ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৬ ১৪৩১

পেন্ডুলামে ঝুলে লিটনের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ভাগ্য!

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ৯ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ০৮:২৯, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
পেন্ডুলামে ঝুলে লিটনের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ভাগ্য!

পারফরম্যান্স দিয়ে জায়গাটা থিতু করে নিয়েছিলেন। হয়েছিলেন আস্থার প্রতীক। ভরসার জায়গা। ধারাবাহিতা ছিল। ব্যাট হাতে ‍দ্যুতি ছড়িয়ে বোলারদের জন্য আতঙ্কের হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ‍মুদ্রার উল্টো পিঠ যখন দেখতে শুরু করলেন তখনই পথ হারালেন। পায়ের নিচের জমিন যখন শক্ত হয়ে উঠল তখনই কমতে শুরু করলো ব্যাটের ধার। শুরুতে অল্পসল্প। এখন তা ‘ভোঁতা’! অবস্থা এমন যে, দলে জায়গা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বলা হচ্ছে লিটন কুমার দাসের কথা।

‘অ্যান্ড লিটন দাস ইজ পেইন্টিং আ মোনালিসা হিয়ার!’ তার ব্যাটিং ইয়ান বিশপের চোখে এতোটাই মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল যে মোনালিসা চিত্রকর্মের সঙ্গে তুলনা করতে বাধ্য করেছিল। মাধুর্যতা, সৌন্দর্য, গভীরতা মিলিয়ে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অমর সৃষ্টি মোনালিসা। ২২ গজে লিটনের ব্যাটিং যেন বিশপকে মনে করিয়ে দিয়েছিল সেই সৃষ্টি। কিন্তু সেই ক্যানভাস এখন ফ্যাকাসে। রংধনুর সাত রং নয়, ২২ গজের ক্যানভাস একেবারেই বিবর্ণ। তাতে একটা প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে, লিটন কি আর অটোমেটিক চয়েজ? উত্তরটা, না!

দিয়েছেন জাতীয় নির্বাচক প্যানেলের এক সদস্য। বাকিটা শুনুন তার মুখ থেকে, ‘‘যদি গত বছরের পারফরম্যান্সই মূল্যায়ন করি তাহলে তাকে তো অটোমেটিক চয়েজ বলা যাবে না। আমরা তাকে একবার বিশ্রামও দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো বিশ্রামটা ওর ক্লান্তি দূর করবে। ওর ভাবনায় প্রভাব ফেলবে। কিন্তু ফিরে এসেও তেমন কিছু করতে পারল না।’’  

সামনে যখন আরেকটি আইসিসি ইভেন্ট তখন বাংলাদেশের উদ্বেগের জায়গা টপ অর্ডারের ব্যাটিং। আর ওখানে ব্যাটিংয়ের দৌড়ে লিটনই ছিলেন এগিয়ে। কিন্তু তার পারফরম্যান্সের যে চিত্র তাতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে জায়গা না হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আবার যদি সুযোগ পান তাহলে ভাগ্যবান বলতে হতে পারে তাকে। 

ওয়ানডে ক্রিকেটে শেষ সাত ইনিংসে লিটন দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তার রান ছিল, ২, ৪ ও শূন্য। শেষ দুই বছরে তিন ফরম্যাটের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করলে দেখা যায়, পারফরম্যান্স ক্রমশ নিম্মমুখী। ২০২৪ সালে ৩৫ ম্যাচে মাত্র ৭০৯ রান করেছিলেন লিটন। যেখানে তার ব্যাটিং গড় মাত্র ১৭.৭২। ১ সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি কেবল ২টি। ক্যারিয়ারের ২৩ ডাকের ৬টিই পেয়েছেন গত বছর। ২০২৩ সালে ৪০ ম্যাচে  রান ১১১৫। গড় ৩০.৯৭। কোনো সেঞ্চুরি না থাকলেও ৮ ফিফটি পেয়েছিলেন। অথচ ২০২২ সালে লিটন ৪২ ম্যাচে রান করেছিলেন ১৯২১। গড় ছিল ৪০.০২। ৩ সেঞ্চুরির সঙ্গে ছিল ১৩ ফিফটি।

চলমান বিপিএলেও তার ব্যাটে রান খরা। ঢাকা ক্যাপিটালসের এই ব্যাটসম্যান চার ইনিংসে রান করেছেন যথাক্রমে, ৩১, ০, ২ ও ৯। তার পারফরম্যান্সের অভাব বেশ ভালোভাবে অনুভব করছে ঢাকা। টুর্নামেন্টে এখনো কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি তারা।

লিটনকে নিয়ে ওই নির্বাচকের আক্ষেপ, ‘‘এতো প্রতিভাবান একজন ব্যাটসম্যান কিভাবে দিনের পর দিন রান না করে আছেন। আমাদের পুরো ব্যাকআপ ছিল। কোনো চাপ ছিল না। অথচ রান করতেই পারছিল না।’’

লিটনের রান না পাওয়ার থেকে সবচেয়ে উদ্বেগের জায়গা তার আউট হওয়ার ধরন। একই ভুল বারবার করছেন। চাপে থাকায় বাড়তি ঝুঁকি নিচ্ছে। তাতে ফলাফল হচ্ছে আরো বাজে। দৃষ্টিকটু শট নির্বাচন করে উইকেট বিলিয়ে আসছেন প্রতিপক্ষকে। ক্রিকেটে লিটনের ধারাবাহিক ছন্দহীনতায় চিন্তার ভাজ নির্বাচক প্যানেল। 

গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর লিটনের পারফরম্যান্স নিয়ে আলাদা করে বলতে গিয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন বলেছিলেন, ‘‘যদি তার সাময়িক বিরতি প্রয়োজন হয়, সেজন্যও কোচরা আছেন। আমরা তার আউট হওয়ার ধরন নিয়ে অবশ্যই চিন্তিত। ভবিষ্যতে যদি (ব্যাটিংয়ের) কিছু মেরামতের প্রয়োজন হয়, কোচরা আছেন।’’ 

ঢাকা/ইয়াসিন


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়