ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

অবাস্তব কল্পনা সায়েন্স ফিকশন নয়: অরুণ কুমার বিশ্বাস

অহ নওরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অবাস্তব কল্পনা সায়েন্স ফিকশন নয়: অরুণ কুমার বিশ্বাস

এই সময়ে সায়েন্স ফিকশন এবং গোয়েন্দা কাহিনী লিখিয়েদের মধ্যে অরুণ কুমার বিশ্বাস একটি প্রতিশ্রুতিশীল নাম। ছোটদের ভিন্নধর্মী উপন্যাসের পাশাপাশি বড়দের জন্যও সমানতালে লিখেছেন। বইমেলা এবং লেখালখি নিয়ে এই লেখক সম্প্রতি কথা বলেছেন রাইজিংবিডির সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অহ নওরোজ

প্রশ্ন: এবারের বইমেলায় আপনার কতটি বই প্রকাশিত হলো?
উত্তর: সব মিলিয়ে পনেরোটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

প্রশ্ন: এতগুলো বই এক বছরে লিখেছেন। সময় বের করেন কীভাবে?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর খুবই সহজ। আপনি যদি একজন মাতালকে জিজ্ঞেস করেন, লোকচক্ষুর অন্তরাল থেকে সে নিয়মিত কীভাবে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে? এই উত্তরে তিনি যা বলবেন, আমার উত্তরও তাই। অর্থাৎ ইচ্ছা যদি প্রবল থাকে, আপনার যদি কোনো ব্যাপারে ডেডিকেশন এবং আন্তরিকতা থাকে সে কাজটি করা সম্ভব। আমি বই পড়ি জ্যামের মধ্যে বসে। ওয়ার্ক করতে করতে মানুষ যেমন গান শোনে, তেমনি সুযোগ পেলেই আমি পড়ি এবং লিখি। তবে লেখালেখির জন্য আমি মূলত গভীর রাতকেই বেছে নিয়েছি। বাচ্চারা ঘুমিয়ে গেলে লেখা শুরু করি। এবং চেষ্টা করি বেশি না ঘুমানোর। এছাড়া শুক্র এবং শনিবার আমি ঘর থেকে বের হই না।

প্রশ্ন: আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করলাম, আপনার বইগুলো মেলাতেই প্রকাশ হয়। বইমেলাকে উদ্দেশ্য করে কি লেখালেখি করেন?
উত্তর: না, ঠিক তেমন নয়। আমি বাইরের দেশে গিয়ে দেখেছি তারা সারাবছরই বই প্রকাশ করে। তবে ভালো পাণ্ডুলিপি যদি না পায় তাহলে সারাবছর তারা বই প্রকাশ করে না। সুতরাং আমার কথা হলো মেলাকেন্দ্রিক লেখালেখি হওয়া উচিত নয়। সারাবছরই যেন বই প্রকাশ হয় সেই ব্যাপারটি গড়ে তোলা উচিত। আমার বই মেলায় বের হয় ঠিকই। কিন্তু আমি সারাবছরই লিখি। তবে মেলায় বই বের হলে আনন্দ লাগে।

প্রশ্ন: লেখালেখির প্রতি আগ্রহী হলেন কীভাবে?
উত্তর: আপনি যদি শখ কিংবা প্যাশন বলতে কিছু বোঝেন তাহলে আমার কাছে সেটি হলো লেখালেখি। আর না লিখলে এই সময়ে কী করতাম, এই প্রশ্ন আমি নিজেই নিজেকে করেছি। ছোটবেলা থেকে আমার আর কোনো আড্ডা বা নেশা গড়ে ওঠেনি, বইপড়া ছাড়া অন্য কোনো নেশা গড়ে ওঠেনি বলেই এই লেখালেখি।

