ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

গ্রিনিজ থেকে রোডস, পাল্টেনি চিত্র

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০১, ১০ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্রিনিজ থেকে রোডস, পাল্টেনি চিত্র

ম্যানচেস্টার থেকে ইয়াসিন হাসান : বিশ্বকাপের পর কোচ পরিবর্তন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন কোনো ঘটনা নয়।

শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটে কেন, ক্রিকেট বিশ্বের একাধিক দল বিশ্বকাপের পর ছাঁটাই করেছে কোচ। কখনো তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুই পক্ষের সম্পর্ক। কখনো পারস্পরিক সমঝোতায়। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর ভারতের কোচ গ্রেগ চ্যাপেল তো ভারতে এসে একদিনের বেশি টিকতে পারেননি।

বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী কোচ স্টিভ রোডস দলের সঙ্গে ফিরেছিলেন দেশে। ফিরে নিজের বিশ্বকাপ রিপোর্ট জমা দিতে পারেননি। তার আগেই বিসিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হয় নিজের ভবিষ্যত নিয়ে। পারস্পরিক সমাঝোতায় সিদ্ধান্ত হয়, রোডস বিদায় নিচ্ছেন। চুক্তি অনুযায়ী তিন মাসের পূর্ণ বেতন নিয়ে রোডস বিদায় নিয়েছেন।

বাংলাদেশে এমন ঘটনা আছে ২০০৩ বিশ্বকাপের পরও। সেবার সবকটি ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ। হারের তিক্ত স্বাদ পেয়েছিল কানাডা ও কেনিয়ার বিপক্ষেও। কোচ মহসীন কামালকে বিসিবি ছাঁটাই করে দক্ষিণ আফ্রিকা থাকতেই। মহসীন কামালের নয় মাসের ট্রেনিংয়ে বাংলাদেশ জিততে পারেননি একটি ম্যাচও। ৭ টেস্ট, ১১ ওয়ানডে হেরেছে বাংলাদেশের সবথেকে ‘ফ্লপ’ কোচের অধীনে।

১৯৯৯ বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা তো আরো তিতে। সেই সময়ে কোচ ছিলেন গর্ডন গ্রিনিজ। তৎকালীন বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস এনে দিতে এবং ম্যাচ আয়োজন করতে। কিন্তু কোচ গর্ডন গ্রিনিজ তা চাচ্ছিলেন না। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ ওই সময়ে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার জন্য যোগ্য ছিল না। তার ওই কথায় বিসিবি তাকে ছাঁটাই করে ৯৯’র বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ চলাকালীন। ইনিংস বিরতিতে নিজের চাকরি হারানোর লেটার পেয়ে ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে যান গর্ডন গ্রিনিজ।

২০০৩ বিশ্বকাপের পর ডেভ হোয়াটমোরের অধীনে পাল্টায় বাংলাদেশের ক্রিকেট। বাংলাদেশ ক্রিকেট পায় সময়ের সেরা কোচকে। কিন্তু তার সাথেও ২০০৭ বিশ্বকাপের পর চুক্তি বাড়ায়নি বিসিবি। এতে বিসিবির দূরদর্শীতার অভাব ছিল যথেষ্ট। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড থেকে একাডেমির চাকরির অফার পেয়ে হোয়াটমোর বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি বাড়াননি। তার অধীনে বাংলাদেশ জিতেছিল প্রথম টেস্ট, প্রথম ওয়নাডে সিরিজ।  দুই মেয়াদে ৮৬ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতেছিল ৩৩ ম্যাচ।

হোয়াটমোরের পর বাংলাদেশে শুরু হয় জিমি সিডন্স অধ্যায়ের। এক ঝাঁক তরুণ, উদ্যমী ও সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার নিয়ে পথচলা শুরু সিডন্সের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জয়, ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় এসেছিল তারই অধীনে। ২০১১ বিশ্বকাপের পর শেষ হয় সিডন্স অধ্যায়। বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় মেয়াদ শেষ হওয়ার ২ মাস আগে তার সঙ্গে চুক্তি শেষ করে বিসিবি। 

২০১৫ বিশ্বকাপে নতুন করে পথচলা শুরু হয় বাংলাদেশের। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বিশ্বকাপের আগে যোগ দিয়ে বেশি কিছু পরিবর্তন করেননি। তার অধীনে সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। পরবর্তীতে পেয়েছে একাধিক সাফল্য।  জিতেছে নিজেদের শততম টেস্ট। ঘরের মাঠে সিরিজ জিতেছে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। বাংলাদেশ গিয়েছিল ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। কিন্তু তার বিদায়টাও সুখকর ছিল না। নিজ দেশ শ্রীলঙ্কা থেকে কোচের অফার পাওয়ায় বাংলাদেশের চাকরি ছাড়েন তিনি। তবে যাবার আগে সিনিয়রদের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক গড়ে তোলেন এ কোচ।

হাথুরুসিংহে দায়িত্ব ছাড়ার পর ছয় মাস কোনো প্রধান কোচ ছাড়াই চলেছে বাংলাদেশ। গত বছরের জুনে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান স্টিভ রোডসকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় বিসিবি। পরিসংখ্যানের বিচারে রোডসের সাফল্যের হার ৬০ শতাংশ। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ৩০ ওয়ানডের মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে ১৭টিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছে টেস্ট সিরিজও। জিতেছে প্রথমবারের মতো ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টও। পারফরম্যান্স মূল্যায়নে রোডস ভালো করেছেন। কিন্তু বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় বিদায় নিতে হলো তাকে।

কোচ হিসেবে রোডস রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাবেন দুটি কারণে। প্রথমত, ঘরোয়া ক্রিকেট মাঠে উপস্থিত থেকে অনুসরণ করা এবং দ্বিতীয়ত, বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব। কোন ক্রিকেটারের সঙ্গে কীভাবে চলতে হবে, কার কোথায় সমস্যা, সেটা কীভাবে সমাধান করা যায়, সেগুলো খুব ভালো পারেন রোডস। শিষ্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা ছিল তার অগ্রাধিকার তালিকায় প্রথম। সেই কাজটা খুব ভালোভাবেই পেরেছেন ইংলিশ কোচ। কড়া হেড মাস্টার হননি, সেটাতেই আনন্দ খুঁজে পান সবাই।

বিদেশি কোচদের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ থাকে সামান্য। অথচ রোডস ছুটির সময়ে পড়ে ছিলেন বাংলাদেশে। বিপিএল, ডিপিএল, বিসিএল ও এনসিএলের খেলা মাঠ ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অর্থাৎ পাইপলাইন কেমন, তা পরখ করতে বয়সভিত্তিক দলের খেলা দেখতে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে। শুধু জাতীয় দল নয়, বাংলাদেশ ‘এ’ দল, হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত থেকেছেন ৫৫ বছর বয়সি কোচ।

চলমান বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করে ইংলিশ কোচকে নিয়োগ দিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু বিশ্বকাপে ব্যর্থতার বড় অংশ জুড়েই আছেন রোডস।


রাইজিংবিডি/ম্যানচেস্টার/১০ জুলাই ২০১৯/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়