ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ইটভাটার ধোঁয়ায় বিবর্ণ বহুরিয়া

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৬ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইটভাটার ধোঁয়ায় বিবর্ণ বহুরিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের একটি ইউনিয়নে ইটভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া বিষাক্ত ধোঁয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ২০ একর জমির ধান।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের এই ইউনিয়নটির নাম বহুরিয়া। বহুরিয়ার পূর্বপাড়া এলাকায় এএনবি-২ ইটভাটার ধোঁয়ায় কেবল যে ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে- তা নয়, ভাটার পাশ্র্ববর্তী গাছের আমও ঝরে যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তোফায়েল হোসেন ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় কৃষকের প্রায় ৭/৮ লাখ টাকা মূল্যের ধান পুড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, বছরখানেক আগে বহুরিয়া গ্রামের পূর্বপাড়ায় আবাদি জমি উপর এএনবি-২ নামের ইটভাটাটি স্থাপন করা হয়। ভাটার তিন দিকেই আবাদি জমি, একপাশে নদী। ৭/৮ একর আবাদি জমি ভাড়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই ভাটাটি চালু করা হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এলাকাবাসী জানান, গত ২৭ এপ্রিল হঠাৎ তারা প্রচন্ড গরম অনুভব করেন। অনেকে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। গরমের সঙ্গে দুর্গন্ধের কারণে বমি অনুভব করেন। পরদিন এলাকাবাসী দেখেন তাদের খেতের ধানগাছের পাতা লালচে রং ধারণ করেছে। এসব গাছ আস্তে আস্তে মরে যাচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে ভাটার উত্তর পাশের প্রায় ২০ একর জমির ধানগাছ বিবর্ণ, লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। ধানের ছড়া সাদা হয়ে যাচ্ছে।

এই গ্রামের তারা মিয়া (৪০) রহম আলী, (৮০) করিম সিকদার (৫০) ঠান্ডু মিয়া (৭০) জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর বোরোর আবাদ খুবই ভাল হয়েছিল। কিন্ত ভাটার ধোঁয়ায় পুরো এলাকার জমির ধানই দুর্দশায়।

স্থানীয় বাদশা সিকদার (৬০), জালাল উদ্দিন (৬০), জমির মালিক বাদশা খান, আতর আলী (৮০) জহিরুল ইসলাম (৩০) জানান, তাদের সারা বছরের আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

তারা জানান, ভাটা আশপাশের বাড়ির গাছ থেকে আম ঝরে যাচ্ছে। গাছের পাতাও পুড়ে যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে- ফসলী জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা চালুর পর ভাটা মালিক এলাকার কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন এবং ধানখেতের পাশের মাটি কেটে পুকুর বানিয়ে ফেলছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের নানা হয়রানি মুখে পড়তে হয়। প্রশাসনের কাছে তারা পুড়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতিপূরণ ও তিন ফসলী জমিতে স্থাপন করা ইটভাটার অপসারণ চেয়েছেন ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউর রহমান জানান, খবর পেয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্লক সুপারভাইজার তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘ইটভাটার ধোঁয়ায় ধানখেত পুড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করেছি। ইটভাটার ধোঁয়ায় এলাকার প্রায় ১৬ একর জমির ফসল পুড়ে গেছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭/ ৮ লাখ টাকা।’

ইটভাটার মালিক আব্দুর রহিম ভাটার ধোঁয়ায় জমির ধান পুড়ে নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান, কৃষি কর্মকর্তা ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের নিয়ে বৈঠক হবে। এর আগে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে তাদের ক্ষয়পূরণ দেয়া হবে।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ওই এলাকা পরিদর্শন করে ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়াসহ কৃষক যেন তাদের ক্ষতিপূরণ পায় তার ব্যবস্থা করা হবে।’




রাইজিংবিডি/ টাঙ্গাইল/৬ মে ২০১৯/শাহরিয়ার সিফাত/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়