজন ফিল্ডার থাকতেও এই শট খেলেছে। আগের শটটি মিস করেছে এবং দেখুন ক্যাচটি কোথায় ধরেছে, ডিপ থার্ডম্যান ক্যাচটি নিয়েছে। এটা হলো? নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসা!’
গাভাস্কার বলে যাচ্ছিলেন, ‘‘তাকে পরিস্থিতিটা ভালো করে বুঝতে হবে। এটা আমার স্বাভাবিক খেলা—এমন বলার সুযোগ নেই। আমি দুঃখিত, এটা তোমার স্বাভাবিক খেলা না।’’
‘‘তার (পন্ত) ড্রেসিংরুমে যাওয়া উচিত নয়। অন্য ড্রেসিংরুমে যাওয়া উচিত।’’ – বলে যান গাভাস্কার।
ঢাকা/ইয়াসিন