ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘অফ দ্য ফিল্ডে’ দেশের হয়ে লড়েছি: নাবিল

আব্দুল্লাহ এম রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘অফ দ্য ফিল্ডে’ দেশের হয়ে লড়েছি: নাবিল

বিশ্বকাপ মিশন শেষে খুলনায় নিজ বাসায় ছুটিতে বাবা ও মায়ের সাথে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটার প্রান্তিক নওরোজ নাবিল

সম্প্রতি বিশ্বকাপ জয় করে এসেছে বাংলাদেশের যুবারা। যে দলের অন্যতম সদস্য প্রান্তিক নওরোজ নাবিল। 

ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি নাবিলের। কিন্তু অফ দ্য ফিল্ডের সব থেকে বড় যোদ্ধা ছিলেন তরুণ তুর্কী। তাইতো বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ ও সম্মান তার কাছে বিশাল। 

দলের সর্বকনিষ্ঠ এ ক্রিকেটারের আরেকটি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ আছে। সেই সুযোগটি নিতে মুখিয়ে নাবিল। কিন্তু এখন বিশ্বকাপ জেতার স্মৃতিতেই থাকতে চান খুলনার এ ক্রিকেটার।  

সফল বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে নাবিল ফিরেছেন খুলনায়। সেখানে রাইজিংবিডি’র সঙ্গে চলল দীর্ঘ কথোপকথন,

রাইজিংবিডি : বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য আপনি? অনুভুতি কেমন?

নাবিল : অবশ্যই গর্বের। এর থেকে গর্বের বোধহয় আর কিছুই হতে পারে না। বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের একটা অংশ আমি। এই অর্জনটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার কাছে কোন শব্দ নাই যে, আমি কিভাবে বোঝাব। অবশ্যই এটা আমার জীবনের সবথেকে বড় অর্জন।

রাইজিংবিডি : বিশ্বকাপে কোন ম্যাচে খেলার সুযোগ হয়নি। কিন্তু আপনার টিমমেটরা বলেছেন,  মাঠের বাইরে থেকে প্রতিটি জয়ে আপনার অবদান আছে। এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে?

নাবিল : সবারই টিমে একটা রোল থাকে। আমারও রোল ছিল। আমারও ইচ্ছা ছিল যে সুযোগ পেলে সেরাটা দেওয়ার। কিন্তু আমরা একটা টিম ছিলাম। এই জন্যই আমাদের রেজাল্টটা এতোটা পজেটিভ হয়েছে। আমি যখন দেখেছি যে আমি একাদশে সুযোগ পাচ্ছি না, তখন বিশ্বকাপের মতো আসরে এগারো জনের বাইরেও দেশের জন্য অনেক দায়িত্ব ছিল। আমি চেষ্টা করেছি সবাইকে সর্বোচ্চ দিয়ে হেল্প করার। মাঠে যে ১১ জন আছে ওদের যদি আমার কারণে একটু হলেও হেল্প হয়, তাহলে তো দেশেরই হেল্প হবে। এই ফিলিংস থেকেই আমি যতটা সম্ভব ওদেরকে হেল্প করেছি।

রাইজিংবিডি : বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সদস্য হিসেবে নিজে গর্ববোধ করছেন? তবুও কোথাও কি একটা আক্ষেপ আছে যদি ম্যাচ খেলার সুযোগ হতো...

নাবিল : এটাকে অবশ্য আক্ষেপ বলব না। তবে যদি সেলফ সেটিসফেকশনের জায়গাটা বলেন, তাহলে হয়তো নিজের মধ্যে একটা ক্ষুধা ছিল আমি একটা গেম খেলব,  ভালো করব। কিন্তু আমি যদি এখন ওভারঅল চিন্তা করি তাহলে যে অর্জনটা আমাদের আসছে, সেটা আপনি কিসের সাথে তুলনা করবেন? তুলনা করার মতো কোন জায়গা নাই। খেললে হয়তো ভালো লাগতো। কিন্তু আমি জানি অফ দ্য ফিল্ড আমি কতখানি করেছি টিমের জন্য। তাই বিশ্বকাপ জয়ের পর আমার এখন আর কোন আক্ষেপ নেই।

রাইজিংবিডি : বিশ্বকাপ দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য আপনি। বয়সের হিসেবে আরও একটি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ হয়তো আপনি পেতে পারেন। এটা নিয়ে কোন ভাবনা আছে কি?

