ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

লিজিং কোম্পানি নিয়ে বৈঠক সোমবার

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৭, ৪ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লিজিং কোম্পানি নিয়ে বৈঠক সোমবার

কেএমএ হাসনাত : অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা লিজিং কোম্পানিগুলোর সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে এসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

সোমবার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ১২টি অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা লিজিং কোম্পানি রেড জোনে আছে। বৈঠকে এসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এত শোচনীয় হওয়ার কারণ এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে করণীয় বিষয়ে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান আর্থিক সমস্যার কারণে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না বা দিতে পারছে না বৈঠকে তা খতিয়ে দেখা হবে।

সূত্র জানায়, ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশের অবস্থা ভালো নয়। এসবের মধ্যে যে ১২টি প্রতিষ্ঠান ‘রেড জোন’ বলে বিবেচিত তালিকায় চলে গেছে এখন তারা আমানতকারীদের অর্থও নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না। ইতোমধ্যে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ‘পিপলস লিজিং কোম্পানি’ অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই প্রতিষ্ঠানে একজন অবসায়কও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, উচ্চ সুদ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে যেসব লিজিং কোম্পানি আমানতকারীদের সুদসহ অর্থ ফেরত দিতে পারছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে যেসব অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত তাদের বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা দেবেন অর্থমন্ত্রী। এসব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অডিট বা নীরিক্ষা কার্যক্রম চালানোর ঘোষণাও আসতে পারে বৈঠকে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে বলা হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত কিছু লিজিং কোম্পানি গ্রাহকদের আমানতের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করা তো দূরের কথা মূল টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। এছাড়া, আমানতের টাকা ফেরত পেতে গ্রাহকরা  নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে তাদের কাছে  অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আবার গুরুতর। তাই আইন ভঙ্গকারী এই লিজিং কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, আইন অনুযায়ী লিজিং ফার্মগুলো গ্রাহকদের আমানতের টাকা মুনাফাসহ ফেরত দিতে বাধ্য।

সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ‘বিভিন্ন লিজিং কোম্পানিতে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত প্রদান না করা/ফেরত প্রদানে নানা ধরনের হয়রানির অভিযোগ’ শীর্ষক একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যবসা করার লক্ষ্যে লাইসেন্স পেয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন লিজিং কোম্পানি কর্তৃক গ্রাহকদের মেয়াদী আমানতের টাকা যথাসময়ে ফেরত না দেয়া বা ফেরত প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির অভিযোগ মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিকারের জন্য বার বার আবেদন করেছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতির মধ্যেও বিভিন্ন লিজিং কোম্পানি উচ্চ হারে সুদ প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ অথবা মোবাইল ফোনে এসএমএস দেয়ার মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ করছে। এতে লিজিং কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের প্রতিকার প্রদানের স্বার্থে এ ধরনের কার্যক্রম খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এছাড়া, গ্রাহকদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়া আমানতের অর্থ সুদসহ ফেরত দেয়ার বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক হয়ে পড়েছে। চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত লিজিং কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে। এমনকি তারা গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে উচ্চ সুদের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে আমানত সংগ্রহ করে, যা তারা করতে পারে না। এসব লিজিং ফার্মের বেশ কয়েকটির আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। তাই গ্রাহকদের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩৫টি লিজিং কোম্পানি প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করছে। এরমধ্যে ৪৫ শতাংশ শিল্প খাতে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং আবাসন খাতসহ অন্য খাতে বিনিয়োগ করে থাকে। লিজিং কোম্পানিগুলো কোনো চেক, ডিমান্ড ড্রাফট বা পে-অর্ডার  ইস্যু বা বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসা করতে পারে না।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ আগস্ট ২০১৯/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