ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এখানের পরিবর্তে ওখানে যান

মোখলেছুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এখানের পরিবর্তে ওখানে যান

হংকং

মোখলেছুর রহমান : ঘুরতে কার না ভালো লাগে। ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা নিশ্চই পরিকল্পনা করেছেন যে, কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন। তবে এটা ঠিক যে কেউই চায় না তার ঘুরতে যাওয়া সুখকর না হোক। সবাই চায় তাদের ঘুরতে যাওয়ার জায়গাটা যেন নিরাপদ এবং স্বস্তিদায়ক হয়।

সেক্ষেত্রে ঘুরতে যাওয়ার স্থান হিসেবে এমন কোনো স্থানকে নির্বাচন করা ঠিক হবে না, যেখানে বড় কোনো নির্মাণ কাজ চলছে অথবা হামলার হুমকি রয়েছে। এছাড়াও জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে-এরকম স্থানও ২০১৭ সালের ভ্রমণ তালিকা থেকে বাদ রাখতে হবে।

২০১৭ সালে কোথায় ঘুরতে যাওয়া উচিত আর কোন জায়গাগুলোকে ২০১৭ সালের ভ্রমণ তালিকা থেকে বাদ রাখা উচিত, সে বিষয়েই এ প্রতিবেদন।

দুবাইয়ের পরিবর্তে হংকংয়ে যান

২০২০ সালের দুবাই এক্সপোর প্রস্তুতি উপলক্ষে এই বিশ্বমানের শহরে মাল্টি মিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। এর মানে হল, বিশ্বের বৃহত্তম টাওয়ার সহ দুবাইয়ের কিছু পর্যটন এলাকার সংস্কার কাজ ২০১৮ সালের আগে শেষ হবে না। অর্থাৎ এগুলো ২০১৮ সালের পূর্বে পরিদর্শন করা যাবে না।

তাই যতক্ষণ না দুবাই তার সব পর্যটন এলাকার দরজা আবার খুলে দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত হংকংকে ভ্রমণের স্থান হিসাবে বিবেচনা করতে পারেন। হংকংয়ে হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন নেই, কিন্তু এখানে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা হোটেল রিটজ-কার্লটন। আপনি দেখতে পাবেন হংকং এর বিলাসবহুল বুটিক, ব্যস্ত রাস্তায় বাজার, রাতের ব্যস্ত নগরী ও বিশ্বমানের ডাইনিং যা সহজেই হংকংকে অন্য যেকোনো শহরের প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে।

গ্রেট বেরিয়ার রিফে না গিয়ে অ্যাটেওরো দ্বীপে যান

গ্রেট বেরিয়ার রিফ এর একসময়কার স্পন্দনশীল রঙ সার্বজনীনভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার কারণে মৃত কোরাল সম্বলিত একটি ধূসর কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। যা হোক, যদি আপনার মজার ছুটির দিনগুলোকে অস্তিত্ববাদের হতাশা দ্বারা জর্জরিত করতে না চান তাহলে আপনি আপনার ভ্রমণপথ হিসেবে গ্রেট বেরিয়ার রিফকে এড়িয়ে চলার কথা ভাবতে পারেন।

তার পরিবর্তে অ্যাটেওরো দ্বীপকে আপনার ভ্রমণের স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন। রঙিন প্রবাল দর্শন, সামুদ্রিক জীবনকে যেসব ভ্রমণকারী খুব ভালবাসেন, সেসব ভ্রমণকারীদের জন্য নিখুঁত গন্তব্য হতে পারে অ্যাটেওরো দ্বীপ। টিমর-লেস্ট উপকূলের এই ছোট দ্বীপটি বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ জলের আধার।

মিয়ামি বিচে না গিয়ে পশ্চিমে যান

আপনার সৈকত ভ্রমণকে মাটি করে করে দেয়ার জন্য এক জিকা ভাইরাসই যথেষ্ট। তাই মিয়ামি বিচে সুন্দর বালি এবং সুন্দর সুন্দর খাবার থাকা সত্ত্বেও, জিকা ভাইরাসের উপস্থিতির কারণে ২০১৭ সালের ভ্রমণ তালিকা থেকে মিয়ামি বিচ এর নামটি বাদ দেয়া উচিত।

