রিয়ালকে কারি বানিয়ে দিলেন রাইস
নাভিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

সময়টা ৫ মে, ২০০৯। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমি ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের খেলা চলছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং আর্সেনালের মধ্যে। ম্যাচের ১১ মিনিটের সময় প্রায় মধ্যমাঠ থেকে ফ্রি কিকে গোল করলেন রেড ডেভিলদের উইঙ্গার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। গানার্সরা দেয়াল তৈরি করেছিল বটে। তবে পর্তুগিজ মহাতারকার বুলেট গতির ফ্রি কিকটার দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া, দেয়ালের আর করার কিছুই ছিল না।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল,২০২৫) দিবাগত রাতে, ১৬ বছর পর সেই এমিরেটস স্টেডিয়ামেই প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করলেন ডেকলান রাইস। এই ইংলিশ মিডফিল্ডার চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে, রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চোখ ধাঁধানো গোল করলেন ফ্রি কিক থেকে। তাও আবার দুবার! রাইস অবশ্য রোনালদোর মতো মধ্যমাঠ থেকে ফ্রি কিক নেননি। তবে দেয়াল আর পদার্থ বিজ্ঞানকে যেভাবে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন এই ২৬ বছর বয়সী মিডফিল্ডার, তাতে চোখ ছানাবড়া হতে বাধ্য।
রাইসের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে রিয়ালকে ৩-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে সেমিফাইনালে এক পা দিয়েই রেখেছে আর্সেনাল। যদিও এখনো দ্বিতীয় লেগ বাকি আছে এবং সেটা লস ব্ল্যাঙ্কসদের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেই। খালি চোখে মনে হতে পারে রিয়াল গোলরোক্ষক থিবো কোর্তোয়া ৩ গোল হজম করেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে তার কিছুই করার ছিল না। উল্টো এই বেলজিয়ান যদি গোলবারের নিচে না দাঁড়াতেন, তা হলে রিয়াল আরও গোটা কয়েক গোল হজম করত।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছিলেন, মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়/আড়ালে তার সূর্য হাসে। গতরাতে ঘরের মাঠ এমিরেটস স্টেডিয়ামে আর্সেনালও সেই কবিতার মতো প্রথমে নিজেদের ছন্দ খুঁজে বেড়াচ্ছিল। সময় যত গড়িয়েছে, তাদের খেলার ধার ততই বেড়েছে। বিরতির আগমুহূর্তে রাইসের হেড আর গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির শট আটকে দেন কোর্তোয়া।
ম্যাচের ৫৮তম মিনিটে রাইস প্রথম গোলটি করেন। ফ্রি কিক থেকে তার বাঁকানো শট রিয়ালের তৈরি করা দেয়ালের ডান দিক দিয়ে ঘুরে জালে জড়ায়। গোলরক্ষক ঝাঁপিয়েও নাগাল পাননি। মূলত কোর্তোয়া ও দেয়াল তৈরি করা ফুটবলাদের দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। আর্সেনাল ও ওয়েস্ট হাম ক্যারিয়ারের ৩৩৯ ম্যাচ মিলিয়ে এটিই রাইসের সরাসরি ফ্রি কিক থেকে প্রথম গোল। তবে দ্বিতীয়টির জন্য অপেক্ষা করতে হলো না, পেয়ে গেলেন ১২ মিনিটের মধ্যে।
রাইসের প্রথম গোলের পর ক্যামেরা বারবার তাক করছিল গ্যালারিতে বসে খেলা দেখা রিয়াল ও ব্রাজিলের কিংবদন্তি রবার্তো কার্লোসের দিকে। এই লেফট ব্যাক তার ক্যারিয়ারে এই ধরনের বাঁকানো ফ্রি কিকে চমৎকার কিছু গোল করেছিলেন। রাইস ৭০তম মিনিটে আবার একটি ফ্রি কিক নেনে এবং যথারীতি গোল। এই শটের আগে লস ব্ল্যাঙ্কসদের তৈরি করা দেয়ালে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুজন গানার্স ফুটবলারও। রাইস শট নেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তারা সরে যান। বারের ডান দিক দিয়ে উপরের কোণা ঘেষে বল জালে জড়িয়ে যায়। পাঁচ মিনিট পরে মিকেল মেরিনো তৃতীয় গোলটি যোগ করেন।
২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে পৌঁছানোর কাছাকাছি চলে গেল আর্সেনাল। ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে রিয়ালের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ফিরতি লেগে মুখোমুখি হবে দল দুটি। কথায় আছে- বার্নাব্যুতে ৯০ মিনিট অনেক লম্বা। কার্লো আনচেলত্তির দল কি চিরন্তন পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া সেই বাক্যটা আরেকবার প্রমাণ করতে পারবে? উত্তরটা সময়ের কাছে তোলা আছে।
ঢাকা/নাভিদ