নাবিল : বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আমাকে যদি আরেকবার সুযোগ দেওয়া হয় একজন সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে আমি গ্রেটফুল থাকব এই সুযোগের জন্য। আমি দেখেছি আমাদের টিমের সিনিয়র ক্রিকেটাররা কত দায়িত্ব নিয়ে খেলেছে। আমি চেষ্টা করব ওনাদের ওই পথটা অনুসরন করার।

রাইজিংবিডি : আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরুর গল্পটা একটু শুনতে চাই।

নাবিল : ২০১১ সালে বাংলাদেশ-ভারতের একটি ম্যাচে বাংলাদেশ ভালো খেলেও পরাজিত হয়েছিল। ওই রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি। তখনই মনের মধ্যে একটা জেদ চেপেছিল, ক্রিকেট খেলোয়াড় হব। এলাকায় ক্রিকেট খেলতাম। তখন আমার মেজ ভাইকে বলেছি যে আমি ক্রিকেট খেলতে চাই। তিনি আমাকে সেলিম স্যারের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকেই আমার শুরু। আমি খুলনা জেলা ও বিভাগের বয়স ভিত্তিক দলে খেলেছি। পরে খুলনা দলে থাকা নিয়ে খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে একটা ঝামেলা তৈরি হয়। আমি সিদ্ধান্ত নিই খুলনাতে আমি আর খেলব না। পরবর্তীতে আমার সুযোগ হয় বিকেএসপিতে। আমি বিকেএসপিতে থেকেই পরবর্তীতে বাংলাদেশের বয়স ভিত্তিক সবগুলো দলেই খেলেছি।

রাইজিংবিডি : আপনার প্রথম ক্রিকেট শিক্ষক সেলিম স্যারের কাছে শেখার গল্পটা কেমন ?

নাবিল : পৃথিবীতে বাবার স্থান কেউ নিতে পারে না। কিন্তু বাবার পরেই আমার কাছে সেলিম স্যারের স্থান। আজ আমি খুলনাতে এসেছি শুধুমাত্র ওনার সাথে দেখা করার জন্য। এখনও দূর থেকে আমাকে ক্রিকেটের অনেক কিছুই শেখান তিনি। আমি যদি কোন ম্যাচে খারাপ করি, সেলিম স্যার আমাকে বোঝান সব ভুল স্যারেরই। আর যদি কোন ম্যাচে ভালো করি সব কৃতিত্বই আমাকে দেন। আমি স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি নামাজ পড়ি নিয়মিত। স্যার আমাকে সব সময় বলেন, এটা যেন না ছাড়ি।

রাইজিংবিডি : ভবিষ্যতে ক্রিকেটে নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চান?

নাবিল : আমি বর্তমানে থাকতেই পছন্দ করি। আমি আসলে বলেত চাই না আমি ১০ বছর পর কোথায় যেতে চাই। কারণ আধুনিক ক্রিকেট পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগামী ১০ বছরের প্ল্যানিং এখন করে রাখলে আপনাকে ঘোরের মধ্যে থাকতে হবে। আমার প্রতিদিনের প্ল্যানটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি আজ যতটুকু কাজ করেছি, কালকে তার থেকে বেশি হার্ড ওয়ার্ক করতে চাই।

রাইজিংবিডি : বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে আইসিসিকে দেয়া আপনার একটি সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়েছে। একাদশে না থেকেও নাবিলের অন্যরকম একটা পরিচয় এনে দিয়েছে। এটা ভাবতে কেমন লাগছে ?

নাবিল : আমি আসলে টিমমেটদের সাথে যেভাবে কথা বলি ওইদিনও সেভাবেই কথা বলেছি। আইসিসির ইন্টারভিউ এজন্য বিশেষ কিছু ভেবে কথা বলিনি। হ্যাঁ, এটা ভাইরাল হয়েছে। পপুলারিটি জিনিসটা ভালো।  কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে পপুলারিটি জিনিসটা খারাপ। আমার সামনে লম্বা একটা সময় আছে। এটা আমার দেশের মানুষকে অনেক খুশি করছে। হ্যাঁ, এটার জন্য আমি গর্ববোধ করি। কিন্তু ভাইরাল হওয়া নিয়ে আমি খুব বেশি ভাবতে চাই না। আমার মূল ফোকাসটা আমি ক্রিকেটেই রাখতে চাই।


খুলনা/রুবেল/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়