শুটিংয়ের নামে অশ্লীলতা: প্রতিকার মিলছে না
মোবাইলেই এখন দেখা যায় নাটক, সিনেমা, টেলিফিল্ম, ওয়েব সিরিজ। কোন নাটকের জনপ্রিয়তা কতো বিচার হয় ভিউ দেখে। ভিউয়ের উপর নির্ভর করে লাভ-ক্ষতি। ভিউ পেতে অনেকেই বেছে নিচ্ছে অসাধু উপায়। যেমন এক সময় সিনেমায় অধিক লাভের আশায় কাটপিস ব্যবহার করা হয়েছে। ইদানিং নেট দুনিয়ায় চোখ রাখলেই ভেসে আসে নাটক, সিনেমা, মিউজিক ভিডিও, শর্ট ফিল্মের নামে অশ্লীল দৃশ্য। অনেক সময় দেখার ইচ্ছে না থাকলেও হুট করেই চোখের সামনে চলে আসে এ ধরনের ভিডিও। ফলে বিব্রত হতে হয়। এ থেকে পরিত্রাণ মিলবে কীভাবে?
আপত্তিকর এসব নাটক বা টেলিফিল্মের নির্মাতা বা প্রযোজক খুঁজে পাওয়া কঠিন। বেশি ভিউয়ের আশায় কাজগুলো করেন কিছু অসাধু লোক। শুটিংয়ের নাম করে ঢাকার অদূরে বিভিন্ন শুটিং স্পটগুলোতে অশ্লীল ভিডিও তৈরি করা হয়। এর আড়ালে দেহ ব্যবসারও অভিযোগ রয়েছে। এবং এরা প্রায় সবাই চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত নন। ভিডিও নির্মাতা থেকে শিল্পী সবাই অপরিচিত মুখ। অভিনয় দক্ষতা থাকুক আর নাই থাকুক অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে তারা পারদর্শী। এদের অধিকাংশের বয়স কম। অনেকে এসব করে অনলাইনে তারকা বনে গিয়েছে। কামিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
যদিও শুটিংয়ের নামে অশ্লীলতা রোধে ইদানিং শুটিং হাউজগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। খবরে প্রকাশ বেশ ককেটি শুটিং প্লেস বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। কিন্তু তাতেও পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না অশ্লীল ভিডিও নির্মাণ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যৌনতা, বিভৎসতা, নোংরা সংলাপ, অশ্লীল পোশাক- ইত্যাদি ধারণ এবং অবাধ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সম্প্রচার নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু নাটক বা ওয়েব সিরিজের কোনো সেন্সর নেই। তারই সুযোগ নিচ্ছেন কেউ কেউ। সরকার যেখানে পর্নোগ্রাফি বন্ধে তৎপর, সেখানে ওয়েব সিরিজের নামে এই অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।
এ জাতি নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি বাংলা চলচ্চিত্র যখন অশ্লীলতার রাহুগ্রাসে নিমজ্জিত তখন এই শিল্পকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিল চলচ্চিত্রপ্রেমী এবং প্রশাসন। যদিও তত দিনে চলচ্চিত্রের যে ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। এরপর থেকেই হলবিমুখ হতে শুরু করে সাধারণ দর্শক। তাদের কাছে সিনেমা হল অশ্লীল আতঙ্কের নাম। এখন এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।
নেট দুনিয়ায় এসব অশ্লীলতা এখনই বন্ধ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অন্ধকারের নিমজ্জিত হবে। সম্প্রতি বেশ কয়েটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক এই অবক্ষয়ের পেছনে কি এসবের ভূমিকা নেই? অবশ্যই আছে। কারণ এখন ছেলে-বুড়ো সবার হাতে মোবাইল ফোন।
নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষায় এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য এখনই দরকার অনলাইন নীতিমালা।
ঢাকা/রাহাত সাইফুল