ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ইউনাইটেডের পাশে থাকতে চান তাসবিরুল, আগ্রহ নেই পর্ষদের

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২১, ৪ মে ২০২১   আপডেট: ১৩:৩৯, ৪ মে ২০২১
ইউনাইটেডের পাশে থাকতে চান তাসবিরুল, আগ্রহ নেই পর্ষদের

শেয়ারবাজারে ভ্রমণ ও অবকাশখাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ইতোমধ্যে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পুনর্গঠিত পর্ষদকে পাশে থেকে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পর্ষদ থেকে বাদ পড়া সাবেক একজন উদ্যোক্তা-পরিচালক।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিবাচক পরামর্শ গ্রহণ করবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পুনর্গঠিত পর্ষদ। তবে বিএসইসির নির্দেশনার বাইরে গিয়ে সাবেক উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের পরামর্শ আমলে নিতে আগ্রহী নন তারা। আর পর্ষদে থেকে সাবেক উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাজ করার সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছে বিএসইসি। 

সম্প্রতি বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ‘সহযোগিতার’ প্রস্তাব দিয়েছেন ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী।

চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে নতুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ করা হয়েছে, যা আশাব্যাঞ্জক। নতুন এ পর্ষদ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে গতিশীল বিমান পরিবহন সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশাবাদী। এয়ারলাইন্সটি যেহেতু পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এতে তার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী চিঠিতে বলেছেন, ‘আমাকে যদি দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, তাহলে দেশে ফেরত এসে নতুন পরিচালনা পর্ষদকে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করতে আগ্রহী।’ 

তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ চাইলে সহযোগিতা করতে পারেন। এটা তো ভালো কথা। তবে আমাদের মনোনীত পরিচালকরা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের গতি ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছেন।’

দেশের বাইরে থাকায় তাসবীরুল আহমেদ চৌধুরীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কোম্পানির দায় ও লোকসানে বেড়েছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কোম্পানির গতি ফেরাতে ৮ সদস্যের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি। দীর্ঘ দিন কোম্পানির কার্যক্রম না থাকায় নতুন পর্ষদ তহবিল সংকটে পড়েছে। ৮২৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানি প্রাথমিক পর্যায়ের খরচ বহন করতে পারছে না। এছাড়াও অফিস স্টাফদের বেতনও দিতে পারছে না। আর নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র পরিচালকদের তহবিল জোগান দেওয়ার সামর্থ্যও নেই। এমন পরিস্থিতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারল্য সংকট দূর করতে নতুন পরিচালনা পর্ষদকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বিএসইসি।

ইতোমধ্যে নতুন পর্ষদ একটি সভা আয়োজন করেছে। ওই সভায় কোম্পানির বর্তমান আর্থিক অবস্থা এবং পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে বর্তমান লকডাউনে পুনর্গঠিত পর্ষদের কাজে বাধা পড়েছে। তবে কার্যক্রম পরিচালনার হালনাগাদ তথ্য বিএসইসিকে অবহিত করছে পুনর্গঠিত পর্ষদ।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন, কাজী ওয়াহিদ উল আলম, এম সাদিকুল ইসলাম, মাসকুদুর রহমান সরকার, এটিএম নজরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূইয়া, মুহাম্মদ ইউনুস, মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও সৈয়দ এরশাদ আহমেদ।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে ডুবন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। এর ফলে ইউনাইটেড এয়ারে আটকে থাকা বিনিয়োগ ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদ উল আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিএসইসির নীতিমালার আলোকে ইউনাইটেড এয়ারের পুনর্গঠিত পর্ষদ কাজ করছে। বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির স্বার্থে যে কারো ভালো পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করবো, তবে তা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী। কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে বিএসইসি আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে বিনিয়োগকারীদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ১ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তালিকাভুক্তির পরের বছর ২০১১ সালে কোম্পানিটি ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে ২১ কোটি রাইট শেয়ার ছেড়ে ৩১৫ কোটি টাকা শেয়ারবাজার থেকে সংগ্রহ করে। ৮২৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৮২ কোটি ৮০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮০টি। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৭৬ দশমিক ২২ শতাংশ, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। 

২০১০ সাল থেকে টানা ৯ বছর শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দেয়নি ইউনাইটেড এয়ার। এ ব্যর্থতার কারণে ২০১৬ সাল থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে কোম্পানিটি ওভার দ্যা কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে ২টায় লেনদেন হচ্ছে। 

এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়