ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শান্ত কেন ‘অশান্ত?’

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ২৩ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ১৭:১৯, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
শান্ত কেন ‘অশান্ত?’

শরীর তখনো জমে উঠেনি। আড়মোড়া তখনো ভাঙেনি। জড়তা কাটেনি। উইকেটে বল কেমন আচরণ করছে তা কোনোভাবেই বুঝে উঠার কথাও নয়। রৌদ্রজ্জ্বল দিনের শুরুতে বল ও চোখের যে সমন্বয় তাও ঠিকঠাক হয়নি। অথচ মাঠে নামার এক মিনিটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক শান্ত হয়ে উঠলেন অশান্ত! এমন এক শট খেললেন যা খেলে আউট হওয়াও কঠিন। তালগোল পাকানো এক শটে নিজের উইকেট উপহার দিয়ে এলেন জিম্বাবুয়েকে। যে সাফল্যে জিম্বাবুয়ের মুখে যেন থামছিলই না। তাদের শরীরী ভাষায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, ‘‘এভাবেও কিভাবে আউট হয়?’’

স্রেফ অপেশাদারিত্ব। মনোযোগের বিশাল ঘাটতি। অথচ আগের রাতে মুমিনুল হক জানিয়ে গিয়েছিলেন টিকে থাকতে হলে, ‘‘ক্যালকুলেটিভ ক্রিকেট খেলতে হবে।’’ কিন্তু ৬০ রানে দিন শুরু করা শান্তর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। তাইতো বাংলাদেশের জন্য হুমকি পেসার মুজারাবানির শর্ট বল পুল করতে গেলেন। ঠিক পুল শটটা খেললেনও না। বল ততক্ষণে ব্যাটের উপরিভাগে লেগে চলে যায় ফাইন লেগে। অনেকটা পথ দৌড়ে নাওউচি সহজ ক্যাচ নিয়ে শান্তকে দেখালেন ড্রেসিংরুমের পথ। জিততে বাংলাদেশে আসা জিম্বাবুয়ে দিনের দ্বিতীয় বলে এমন সাফল্য পাবেন, থিতু হওয়া ব্যাটসম্যানকে ফেরাবেন তা কল্পনাও করতে পারেননি। বাংলাদেশকে এই ম্যাচে টিকে থাকতে হলে শান্তর ব্যাটে তাকিয়ে থাকতে হতো। গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে মুমিনুলকে নিয়ে পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়েছিলেন। যেখানে নিজের প্রথম ২২ বলে ৫ চার হাঁকিয়েছিলেন। বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, দিনটা ছিল তার। কিন্তু রাত পার হতেই সব ওলটপালট।

আরো পড়ুন:

সকাল পৌনে ১০টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল খেলা। বৃষ্টি ও ভেজা আউটফিল্ডের কারণে ৭৫ মিনিট পিছিয়ে ১১টায় শুরু হয় খেলা। ১১টা ২ মিনিটে শান্তর নামের পাশে বসে যায় আউট। এমন উদ্ভট শট, দায়সারা ব্যাটিং, দলকে বিপদে ফেলার রেকর্ড শান্তর আগেও ছিল। এই মাঠেও আছে। ২০২৩ সালে সিলেটে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এর চেয়েও খারাপ শটে আউট হয়েছিলেন শান্ত।  কিউই পার্ট টাইম স্পিনার গ্লেন ফিলিপসের বল এগিয়ে এসে ওড়াতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন। অফস্পিনারের বল হাত থেকে ছুটে ফুলটস হয়ে যায়। শান্ত এগিয়ে আসায় তার কোমড় বরাবর বল আসে। শরীরের জোরে বল ওড়াতে চেয়ে শান্ত টাইমিং মেলাতে পারেননি। বল উঠে যায় মিড অফে। সেখানে উইলিয়ামসনের নিখুঁত হাত খুঁজে পায় বল। বোলার এমন সাফল্যে নিজে অবাক। ২২ গজে হতবাক হয়ে যান শান্ত। যে আউট নিয়ে প্রবল সমালোচনাও হয়েছিল। দুই বছর পর একই কাণ্ড ঘটালেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।

শান্তর সহজেই লড়াই ছেড়ে দেওয়া, মিরাজের দ্রুত ফিরে আসার সঙ্গে জাকের আলীর ব্যাটিং পরিকল্পনাও ছিল বাজে। তাতে বাংলাদেশ ২৫৫ রানে গুটিয়ে যায়। জিম্বাবুয়েকে লক্ষ্য দেয় ১৭৪। মিরাজ ১টি করে চার ও ছক্কায় ১১ রান করে আউট হন। জাকের অষ্টম উইকেটে হাসান মাহমুদকে নিয়ে ৯১ বল ক্রিজে কাটিয়ে দেন। কিন্তু হাসান মাহমুদ জুটি গড়ার সময় সর্বোচ্চ ৫৮ বল খেলেন। টেল এন্ডার ব্যাটসম্যানকে সঙ্গী করলেও স্ট্রাইক রোটেট করছিলেন। তাতে বাড়ছিল ঝুঁকি। শেষমেশ তা-ই হয়েছে। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বল উড়াতে গিয়ে হাসান আউট হন। পরে খালেদ স্লিপে ক্যাচ দেন একই বোলারকে। বাংলাদেশ শিবিরে শেষ আঘাতটি করেন মুজারাবানি। ৭২ রানে ৬ উইকেট নিয়ে উইকেটের ফিফটি স্পর্শ করেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ৯ উইকেট নিয়ে ঝলক দেখিয়েছেন এই পেসার। তার আক্রমণে উঠেছে প্রশ্ন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আর কবে দায়িত্বশীল হবেন?

সিলেট/ইয়াসিন/আমিনুল

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়