প্রশ্ন: আপনি সায়েন্স ফিকশন লিখছেন, বর্তমান সময়ে অনেকেই লিখছেন। কিন্তু হাতে গোনা দু’একজন বাদে সায়েন্স ফিকশনে জনপ্রিয়তা কিংবা সাফল্য যা-ই বলেন সেটি পাচ্ছে না। এর কারণ কী?
উত্তর: এখন যারা সায়েন্স ফিকশন লিখছে, ঐ হাতে গোনা দুই একজন বাদে বাকিদের নিয়ে আমার ধারণা এরা সায়েন্স ভালো জানেন না। জীবনে সায়েন্স না পড়েই সায়েন্স ফিকশন লিখছেন এরকমও অনেককেই পাওয়া যাবে। আপনি ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখলে দেখবেন, সায়েন্স ফিকশন বলতে বোঝায় কল্পবিজ্ঞান। অর্থাৎ এমন একটি কাল্পনিক পরিস্থিতি আপনি সৃষ্টি করবেন, যেটি এখন সম্ভব না কিন্তু বৈজ্ঞানিক উত্তরণের মাধ্যমে সেটি সম্ভবপর হতে পারে। অবাস্তব কল্পনা সায়েন্স ফিকশন নয়। প্রস্তুতির অভাব এবং তাড়াহুড়ো করে শুধু সায়েন্স ফিকশন নয়, ভালো কোন বইই লেখা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন: অনেকে আবার নিজের পকেটের টাকা খরচ করে বই প্রকাশ করেন। এই ব্যাপারে প্রকাশকের কোনো সংকট দেখেন?
উত্তর: এই ব্যাপারে প্রকাশকের সংকট আছে এর সাথে আমি একমত। আমাদের দেশে নিয়মিত ভালো লেখক তৈরি না হওয়ার পেছনে প্রকাশকদের একটি দায় রয়ে গেছে। কয়েকজন প্রকাশক বাদে নতুন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক খুঁজে বের করার চেষ্টা অন্য প্রকাশকদের নেই। তারা মুখচেনা লেখকের বই প্রকাশ করে দায় শেষ করে। সাথে ব্যবসাও হলো। কিন্তু ব্যবসাটা যে আপনি বই নিয়ে করছেন এবং সেকারণে এর সাথে আরও বেশকিছু দায় আপনার আছে সেটি আপনি ভাবছেন না। সমস্যা আছে পাঠকদেরও, বই কিনতে গেলে দুই পৃষ্ঠা পড়েন এমন পাঠক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর।

প্রশ্ন: পাঠকরূপে আপনার যাত্রা শুরু কীভাবে? বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হলেন কীভাবে?
উত্তর: আমরা যখন স্কুলে পড়ি, তখন দেখা যেতো শিক্ষকরা বেশ মজা করে পড়াতে পারতেন না। সেই একটি অপূর্ণতা থেকেই যেতো। তবে স্কুলে লাইব্রেরি ছিল। আমরা সেখানে গিয়ে নানা বই দেখতাম, পড়তাম। ওইসব বই পড়তে গিয়ে মনে হলো ক্লাসের বই থেকে ঐ বইগুলো পড়তে অনেক মজা- এভাবেই বই পড়া শুরু। এরপর ঢাকায় এসে নটরডেম কলেজে ভর্তি হই। সেখানে লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখি বইয়ের বিশাল সম্রাজ্য। তো বই পড়ার প্রতি আমার নেশা এভাবেই।

প্রশ্ন: আপনার প্রথম বই সম্ভবত কবিতার। সে সময় কি আপনি ছাত্র ছিলেন?
উত্তর: সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ইংরেজি বিভাগের ছাত্র। আমার প্রথম কবিতার বই ছিলো ইংরেজি কবিতার একটি বই। নাম ছিলো ‘নেমেসিস’। এরপর ‘মাউথঅর্গান’ নামে একটি ছোটগল্পের বই বের হয়েছিলো। তবে এটা দেখে আমার শিক্ষক ড. ফখরুল আলম বললেন, তুমি লিখতে চাইলে বাংলা লিখতে হবে। নইলে ভালো করা কঠিন।

প্রশ্ন: কিন্তু তার কয়েক বছরের মধ্যে আপনি ফিকশনে চলে এলেন, এবং অধিকাংশ বই কিশোরদের। এর পেছনের কারণটি কী?
উত্তর: ঐ যে স্যার বললেন বাংলায় ফিরতে হবে। আমি বাংলায় ফিরলাম। যখন আমি লিখতে বসলাম, দেখলাম শৈশব নিয়ে লিখতে আমার ভালো লাগে। নিজেকে কিশোর ভাবতে ভালো লাগে। এই যে নিজেকে কিশোর ভাবতে ভালো লাগা এটাই কিশোরদের জন্য বই লেখার কারণ। তবে আমি বেশকিছু বড়দের বইও লিখেছি।

আসলে আমি পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দা কাহিনীই লিখবো বেশি। সেখানে একটি চরিত্র দাঁড় করাবো। অলোকেশ রায় তেমনই একটি আমার অঙ্কিত চরিত্র। আমার গোয়েন্দা কাহিনিগুলোর অধিকাংশের নায়ক হিসেবে অলোকেশ রায় থাকবে। নিজেকে পরবর্তীতে গোয়েন্দা ধারার লেখক হিসেবেই দেখতে চাই।

প্রশ্ন: এই চরিত্রটিকে আপনার ব্যক্তিগত জীবন থেকে প্রভাবিত বলে মনে হয়।
উত্তর: সেটি তো অবশ্যই। আমার ক্যারেক্টার তৈরি হয়েছে পেশাগত জীবন থেকে নির্যাস নিয়ে। আমি বিমান বন্দরে ডেপুটি কমিশনার অফ কাস্টমস হিসাবে কাজ করেছি। অনেক অপরাধীকে ধরেছি। অনেক অভিযান চালিয়েছি। অলোকেশ রায় চরিত্রটির উপরে সেই প্রভাবটা তো আছেই। আশা করি এই চরিত্রটি গোয়েন্দা কাহিনী যারা পছন্দ করেন তাদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠবে।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়