ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যেন এক পাথরের বাগান!

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৭, ৬ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেন এক পাথরের বাগান!

জীবনের ক্লান্তি দূর করতে হেমন্তের এই দিনে কোথায় যাবেন? আসুন প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে।

দেশে এতো চমৎকার জায়গা রেখে হঠাৎ রুস্তমপুর কেন? এই প্রশ্ন আপনার মনে জাগতেই পারে। যদি বলি এখানেই অবস্থিত বিছানাকান্দি, তাহলে আর কোনো প্রশ্ন সম্ভবত আপনি করবেন না। কেননা জায়গাটির নাম আপনি বহুবার শুনেছেন। শনে হয়তো আপনি এর সৌন্দর্যে মনে মনে মুগ্ধও হয়েছেন।

বিছানাকান্দি জাফলং-এর মতোই পাথর কোয়ারি এলাকা। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার এই পর্যটনকেন্দ্র দেশের অন্যতম একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা। সারাবছর বিছানাকান্দি ভ্রমণ করা গেলেও বর্ষাকালে পর্যটকের ভিড় বেশি হয়। এই হেমন্তেও প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসছেন প্রচুর পর্যটক।

এখানে সবুজ মেঘালয় দুই ভাগ করে সীমান্তের ওপাড় থেকে নেমে এসেছে স্বচ্ছ জলের ঝরনা। এই জল নিয়ে আসে মূল্যবান পাথর। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট যেন এক পাথরের বাগান। পাহাড়ি ঝরনার গতিপথে অসংখ্য ছোটবড় পাথর চোখে পড়বে। পাশাপাশি দেখতে পাবেন স্বচ্ছ জলে ছোট ছোট মাছের দুরন্তপনা। ঝরনাটি গিয়ে মিশেছে পিয়াইন নদীতে। উপরে তাকালেও অপার বিস্ময়! সুনীল আকাশের নিচে সবুজে ঢাকা বিশাল পাহাড় যে কারো হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যাবে। পাহাড়ের ঢালুতে ভারতীয় খাসিয়া পল্লীর বাসিন্দাদের বাড়ি-ঘর চোখে পড়বে। এখানে পর্যটকদের ছবি তুলে দিতে কাজ করছেন মেঘালয়-বিছানাকান্দি সমিতির প্রায় শতাধিক তরুণ সদস্য।

পিয়াইনের দুই তীরে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ পাথর কোয়ারি। সেখানে শত শত পাথর শ্রমিকের জীবনযুদ্ধও খুব কাছে থেকে দেখতে পাবেন। বর্ষায় নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্বচ্ছ পানিতে পিয়াইনের রূপ রীতিমতো অপরূপ হলেও হেমন্তেও কিন্তু বিছনাকান্দি মুগ্ধ করতে পারে আপনাকে।

যেভাবে যাবেন: রাজধানী থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানযোগে আপনি সিলেট যেতে পারবেন। সায়েদাবাদ-ফকিরাপুল থেকে দূরপাল্লার বাসে সিলেটের দক্ষিণ সুরমাস্থ কদমতলী যেতে খরচ পড়বে সাড়ে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। সেখান থেকে বন্দরবাজার যেতে রিকশায় খরচ হবে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। সিএনজি অটোরিকশায় ৭০ থেকে ১০০ টাকা। বন্দরবাজার থেকে সিএনজি অটোরিকশায় আম্বরখানা যেতে খরচ পড়বে জনপ্রতি ১০ টাকা। আম্বরখানা থেকে বিছানাকান্দি সিএনজি অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে গেলে খরচ পড়বে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। আর রিজার্ভ মিনিবাসে খরচ পড়বে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। তবে রিজার্ভ ছাড়াও যাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে আম্বরখানা থেকে সিএনজি অটোরিকশায় গোয়াইনঘাটের হাদারপাড় পর্যন্ত যেতে খরচ পড়বে জনপ্রতি ১২০ টাকা। সেখান থেকে বিছানাকান্দি পর্যটনকেন্দ্রে যেতে ১২০০ টাকায় নৌকা ভাড়া করতে হবে। তবে এই হেমন্তে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় যেতে সময় লাগবে। পুরোপুরি শুকনো মৌসুমে রিজার্ভ সিএনজি অটোরিকশা নিতে হবে। খরচ পড়বে ৩০০ টাকা। মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ১০০ টাকা।

থাকার জায়গা: সিলেট শহরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, দরগাহ গেইট এলাকায় প্রচুর আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে থাকার খরচ পড়বে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এছাড়া কয়েকটি অভিজাত হোটেলও আছে। জিন্দাবাজারে অভিজাত কয়েকটি খাবারের হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম পানসি, পাঁচ ভাই, পালকি। এসব হোটেলে ২০ থেকে ২৫ রকমের ভর্তা পাবেন। বিছানাকান্দিতেও জলপরীসহ একাধিক হোটেল রয়েছে।

সতর্কতা: হাদারপাড় থেকে বিছানাকান্দি পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা তেমন ভালো নয়। সতর্কতা অবলম্বন না করলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দিনের আলোতেই শহরে ফিরে আসা উত্তম। রাতে ডাকাত-ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার ঝুঁকি আছে। সঙ্গে শহর থেকে খাবার নিয়ে যেতে পারলে ভালো। বিছানাকান্দি দিনের বেলা অবস্থান করা ভালো। রাতের বেলা অবস্থান করা ঠিক নয়। নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষী না থাকায় বর্তমানে হিজড়াদের আনাগোনাও বেড়েছে। পর্যটকদের কাছ থেকে তারা চাঁদা আদায় করে।


ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়