শেষটায় কী অপেক্ষা করছে?
ক্রীড়া প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম
পড়ন্ত বিকেলে সাগর পাড়ের স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচা লাল আভায় ছেয়ে যাচ্ছে। একটু একটু করে সূর্য হেলে পড়ছে পশ্চিমে। তাতে আশপাশের সৌন্দর্য আরো রঙিন করে তুলছে। সঙ্গে ঘুটঘুটে অন্ধকারও নেমে আসছে ধীর পায়ে।
সেই অন্ধকারটাকে যদি রূপক অর্থে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে বড্ড ভুল হবে কি? যে ধাঁচে দেশের ক্রিকেট যাচ্ছে তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট, ওই অন্ধকারটাই এখন প্রতিচ্ছবি। সাফল্য ধরা পড়ছে। কিন্তু ব্যর্থতা এমনভাবে জেঁকে বসছে যেখানে সাফল্য বিলাসিতার সমার্থক শব্দ।
মাঠের ক্রিকেটে ভালো করতে হলে তিন বিভাগেই সমানতালে পারফর্ম করতে হয়। বোলিং ভালো করলে, ব্যাটিং খারাপ করলে ম্যাচ আপনাআপনি ছুটে যায়। আবার বোলিং খারাপ করে ব্যাটিং ভালো করলেও লাভ হয় না। ফলাফল একই। মাঠের ক্রিকেটে ফল পেতে হলে শতভাগ নিবেদন দিয়েই খেলতে হয়।
যেটা থেকে এই মুহূর্তে যোজন-যোজন দূরে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। স্রেফ সমালোচনার জন্যই বলা না, ২২ গজে লড়াইয়ের কোনো তাড়নাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মাঠে নিবেদনের ঘাটতি প্রকোপ আকারে ফুটে উঠছে।
তবে ক্রিকেটার, জাতীয় দলের পারফরম্যান্স নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই মুহূর্তে খুব একটা উদ্বিগ্নও নয়। বিসিবির সব চোখ এখন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে ঘিরে। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই প্রতিযোগিতা ডিসেম্বরে মাঠে গড়ানোর সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিসিবি। এজন্য জাতীয় দলের পারফরম্যান্সের উঠা-নামা নিয়ে এখন তেমনটা মাথা ঘামাচ্ছে না।
সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগামীকালের ম্যাচের পরই ফরম্যাট বদলে যাচ্ছে। কিছুদিন পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্ট খেলবে। তাই পাওয়া, না পাওয়ার আলোচনাটা থেমে যাবে আপনা আপনিই।
সিরিজ হারের পর বাংলাদেশের একমাত্র লড়াই এখন হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর। গত বছর পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতেই বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারায়। এবার বাংলাদেশে সেই বদলা নিতেই এসেছে ড্যারেন স্যামির শিষ্যরা। প্রথম দুই ম্যাচে পেশাদারিত্বের পুরো নিদর্শন দেখিয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে অতিথিরা। শেষটাতেও তারা একই ধারা, একই ছন্দ ধরে রাখতে চাইবে বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশের জন্য কী অপেক্ষা করছে? এক সময়ে চট্টগ্রামকে বলা হতো বাংলাদেশের পয়মন্ত ভেন্যু। হারতে হারতে ক্লান্ত বাংলাদেশ একটা সময়ে চট্টগ্রামে এলে খুঁজে পেত জয়ের ঠিকানা। অনেকবারই এমন কিছু হয়েছে চট্টগ্রামের ২২ গজে। কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতায় সেই চট্টগ্রামেই এখন চরম মাত্রায় খাবি খাচ্ছে দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ হারের পর এখন হোয়াইটওয়াশের শঙ্কা বাংলাদেশের শিবিরে।
দুই দলই আজ বিশ্রামে কাটিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে ক্রিকেটাররা জিম, রানিং ও সুইমিং করে সময় কাটিয়েছেন। ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন ক্যারিবীয়ানরা। উল্টো চিত্র স্বাগতিক শিবিরে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এর আগে একবার হোয়াইটওয়াশ হওয়ার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। ২০২২ সালে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হেরে যায়। একটি ম্যাচে ফল আসেনি। তিন বছর পর একই পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলাদেশ।
দুই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ যে মানের ক্রিকেট খেলেছে তাতে ভরসা করার মতো লোক খুব একটা পাওয়া যাবে না। তবুও প্রিয় দল, প্রিয় ক্রিকেটারের খোঁজে ঠিকই স্টেডিয়ামে হাজির হবেন সমর্থকরা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় আগামীকালও স্টেডিয়ামে দর্শকের উপস্থিতি থাকবে বেশ। তাদেরকে একটি ভালো দিন কী উপহার দিতে পারবেন লিটনরা?
সেই প্রশ্নটাই এখন উড়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল