শেষ ওভারে ৩০ রান তুলে রংপুরের নায়ক সোহান
অবিশ্বাস্য এক টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সাক্ষী হলো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। রংপুর রাইডার্স ও ফরচুন বরিশালের ম্যাচ নিষ্পত্তি হলো শেষ বলে।
বরিশালের দেওয়া ১৯৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শেষ ৬ বলে ২৬ রানের প্রয়োজন ছিল রংপুরের। বরিশালের হয়ে বোলিংয়ে আসেন কাইল মায়ার্স। রংপুরের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান প্রথম ৫ বলে ২৪ রান তুলে নেন। শুরুটা করেন ছক্কায়। পরের দুই বলে দুই চার। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে আবার ছক্কা ও চার। শেষ বলে দরকার ছিল ২ রানের। মায়ার্সের করা শেষ বলে ছক্কা উড়িয়ে রংপুরকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন সোহান।
৩ উইকেটের জয়ে নিজেদের অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি ধরে রাখল রংপুর। ৬ ম্যাচে সবকটিতে জিতেছে তারা। ৭ বলে ৩২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে রংপুরের এই ম্যাচের নায়ক সোহান।
মায়ার্স বল হাতে বরিশালের ‘খলনায়কে’ রূপ নিলেও ব্যাটিংয়ে তিনিই ছিলেন দলের সেরা। ২৯ বলে ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বরিশালের রান ৫ উইকেটে ১৯৭ এ নিয়ে যান। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে রংপুরের ইনিংসে উঠা-নামা ছিল বেশ কয়েকবার। এক সময়ে মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বরিশালই জিতে নেবে। কিন্তু শেষ দিকে সোহান যা করে দেখালেন তা স্রেফ অবিশ্বাস্য। ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৭ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন।
লক্ষ্য তাড়ায় রংপুরের শুরুটা ভালো হয়নি। নিয়মিত রান পাওয়া অ্যালেক্স হেলস এদিন ১ রানের বেশি করতে পারেননি। তানভীরের বলে স্ট্যাম্পড হন। তাতে নাজমুল হোসেন শান্তর নামের পাশে লিখা হয় প্রথম স্বীকৃত ডিসমিসাল। তিনে নামা সাইফের ব্যাটও হাসেনি। ১৯ বলে ২২ রান করে আউট হন। দলে ফেরা তৌফিক ২৮ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩৮ রান করে রাখেন অবদান।
সেখান থেকে দলের হাল ধরেন খুশদীল ও ইফতেখার। দুজন সাবলীল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন দলের রান। বাজে বল শাসন করে ভালো বলগুলো দেখেশুনে খেলেছেন। ৫৩ বলে যোগ করেন ৯১ রান। দুই পাকিস্তানি ক্রিকেটার ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন। মনে হচ্ছিল দলকে জিতিয়েই তারা মাঠ ছাড়বেন।
শেষ ১৮ বলে সমীকরণ দাঁড়ায় ৪২ রানের। তামিমের তখন দুশ্চিন্তা বাড়ছিল। কিন্তু আফ্রিদি ১৮তম ওভারে বরিশালকে ম্যাচে ফেরান দারুণভাবে। ইফতেখারের (৪৮) উইকেট তুলে নেওয়ার পাশাপাশি রান দেন মাত্র ৩ রান। তাতে জয়ের পাল্লা ভারী হয়ে যায় বরিশালের। কিন্তু খুশদিল থাকায় রংপুরের কিছুটা আশা টিকে ছিল। পরের ওভারে পেসার জাহানদাদকে প্রথম দুই বলে দুই ছক্কা উড়ান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ২৪ বলে ৪৮ রান করা এই ব্যাটসম্যান হ্যাটট্রিক ছক্কার চেষ্টায় তৃতীয় বলটিও উড়িয়েছিলেন। কিন্তু সীমানায় মাহমুদউল্লাহর হাতে ধরা পড়ে যান।
ম্যাচ তখন অনেকটাই বরিশালের দিকে। কিন্তু সোহানের শেষ কারিশমা বাকি ছিল। ভাগ্যও তাকে সহায়তা করেছে। ১৮তম ওভারে রান আউট হতে হতে বেঁচে যান। শান্ত বল রিসিভ করে স্ট্যাম্পের নাগাল পাননি। পরের ওভারে মাহেদী অবস্ট্রাকটিং ফিল্ডের শিকার হন। তবুও মনোবল নষ্ট হয়নি তার। শেষ ওভারে ৩০ রান তুলতে দলকে অবিশ্বাস্য জয়ের স্বাদ দেন।
এর আগে অদ্ভুত নো বলে জীবন পেয়ে ২২ গজে ঝড় তোলেন মায়ার্স। কামরুল ইসলাম রাব্বীর বৈধ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে মায়ার্স ক্যাচ দিয়েছিলেন। উইকেটের পেছনে নির্ভরযোগ্য নুরুল হাসান সোহান বল ঠিকঠাক গ্লাভসবন্দিও করেছিলেন। কিন্তু তার ‘ছোট’ ভুলে বড় ‘শাস্তি’ পায় রংপুর। বৃত্তের বাইরে ছয় ফিল্ডার থাকায় আম্পায়ার বলটিকে নো বল ঘোষণা করেন।
জীবন পেয়ে মায়ার্স রুদ্রমুর্তি ধারণ করেন। রংপুরের বোলারদের নাস্তানাবুদ করে ২৯ বলে করেন ৬১ রান। যেখানে ১ চারের সঙ্গে ছিল ৭ ছক্কা। স্ট্রাইক রেট ছিল ২১০.৩৪।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বরিশালের শুরুটা ছিল দারুণ। ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮১ রান তুলে নেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজন থিতু হওয়ার পর আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তোলেন। তাতে স্কোরবোর্ডও সমৃদ্ধ হয়।
কিন্তু ১১তম ওভারে পেসার রাব্বী বোলিংয়ে এসে এই দুই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরের পথ দেখান। রানে ফেরা শান্ত ৩০ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৪১ রান করে কাভারে খুশদিলের হাতে ক্যাচ দেন। ওই ওভারের শেষ বলে তামিম ৩৪ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪০ রান করে মিড অফে হেলসের তালুবন্দি হন। এই ইনিংস খেলার পথে তামিম বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ৮ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়ে যান।
পরের গল্পটা শুধু মায়ার্সের। একাই লণ্ডভণ্ড করে দেন রংপুরের আক্রমণ। তাওহীদ হৃদয় ১৮ বলে ২৩ এবং ফাহিম আশরাফ ৬ বলে ২০ রান করে রাখেন অবদান। মায়ার্স যখন রাব্বীর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তখন তার রান ছিল কেবল ২১। চার ছক্কা মেরেছিলেন ১টি করে। জীবন পাওয়ার পর সেটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে তুলে নেন ঝড়ো ফিফটি। তাতেই বড় পুঁজি পায় শিরোপাধারীরা।
রংপুরের হয়ে বল হাতে রাব্বী ৪৭ রানে নেন ২ উইকেট। নাহিদ রানা ৪৭ রান দিলেও উইকেট পাননি। ১টি করে উইকেট নেন আকিফ জাভেদ ও সাইফ উদ্দিন।
বরিশালের সঙ্গে দুইবারের দেখায় দুইবারই ম্যাচ জিতল রংপুর। বরিশাল ম্যাচে আজ সব চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দিনটা ছিল সোহানের। তার ব্যাটে জয়ের পতাকা আজ আরেকবার উড়াল রংপুর।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল