ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এ কেমন মানবিকতা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৭, ২ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এ কেমন মানবিকতা!

২৫ বছরের আলী ভারতের আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়া জেলায় নির্মিতব্য দেশটির সবচেয়ে বড় আটককেন্দ্রে ইলেকট্রেশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে আশ্রয় কেন্দ্রের হাসপাতালে বসেছিলেন তিনি।

আল-জাজিরার সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘আজ আমি এখানে কাজ করছি। কাল এটাই হতে পারে আমার দুলাভাইয়ের জন্য কারাগার। এটা আমার বোনের পরিবারকে ধ্বংস করে ফেলবে’।

গত বছর আসামে প্রকাশিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জিতে নাম আসেনি আলীর দুলাভাইয়ের। ওই নাগরিক পঞ্জিতে ১৯ লাখ মানুষকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে না পারলে তাদেরকে হয় আটককেন্দ্রে নতুবা বাংলাদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার।

রাজধানী দিসপুর থেকে ১২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়ালপাড়ার মাতিয়া গ্রামে প্রায় দুই দশমিক আট হেক্টর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে আটককেন্দ্রটি। এতে তিন হাজার লোককে একসঙ্গে রাখা সম্ভব। দুর্গম গোয়ালপাড়ার এই আটককেন্দ্রের তিন দিকে রয়েছে বিরান ভূমি । আর সামনের অংশে রয়েছে প্রধান শহর গুয়াহাটি থেকে আটক কেন্দ্রে আসার রাস্তা।

আটককেন্দ্রে আসার সড়কের এক পাশে রয়েছে ‘ভুতের পাহাড়’ হিসেবে পরিচিত পাহাড়ি এলাকা। স্থানীয়দের মধ্যে প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী, শতাব্দি আগে এই পাহাড়ি অঞ্চলের রাজত্ব করতো ভুতেরা। কোনো মানুষের জন্য এটি পার হওয়ার অনুমতি ছিল না।

গুলাম নবী নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমি এখানে তেমন পরিস্থিতি অনুভব করছি। এই আটককেন্দ্রে একবার যাকে পাঠানো হবে সে আর আর ফিরে আসবে না’।

আটককেন্দ্রের সুউচ্চ প্রাচীরের দিকে আঙ্গুল তুলে তিনি বলেন, ‘এক জন মানুষকে জনগোষ্ঠী, তার পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে বিশাল প্রাচীরের মধ্যে আবদ্ধ রাখা কেমন মানবিকতা?’

আটককেন্দ্রে হাসপাতাল ছাড়াও রয়েছে স্কুল, বিনোদন কেন্দ্র, রান্নাঘর এবং নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক আবাসন।

আসাম পুলিশ হাউজিং বোর্ডের প্রকৌশলী ও আটককেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত  কর্মকর্তা রবিন্দ্র দাস বলেন, ‘ছয় ফুট উচ্চতার লাল দেয়াল দিয়ে নারী ও পুরুষ বন্দীদের থাকার জায়গা পৃথক করা হয়েছে। পুরুষদের জন্য চার তলা বিশিষ্ট ১৩ টি ব্লক থাকবে এবং নারীদের জন্য একই আয়তনের দুটি ব্লক থাকবে। পুরো এলাকাটি দুটি দেয়াল দিয়ে ঘেরা থাকবে। ভেতরেরটি হবে ২০ ফুট উচ্চতার এবং বাইরেরটি হবে ছয় ফুট উচ্চতার’।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে আটককেন্দ্রে ছয়টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থাকবে। রাতে নজরদারির জন্য এসব টাওয়ারে বসানো হবে ১০০ মিটার উচ্চতায় হাই-বিম লাইট।

নয়া দিল্লির জওহারলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তানভির ফজল বলেন, ‘এটা সহজেই বোঝা যায় যে, অমুসলিমরা যদি নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ পড়ে যায় তাহলে তারা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। তাই আটককেন্দ্রে যাওয়ার জন্য কেবল বাকী থাকে মুসলিমরা’।


ঢাকা/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