অনেক ‘ভুল’ ভাঙালেন কোহলি!
সাউদাম্পটন থেকে ইয়াসিন হাসান : ইংরেজিতে মিথ নামের একটা শব্দ আছে। যার আক্ষরিক অর্থ ‘শ্রুতি/কল্পকথা’। সোজা বাংলায় যাকে বলা হয় ভুল ধারণা।
বিরাট কোহলি অহংকারী! বিরাট কোহলি উদ্ধত! তার সম্পর্কে এরকম কথা কতো শুনেছি। কতো পড়েছি। বিশ্বাস তো যার যারটা, তার কাছে! খুব কাছ থেকে তাকে বহুবার দেখেছি মাঠের ক্রিকেটে। গণমাধ্যমকর্মীদের তো বরাবরই খেলেন ডাউন দ্য উইকেটে এসে। প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করেন।
যেমন, আপনি কি বিশ্বাস করেন আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারব? বিশ্বকাপের কোনো এক ম্যাচের আগে তাকে এমন প্রশ্ন করেছিল স্বদেশী এক সংবাদিক। ২২ গজের রাজা সেদিন উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আপনার কি বিশ্বাস? আমরা কি পারব?’ সাংবাদিক বলেছিলেন, ‘পারব।’ বিরাটের পাল্টা জবাব, ‘তাহলে আমরা কেন নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারব না!’
সাউদাম্পটন শহরটা সবুজে ঘেরা। গুগল ম্যাপ বলছে, সিটি সেন্টারের চারপাশে রয়েছে সবুজের আচ্ছাদন। মহাসড়কের আকাবাঁকা পথ পেরিয়ে যখন হ্যাম্পশায়ারের সবথেকে বড় শহর সাউদাম্পটনে ঢুকলাম, প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে গেলাম। নটিংহ্যাম ছিল নীরব নিস্তব্ধ। টনটন ছিল শুনশান। সাউদাম্পটনে প্রাণ আছে। রয়েছে ট্রাফিক। মানুষের আনাগোনাও বেশি। কিন্তু শহরের ভেতরের রাস্তা সবগুলোই সবুজে ঘেরা। গাড়ি থেকে নামলাম স্ট্রান্ড রোডে। চার রাস্তার একদিকে হাউন্ডেল পার্ক, আরেকপাশে হুগল্যান্ড পার্ক।
হুগল্যান্ড পার্ক ঘেঁষে যেই ফুটপাত তার ওপর হেঁটে আসছিলেন ৫ ফিট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার বলিউড কোনো তারকা! কালো রঙের টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট ও নীল হুডি। বারবার মুখ লুকাচ্ছিলেন। হুট করে চেনার উপায় নেই কে? সূর্যর আলো তার ওপর পড়তেই সুদর্শন চেহারাটা সামনে এলো। ক্রিকেটাঙ্গনের পরিচিত মুখ। আর কেউ নন বিরাট কোহলি! রাস্তা পেরিয়ে ঢুকে পড়লেন ইতালিয়ান রেস্টুরেস্ট ক্যাফে থ্রিভে।
ইতালিয়ান খাবার বরাবরই তার প্রিয়। সহধর্মীনি আনুশকা শর্মারও তাই। দুজন ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন তো ইতালিতে। ঘরের অনুষ্ঠানে ভারতীয় খাবারের সঙ্গে রেখেছিলেন ইতালির খাবারও। থ্রিভে গিয়ে লাঞ্চের অর্ডার দিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন কোহলি। আশপাশে পরিচিত কেউ নেই। গুনগুন করে গান গাচ্ছিলেন। নিজের মতো করে সময় কাটাচ্ছিলেন।
বাংলাদেশি দুজন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলেন। সাফ জানালেন, এপোয়েনমেন্ট নিয়ে আসলে এখনই কথা বলবেন। কিন্তু বিশ্বকাপের এতো ঝাক্কি ঝামেলায় ভারতীয় দলের ম্যানেজারকে খুঁজবে কে? তাহলে একটা ছবি তোলা যাবে তো? বিরাট রাজী হলেন। বললেন, ‘তোমরা তোমাদের খাওয়া শেষ করো। আমি আমারটা শেষ করে নিই।’ ধৈর্য্য নিয়ে অর্ডার করা বিগ থ্রিভ বোল চেটেপুটে খেলেন ভারতীয় অধিনায়ক। এরপর বের হলেন। শত কোটি মানুষের আবদার যেভাবে মেটান সেভাবে দাঁড়ালেন বাংলাদেশি কয়েক সাংবাদিকের মাঝে। ছবি তুললেন। এক সাংবাদিককে বলেন, ‘তোমার জুতোর লেস খোলা। ওটা বাঁধো তারপর ছবি তুলবে।’
এই ধৈর্য্যটুকু কোহলি দেখিয়েছেন তা কম কিসে! ওহ, বলে রাখা ভালো রেস্টুরেন্টের ভেতরে বাংলাদেশি সাংবাদিক বলার সাথে সাথে বলেছিলেন, ‘তোমাদের দল তো ভালো খেলছে।’ ছবি ও অটোগ্রাফের আবদার মিটিয়ে কোহলি হেঁটে গেলেন সিটি সেন্টারের দিকে। বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলতে এসে ইংল্যান্ডের রাস্তায় বিনা নিরাপত্তায় যেভাবে কোহলি ঘুরছেন, পছন্দের খাবার খাচ্ছেন, মন খুলে কথা বলছেন তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট, কোহলির ভেতরেও রয়েছে মানুষকে ভালোবাসার, শ্রদ্ধার অনন্য গুন।
অহংকারী হতেই পারেন ২২ গজে। কিন্তু বাইরের জীবনে অনেকটা সাদামাটা। উদ্ধত হতেই পারেন নিন্দুকের জন্য। তাতে ২২ গজের রাজার কি আসে যায়? মিনিট দশেকের দেখায় অনেক ভুল ভাঙলেন কোহলি।
রাইজিংবিডি/সাউদাম্পটন/২২ জুন ২০১৯/ইয়াসিন/আমিনুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন