ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

চরম দারিদ্র্যতার সাথে লড়ছে দেশসেরা ক্ষুদে ফুটবলার সিহাব

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৮, ২৭ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চরম দারিদ্র্যতার সাথে লড়ছে দেশসেরা ক্ষুদে ফুটবলার সিহাব

শাহীন রহমান, পাবনা: মাত্র ১৪ বছর বয়সেই প্রাথমিক পর্যায়ে দেশসেরা ফুটবল খেলোয়ার নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছে ছেলেটি। সারাদেশের মধ্যে রানারআপ হয়েছে তার স্কুল। অথচ এই প্রতিভাবান ক্ষুদে ফুটবলার সিহাব উদ্দিনের এখন আর খোঁজ রাখেনা কেউ।

অনেকটা অযন্ত-অবহেলায় পড়ে আছেন প্রতিভাবান এই ক্ষুদে ফুটবলার। দারিদ্রতার কষাঘাতে ফিকে হয়ে গেছে তার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। আর সংসারের হাল ধরতে বন্ধ হয়ে গেছে তার লেখাপড়া। বর্তমানে ভ্যান চালিয়ে, দিনমজুরী করে চলছে তার দিন।  

তার শিক্ষক ও এলাকাবাসীর দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় যত্ন করে প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে একদিন সিহাব হয়ে উঠতে পারে দেশের সেরা ফুটবলার।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আলোকদিয়ার গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক কোরবান হোসেনের ছেলে সিহাব উদ্দিন (১৪)। তার মা শেবা খাতুন মারা যাওয়ার পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় সিহাব ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবল খেলায় দক্ষ হয়ে ওঠে। ছোট ভাই সিয়াম পড়ে শিশু শ্রেণীতে।

২০১৭ সালে তার নেতৃত্বে প্রাথমিক স্কুল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলে সারাদেশের মধ্যে রানারআপ হয় পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর টূর্নামেন্টের সেরা খেলোয়ার নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে সিহাব। শুধু তাই নয়, এর আগে তার অধিনায়কত্বে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ওই স্কুল।

অথচ প্রতিভাবান এই ক্ষুদে ফুটবলারের খোঁজ নেয়না কেউ। অনাদর আর অবহেলায় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন আজ তার ফিকে হয়ে গেছে সিহাবের। দারিদ্রতার চাকায় পিষ্ট হয়ে বেঁচে থাকাটাই তার কাছে দু:সহ হয়ে উঠেছে। দুই ভাই ও বাবা-মাকে নিয়ে অভাবের সংসারের হাল ধরতে কখনও ভ্যান চালিয়ে, কখনওবা দিনমজুরী করতে হয় তাকে। আলোকদিয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বন্ধ হয়ে গেছে তার লেখাপড়া। কিভাবে ফুটবলার হবে আর কিভাবেই বা বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই শিহাবের।

আলাপকালে সিহাব উদ্দিন জানান, দেশের সেরা খেলোয়ার নিবাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেয়া আমার জন্য গর্বের। কিন্তু তারপর থেকে আর কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। এখন আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় কখনও ভ্যান চালাই, আবার কখনও দিনমজুরী করি। লেখাপড়াও হচ্ছে না। এমন অবস্থায় কিভাবে আমার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে তা ভেবে পাচ্ছি না।  

সিহাব আরো বলেন, আমি ভাল ফুটবল খেলোয়ার হতে চাই। আমার গ্রাম, জেলা ও বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। যদি সরকার থেকে আমাকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে ফুটবল খেলে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবো।

সিহাবের ফুটবল খেলার প্রশিক্ষক ও বাফুফে’র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রেফারী রাজু আহমেদ জানান, ভাল ও দক্ষ ফুটবলার হওয়ার সব গুণই সিহাবের মধ্যে আছে। কিন্তু স্কুল ফুটবলে দেশসেরা খেলোয়ার হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার নিলেও আজ সে উপেক্ষিত। এর চেয়ে দু:খের-হতাশার কিছু হতে পারে না।

সিহাবের মতো কৃতি ফুটবল খেলোয়ারকে যথাযথ মুল্যায়ন না করায় হতাশা প্রকাশ করেন তার শিক্ষকরা। সিহাবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা ও আলোকদিয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমাম হোসেন বলেন, সিহাব মেধাবী একটা ছেলে, সেরা খেলোয়ার হয়েও আজ ভ্যান চালায়। এত অল্প বয়সে তাকে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে তার লেখাপড়া-খেলা দু’টোই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারলে দেশের ফুটবল অঙ্গনে সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।

শিহাবের দরিদ্র বাবা কোরবান আলী জানান, সিহাব ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলতে খুব ভালবাসে। আমারতো বাড়িটুকু ছাড়া কোনো কিছু নাই। গরীব মানু, ভ্যান চালিয়ে দিন এনে দিন খাই। সিহাবকে ফুটবল খেলোয়ার বানানোর মতো সামর্থ নাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি, সিহাবকে সহযোগিতা দিয়ে যত্ন করে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে দেশের জন্য সুমান বয়ে বয়ে আনবে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাবনা জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক মানিক বলেন, আমি আগামী অনুর্ধ-১৫ ফুটবলে খেলাতে সিহাবকে নিয়ে আসবো। যদি সে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারে তাহলে পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাইজিংবিডি/পাবনা/জুলাই/২৭, ২০১৯/শাহীন রহমান/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়