ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ইউডিসি উদ্যোক্তাদের অনশন দ্বিতীয় দিনে

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ২২ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইউডিসি উদ্যোক্তাদের অনশন দ্বিতীয় দিনে

আবু বকর ইয়ামিন : সাতক্ষীরা তালা উপজেলার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) উদ্যোক্তা শেখ আবদুল্লাহ আল আমিন। কেন্দ্রীয় ফোরামের ডাকে ঢাকায় এসে আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘দাবি আদায় না করে শহীদ মিনার ছেড়ে যাবো না। এ জন্য কাফনের কাপড় সঙ্গে নিয়ে এসেছি।’

দুই দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শনিবার থেকে আমরণ অনশন করছেন সহস্রাধিক উদ্যোক্তা।

রোববার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায় সহস্রাধিক ডিজিটাল উদ্যোক্তা কাফনের কাপড় পড়ে শুয়ে আছে। কেউ আবার হাত মাইকে তাদের দাবিগুলো জানাচ্ছেন। তাদের দাবিগুলো হলো- বিনা শর্তে ডিজিটাল সেন্টার পরিচালকগণকে (উদ্যোক্তা) রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় বেতন স্কেলে আনা ও ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করা।

ময়মনসিংহ থেকে এসেছেন আরেক উদ্যোক্তা মো. মাহতাব আলী। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের বাদ দিয়ে তিনি কীভাবে সেটি কল্পনা করেন? তিনি আজ থেকে ছয় বছর আগে ২০১০ সালে যখন আমাদের নিয়োগ দিয়েছেন তখন তিনি বলেছিলেন, ডিজিটাল সেন্টারের কর্মীরা আমার সন্তানের মতো। তিনি যদি আমাদের সন্তান হিসেবে মনে করেন তাহলে আমাদের আজকের এ মানবেতর অবস্থার মুহূর্তে তিনি কোথায়? আমরা সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাই, আমাদের দাবিগুলো মেনে নিন। আমরা বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে দু’বেলা খেয়েপড়ে বাঁচতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের যখন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তখন বলা হয়েছিল ডিগ্রি পাস করতে হবে। আমরা যোগ্যতা বলে এ চাকুরিতে যোগদান করি। অথচ আমাদের কোনো বেতন-ভাতা নেই। আমাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। তবুও আমাদের কোনো আফসোস নেই। কাজ করে দুই চার টাকা আমরা পেতাম। কিন্তু এখন নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সরকারিভাবে লোকজন নেওয়া হলে আমরা যাবো কোথায়? আবার তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ধরা হয়েছে ইন্টারমেডিয়েট পাস। আমরা অবিলম্বে এ বিজ্ঞপ্তি বাতিল চাই। অন্যথায় এখানে মরে যাবো। তবুও বাসায় ফিরে যাবো না। কারণ, আমরা এ কাজটি শিখেছি। আমাদের এটাই করে খেতে হবে। অন্যদিকে চাকরির বয়সও চলে গেছে। আপনারাই বলেন এখন আমরা কই যাবো। মরা ছাড়া কোনো উপায় আছে?’

আরেকজন এস এম নাইম আহমেদ বলেন, ‘ভাই সত্যি বলতে আমরা যে কি তা নিজেরাও জানি না। সরকার আমাদের নিয়োগ দিয়েছে সত্য। কিন্তু আমাদের কোনো স্থায়ী কোনো নিয়োগপত্র নেই। যার কারণে যখন তখন চেয়ারম্যান, সচিবরা বলে দুই হাজার টাকা দিবো কাজ করলে কর। না করলে চলে যা। আবার মাঝে মাঝে পিয়ন, দাড়োয়ানও ধমক দিয়ে কথা বলে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে এমন পরিস্থিতির শিকার হবো কখনো কল্পনা করতে পারিনি। এখন আবার নতুন করে কাম-কম্পিউটারের লোক নেওয়া হচ্ছে। এখন কই যাবো দিশা পাচ্ছি না। তাই না পেরে আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছি।’

বাংলাদেশ ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি মো. হাসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা/পরিচালকগণ ৬ বছর যাবৎ ইউনিয়ন পরিষদের দাপ্তরিক কাজ বিনা পারিশ্রমিকে করে আসছি । অথচ আজ আমাদেরকে বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার পদে  নিয়োগের জন্য পরিপত্র জারি করা হয় । যা বাতিলের দাবিতে আমাদের এ আমরণ অনশন। ইতোমধ্যে আমাদের সাত জন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পরিচালক (উদ্যোক্তা) গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমাদের এমন পরিস্থিতিতেও সরকারের পক্ষ থেকে কেউ এখনো কোনো খোঁজ নেননি। আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগও করেননি। আমরা কি এভাবেই থাকব?’

তিনি দাবি করেন ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের নিয়োগ বাতিল করে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের নারী-পুরুষ উভয় উদ্যোক্তা/পরিচালকগণকে বিনাশর্তে রাজস্বখাতে নিয়ে জাতীয় বেতন স্কেলে বেতন ভাতা দিতে হবে । তিনি এ বিষয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জানুয়ারি ২০১৭/ইয়ামিন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