ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আবাসিক হোটেল থেকেই চিরবিদায় মুক্তিযোদ্ধার

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১২, ৩১ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আবাসিক হোটেল থেকেই চিরবিদায় মুক্তিযোদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘদিনের একাকীত্ব জীবনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে খুলনার একটি আবাসিক হোটেল থেকেই চিরবিদায় নিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার সাজ্জাদ আলী।

শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি দেখে হোটেলের কর্মচারীরা তাকে ডাকাডাকি করে। পরে মৃত অবস্থায় দেখতে পায় কর্মচারীরা। আত্মীয়-স্বজন ও খুলনার মুক্তিযোদ্ধাদের খবর দেওয়া হলে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।

খন্দকার সাজ্জাদ আলীর বাবা মরহুম জোয়াদ আলী এবং মাতা মরহুম সালেহা বেগম। সাজ্জাদ আলী নগরীর টুটপাড়া মেইন রোডের বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন ধরে হোটেল সুন্দরবনে অবস্থান করছিলেন।

ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, জমিজমা সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধের কারণে দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক সংলগ্ন ‘সুন্দরবন’ আবাসিক হোটেলেই একাকীত্ব জীবন কাটাচ্ছিলেন। তাঁর স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন থাকলেও মৃত্যুর সময়ই কেউই কাছে ছিলেন না। তার স্ত্রী সামছুন নাহার, ছেলে রিয়াসাৎ মোস্তফা সাকিল ও মেয়ে ফারজানা সরোয়ার শাপলা ঢাকায় থাকেন।

খবর পেয়ে হোটেল থেকে মৃতদেহ নিয়ে গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা করেছেন রণাঙ্গনের সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধারা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নানা রোগ-ব্যাধিতে ভুগছিলেন।

হোটেল সুন্দরবন কর্তৃপক্ষ জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার সাজ্জাদ আলী টিভি দেখেন। এরপর হোটেলে তাঁর ভাড়া করা কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। শনিবার সকালে তিনি ঘুম থেকে না উঠলে হোটেলের কর্মচারীরা তাকে ডাকাডাকি করে কোন সাড়া পাননি। পরে মৃত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে আত্মীয়-স্বজন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের খবর দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর, বীর মুক্তিযোদ্ধা অশোক দেবনাথসহ অন্যান্য সহযোদ্ধারা।

হোটেল থেকে লাশ উদ্ধার করে তাঁরা নগরীর টুটপাড়া কবরস্থানে নেন। সেখানে গোসল শেষে আসর বাদ ওই কবরস্থানের জানাজা চত্বরেই জানাজা পড়ানো হয়। গার্ড অব অনার দেয়ার মাধ্যমে লাশ দাফন করা হবে বলে সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধারা জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার সাজ্জাদ আলী ভারতের টান্ডুয়ার দেরাদুন মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধকালীন তাঁর কমান্ডার ছিলেন বৃহত্তর খুলনা মুজিব বাহিনীর প্রধান ও বাগেরহাট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ কামরুজ্জামান টুকু।

খুলনার গল্লামারী, দক্ষিণ খুলনার পাইকগাছা, কপিলমুনিসহ বিভিন্ন স্থানে তিনি যুদ্ধ করেন। তার সহযোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছেন- অশোক দেবনাথ, তপন কুমার বিশ্বাস, আব্দুল কাইউম, নুরুল ইসলাম খোকন, সামছুল আলম হীরা প্রমুখ।


রাইজিংবিডি/খুলনা/৩১ আগস্ট ২০১৯/নূরুজ্জামান/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়