ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আবরারের লাশ ফেলে দিতে বলে মেহেদী হাসান রাসেল!

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আবরারের লাশ ফেলে দিতে বলে মেহেদী হাসান রাসেল!

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার হত্যার ঘটনায় লাশ ফেলে দেয়ার মত ঔদ্ধত্য দেখায় বুয়েট ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল।

নির্মমতার এ যেন ভয়াবহ চিত্রায়ণ। পুলিশের কাছে দেয়া জবানবিন্দতে এমনটাই জানায় বুয়েটের ১৫তম ব্যাচের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওয়াহিদুর রহমান রাফসান।

রাফসান জানায়, খালার বাসা বনশ্রী থেকে ৬ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে হলে প্রবেশ করি। এরপর পড়তে বসি। রাত পৌনে ১২টার দিকে আমার রুমমেট তাজোয়ার রুমে এসে বলে, ২০১১ রুমের সামনে অনেক স্যান্ডেল। আমি ভাবলাম হলে এমন ঘটনা প্রায়ই হয়।

এর আগেও সকাল, বিটু, নাহিয়ান, মুন্নাসহ আরো কয়েকজন মিলে এহতেশাম এবং ইকবালকে মারধর করে। আর তেমন চিন্তা না করে পড়তে বসি। এর মাঝে মোর্শেদ কয়েকবার আমার রুমে আসে। ২০১১ নং রুমে কী হচ্ছে মোর্শেদ আমাকে কিছু বলে না।

রাফসান বলে, আমি, তাজোয়ার, রেদওয়ান এবং আহনাফ রাত দেড়টার দিকে নিচে সিরাজ ভাইয়ের দোকানে পরোটা খেতে যায়। তখনও বারান্দায় কাউকে দেখিনি। খাওয়া শেষে ১৫/২০ মিনিট পর রুমে ফিরে এসে দেখি মোর্শেদ বসে আছে। ওকে জিজ্ঞেস করি, কী হয়েছে? মোর্শেদকে বেশ বিমর্ষ ও বিধ্বস্ত লাগছিল। পরে জানতে পারি, ২০১১ নং রুমে একটা ছেলেকে বেশ পেটানো হয়েছে।

তখনও আমরা বুঝতে পারিনি এতো সিরিয়াস ঘটনা ঘটে গেছে। আমি রুম থেকে বের হতে চাইলে মোর্শেদ বলে যে, ভাই এখন বের হইও না, ঝামেলা হতে পারে। ওর কথায় আর আমরা বাইরে যাই না। তবে পিছনের বারান্দায় গিয়ে বুঝার চেষ্টা করি কী হচ্ছে। ২০০৭ নং রুমের পিছনের বারান্দা থেকে সিঁড়িতে কী হচ্ছে তা গ্লাস থাকায় আবছা বুঝা যায়। দেখি কয়েকজন ছাত্র ছোটাছুটি করছে।

সে আরো জানায়, কিছুক্ষণ পর যখন হালকা চিৎকার বা ছোটাছুটির শব্দ শুনে বাইরে বের হই। বের হয়ে দেখি সিঁড়িতে নিথর হয়ে আবরার তোষকের ওপর শুয়ে আছে।

আমার সাথে আমার তিনজন রুমমেট আহনাফ, তাজোয়ার ও তানভীর রায়হান ছিল। সামনে ডাক্তারও ছিল। ডাক্তার আমাদের সামনে বলে, ছেলেটা ১৫/২০ মিনিট আগেই মারা গেছে।

আমরা কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একটু পর মেহেদী হাসান রাসেল এবং আর একজন সিঁড়িতে আসে। মেহেদী হাসান রাসেল তার পাশের জনকে লাশ দেখিয়ে বলে, এইটারে সিঁড়ি থেকে নিচে নামা।

সে জানায়, রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমি রুমে চলে আসি। তাজোয়ার, সৌমেন ও মুবিন ওরফে প্রত্যয়কে ফোন দেয়। ঘটনার সময় মুবিন হলে ছিল না আর সৌমেন অন্য হলের ছাত্র।

মুবিন হলে এসে আমাদের রুমে আসে। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কী করা উচিত। এরপর মুবিন সোহরাওয়ার্দী হলে যায়। ঘটনার বিষয়ে কী করা যায় সে ব্যাপারে কথা বলতে আমি, তাজোয়ার, রেদওয়ান মিলে আহসানউল্লাহ হলে যাই। কিছুক্ষণ ওখানে থাকার পর আবার চলে আসি।

হলে এসে আবার বের হয় ক্যাম্পাসে যাবো বলে। ক্যাম্পাসে আরো ২/৩ জন আগেই ছিল। আমাদের হল থেকে তিনজন, সোহরাওয়ার্দী হল থেকে বেশ কয়েক ক্যাম্পাসে যাই যে, এখন কী করবো, যাতে করে অপরাধীরা পার না পায় বা লাশ ধামাচাপা দিতে না পারে।

বেশ কিছুক্ষণ পর ক্যাম্পাসের স্যারকে জানাই। তারপর আমরা সবাই মিলে হলে এসে সিসিটিভি ফুটেজের কন্ট্রোল রুমের সামনে অবস্থান নেই যাতে অপরাধীরা এসে ফুটেজের ক্ষতি করতে না পারে।

পরে জানতে পারি অনিক, রবিন, জিয়ন, মুজাহিদ, জেমি, তানিম, শামীম বিল্লাহ, তানভীরসহ বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আরো কয়েকজন ৬ অক্টোবর রাত ৮টার পর আবরার ফাহাদকে তার রুম থেকে ডেকে নিয়ে ২০১১নং রুমে নিয়ে ক্রিকেট স্ট্যাম্প, স্কিপিং রোপ দিয়ে পিটিয়ে, কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড় ও লাথি-গুতা মেরে আবরার ফাহাদকে মেরে ফেলেছে।

পরবর্তীতে সকালের নির্দেশে মোর্শেদ, তানিম, জিসান ২০১১ ও সিঁড়ির ল্যান্ডিং স্থান থেকে আলামত সরিয়ে ২০১০ নং রুমে নিয়ে রাখে।


 
ঢাকা/মামুন খান/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়