ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১৩ ১৪৩১

যেভাবে খুন হলেন বাবুল আক্তারের স্ত্রী

রেজাউল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৬, ৫ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেভাবে খুন হলেন বাবুল আক্তারের স্ত্রী

লাশ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী টার্গেট করে দুর্বৃত্তরা পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করেছে বলে গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে।

 

দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই বাবুল আক্তারের পরিবারের সদস্যদের গতিবিধি এবং আশপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি নজরদারি করে। পরিকল্পনা মাফিক রোববার সকালে দুর্বৃত্তরা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক আলামত পর্যবেক্ষণ করেই গোয়েন্দারা এমন ধারণা করছেন।

 

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বাবুল আক্তার পরিবার নিয়ে তিন বছর ধরে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ওআর নিজাম রোড (মেট্রোপলিটন হাসপাতালের পেছনের বিল্ডিং) ইক্যুইটি সেঞ্চুরিয়ান ভবনে বসবাস করে আসছিলেন। এসপি পদে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা গিয়েছিলেন বাবুল আক্তার। তার অনুপস্থিতিতে বাসায় ছিলেন স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু, ছেলে মাহির ও মেয়ে তাবাসসুম। রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ছেলে মাহিরকে (৭) স্কুলবাসে তুলে দিতে বাসা থেকে বের হন মিতু। বাসা থেকে হেঁটে গাড়িতে ওঠার জন্য ছেলের হাত ধরে জিইসির মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। বাসা থেকে মা-ছেলে কয়েক শ গজ দূরে জিইসি ওয়েলফুড সেন্টারের কাছে পৌঁছাতেই তাদের সামনে মোটরসাইকেলে আসা তিন আরোহী তাদের গতিরোধ করে। প্রথমে তারা মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা দিয়ে মিতুকে রাস্তায় ফেলে দেয়। এরপর মিতুর হাত ধরে থাকা তার ছেলে মাহিরকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে ঠেলে দেয় এবং মিতুকে প্রথমে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পরে কানের কাছে পিস্তল দিয়ে খুব কাছে থেকে একটি গুলি করে মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা। প্রকাশ্যে মাত্র এক মিনিটের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। অনেক দোকানি ও পথচারী ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও তারা কেউ হত্যাকারীদের প্রতিরোধ বা বাধা দিতে এগিয়ে আসেনি।

 

চট্টগ্রাম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বশির আহমেদ রাইজিংবিডিকে জানান, সেভেন পয়েন্ট সিক্স টুর মতো খুব ছোট আকারের পিস্তল থেকে নিখুঁত নিশানায় গুলি করা হয়েছে মিতুকে। মুখের বাঁ পাশে কপালের নিচে এক গুলিতেই মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে গেছে খুনিরা। ঘটনাস্থল থেকে মোট চারটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ব্যবহৃত, তিনটি অব্যবহৃত।

 

 

বাবুল আক্তার যে ভবনে ভাড়া থাকতেন, সেই ভবনের দারোয়ান মো. সাত্তার বলেন, ‘ম্যাডামকে বাচ্চা নিয়ে সকালে বেরিয়ে যেতে দেখেছি। তখন ভবনের আশপাশে তেমন সন্দেহজনক কাউকে দেখিনি। বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখি উনার ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে গেটে চলে আসে। তাকে জিজ্ঞাসা করলে ছেলে বলে, তার মাকে মেরে ফেলেছে। এই কথা শুনেই আমরা কয়েকজন দৌড়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখি ম্যাডামের লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।’

 

ঘটনার পরপরই সিএমপির কমিশনার ইকবাল বাহার ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটিয়েছে সন্ত্রাসীরা। আমরা দ্রুত খুনিদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নিচ্ছি। খুনিরা যাতে চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে পালাতে না পারে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

 

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/৫ জুন ২০১৬/রেজাউল/রুহুল/এএন

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়