রেকর্ড রানে জেতার ম্যাচে ঢাকার প্রাপ্তি লিটন-তানজিদের সেঞ্চুরি
ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
অবশেষে ঢাকা জিতল। টানা ছয় হারের পর জয়ের স্বাদ পেল বিপিএলের নবাগত দল ঢাকা ক্যাপিটালস। দুর্বার রাজশাহীকে রেকর্ড ১৪৯ রানে হারিয়ে দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়েছে ঢাকা।
জয়ের সমীকরণই স্পষ্ট এই ম্যাচটা ঢাকা ক্যাপিটালস কত কিছু পেয়েছে। জয় তো আনন্দের। জয় ম্যাচ পর জয় পাওয়া রীতিমত মহানন্দ। সেটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। দুজন সেঞ্চুরিতে রাঙিয়েছেন এই ম্যাচ। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এর আগে কোনো ম্যাচে ওপেনারদ্বয় জোড়া সেঞ্চুরি পাননি। বিপিএলে সেই রেকর্ড লিখা হয়ে গেল।
লিটনের ১২৫ ও তানজিদের ১০৮ রানে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ঢাকা ক্যাপিটালস মাত্র ১ উইকেটে ২৫৪ রান করে। যা বিপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় রান। আগের সর্বোচ্চ ২৩৯ ছিল যৌথভাবে দুটি দলের, রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের।
রানের পাহাড় তাড়া করতে নেমে নির্বিষ বোলিংয়ের পর বিবর্ণ ব্যাটিং করেছে রাজশাহী। মাত্র ১০৫ রানে গুটিয়ে যায় তাদের রান। ১৪৯ রানে হার…বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে চিটাগং কিংস ১১৯ রানে জিতেছিল সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে।
বিশাল এই জয়ের সঙ্গে ঢাকা ক্যাপিটালস মধুর প্রতিশোধও নিল। মিরপুরে দুই দলের প্রথম মুখোমুখিতে রাজশাহী হারিয়েছিল ঢাকাকে। সিলেটে এসে মধুর প্রতিশোধ নিল শাকিব খানের মালিকানায় থাকা দলটি।
ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে এসে লিটন বললেন, ‘‘টুডে ইজ মাই ডে।’’ সত্যিই লিটন যেভাবে, যে মহিমায় ব্যাটিং করেছেন তাতে বোঝা গেছে, দিনটা আসলেও তারই ছিল। ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক ছন্দ, এক তাল লয়ে ব্যাটিং করে গেছেন। ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি রাঙিয়েছেন দোর্দন্ড প্রতাপে।
উদ্বোধনী জুটিতে লিটন ও তানজিদ ২৪১ রান করেন। যা বিপিএলের ইতিহাসে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রান। এর আগে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও ক্রিস গেইল ২০১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন। লিটন ও তানজিদ ২৪১ রান তুলে নিজেদের নিয়ে গেলেন চূড়ায়।
চার-ছক্কা পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন তারা। তানজিদ ৬৪ বলে ৬ চার ও ৮ ছক্কায় ১০৮ রানের ইনিংসটি সাজান। লিটন ৫৫ বলে ১০ চার ও ৯ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ১২৫ রানের ইনিংসটি খেলেন।
সব মিলিয়ে ঢাকার ইনিংসে ছক্কা হয়েছে ১৮টি, চার ১৬টি। লিটন ১২৫ রানের ইনিংস খেলার পথে ৯৪ রানই পেয়েছেন বাউন্ডারিতে। তামিম ২০১৯ সালে ১৪১ রানের ইনিংস খেলার পথে ১০৬ রান তুলেছিলেন বাউন্ডারিতে।
আজকে দিনভর লিটন ছিলেন আলোচনায়। তাকে ওয়ানডে দল থেকে বাদ দিয়েছেন নির্বাচকরা। আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তাকে বাদ দিয়েই দিয়েছেন ১৫ সদস্যের স্কোয়াড। সেই ‘কষ্ট ভুলে’ লিটন সেঞ্চুরিতে রাতটা রাঙালেন। এর আগে টি-টোয়েন্টিতে তার নামের পাশে ছিল ২৯ ফিফটি। সর্বোচ্চ ছিল ৮৫ রান। আজ সব হিসেব পাল্টে দিয়ে ১২৫ রান লিটন উপহার দিয়েছেন নিজেকে।
তানজিদ এর আগে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের জার্সিতে সেঞ্চুরি পেয়েছেন। আজ পেলেন ঢাকার জার্সিতে। বড় কিছু করার তীব্র ক্ষুধা তারও ছিল। ধারাবাহিক রান পাচ্ছিলেন। কিন্তু ইনিংস বড় হচ্ছিল না। লিটনের পর তিন অঙ্কের দেখা পেয়ে তানজিদও নিজের ক্ষুধা মিটিয়েছেন।
২২ গজে তাদের ব্যাটিংয়ে স্রেফ লন্ডভন্ড হয়েছেন বোলাররা। শফিউল ৪ ওভারে দিয়েছেন ৬২ রান। বাকিদেরও ওভারপ্রতি রান গেছে আটের উপরে।
ব্যাটিংয়ের পর ঢাকা জ্বলে উঠে বোলিংয়েও। ব্যাটসম্যানদের জ্বলে উঠার দিনে বোলাররাও বোঝালেন, দিনটা আমাদেরও। তাইতো মুকিদুল মুগ্ধ একাদশে ফিরে আগুনে বোলিং উপহার দেন। মোস্তাফিজ ছিলেন ছন্দে। মোসাদ্দেক রাঙিয়েছেন স্পিন ঘূর্ণিতে। সম্মিলিত বোলিং প্রচেষ্টায় রাজশাহীর ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে।
মোহাম্মদ হারিস ও এনামুল হক পেয়েছেন ডাক। সাব্বির হোসেন এলোমেলো শট খেলে ১১ রানে থেমে যান। ইয়াসির আলী করেন ১৭ রান। আকবর ও মেহরাব করেন যথাক্রমে ১ ও ৪। দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে টিকে ছিলেন কেবল রায়ান বার্ল। ৩২ বলে করেছিলেন ৪৭ রান। তার ওই ইনিংসের সুবাদেই রাজশাহীর রান একশ পেরিয়ে যায়। নয়তো ঢাকার জয়ের ব্যবধানটা আরো বড় হতো।
বল হাতে ঢাকার হয়ে রাহী, মুকিদুল, মোসাদ্দেক ও ফারমানউল্লাহ ২টি করে উইকেট নেন। ১ উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজ।
সিলেটে আজকের রাতটা শুধু ঢাকার ছিল না। ছিল লিটন, তানজিদেরও। যেভাবে তারা ২২ গজে বোলারদের কড়া শাসন করেছেন তা ক্রিকেটপ্রেমিদের মনে থাকবে লম্বা সময়।
ঢাকা/ইয়াসিন