এর পরিবর্তে আপনি যদি পাশ্চাত্য, ফ্লোরিডার সবচেয়ে মূল জায়গাটি দেখতে যান তাহলে আপনি একটি ক্যারিবিয়ান অবকাশের সব ক্লাসিক ছাপ (টকটকে সৈকত, সুন্দর আবহাওয়া) পাবেন। এটি জিকা ভাইরাস মুক্ত, যেখানে বসে আপনি ফ্লোরিডার রোদ এবং শিল্প-স্থাপত্য দেখতে পারবেন।

টাইমস স্কয়ারে না গিয়ে ব্রুকলিনে যান

সত্যিকারের নিউ ইয়র্ক এর তালিকায় কিন্তু টাইমস স্কয়ারের নামটি রাখা হয়না। এমনকি স্থানীয়রাই সুযোগ পেলে এই স্থানটিকে এড়িয়ে চলেন। তাই টাইমস স্কয়ারে না গিয়ে আপনি ব্রুকলিনকে ভ্রমণের স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন।

ব্রুকলিনের আপনি কফি বজরায় গান শুনতে পারবেন, দ্বীপে মৎসকন্যা প্যারেড দেখতে পারবেন, অথবা প্রসপেক্ট পার্কের ৬০ একর হ্রদ উপভোগ করতে পারবেন। অবাক করা রাস্তার শিল্প এবং প্রতিটি কোণায় পানভোজনবিলাসী খাদ্য অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত মূল্যে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

নয়াদিল্লির পরিবর্তে বেঙ্গালুরু যান

নয়াদিল্লি যদিও ২০১৬ সালে অনেকেরই ভ্রমণ তালিকায় ছিল কিন্তু অত্যাধিক বায়ুদূষণের কারণে বর্তমানে শহরটি ভ্রমণের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এখন সেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ দূষণ অনুভব করতে হয়।

তাই ২০১৭ সালে ভ্রমণ করতে নয়াদিল্লি না গিয়ে তার পরিবর্তে বেঙ্গালুরু যান। সেখানে আপনি পাবেন বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষ এবং সুস্বাদু খাবারের স্থান। পাবেন সমস্ত দিন ঘুরার জন্য বছরব্যাপী নিখুঁত আবহাওয়া। বেঙ্গালুরু মন্দির ও জলপ্রপাত সম্বলিত একটি সবুজ শহর। এছাড়াও সেখানে সিংহ ও বাঘ (ন্যাশনাল পার্ক দ্বারা প্রদত্ত সাফারি ট্যুরের মাধ্যমে নিরাপদে দেখার জন্য) সম্বলিত কাছাকাছি একটি বনও রয়েছে।

লন্ডনে না গিয়ে প্রাগে যান

লন্ডনের সবচেয়ে বড় পর্যটক আকর্ষণের স্থান হল, বিগ বেন। কিন্তু ১৫৭ বছরের মধ্যে ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো এই বিখ্যাত ঘড়িটির বিশাল আকারের পরিবর্তনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে যা শেষ হতে সময় লাগবে তিন বছর। সুতরাং ২০১৭ সালে লন্ডনে না গিয়ে আর একটু পূর্বের শহর প্রাগে গিয়ে দেখে আসতে পারেন শহরটির যান্ত্রিক বিস্ময় ‘জ্যোতির্বিদ্যা ঘড়ি’। ১৪১০ সাল থেকে ঘড়িটি এখানে রয়েছে এবং সারা বিশ্বের মানুষ প্রতি বছর ঘড়িটি দেখতে আসেন। এছাড়াও প্রাগে গেলে আপনি মধ্যযুগীয় দুর্গ এবং বাগান ঘুরে আসতে পারেন।

পিসা’য় না গিয়ে আবুধাবি যান

বর্তমান সময়ে সবাই সেসব জায়গাতেই ঘুরতে যেতে চান যেখানে গেলে বিভিন্ন লোকেশনে প্রচুর ছবি তোলা যাবে এবং ইনস্টাগ্রামের ফিড একদম ভরে ফেলা যাবে। আর সেক্ষেত্রে একটি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শুধু ছবি তোলার জন্য পিসা’র হেলানো টাওয়ারে ভ্রমণ করতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না।

তার পরিবর্তে আপনি আবুধাবি যেতে পারেন। সেখানে রয়েছে পিসা’র হেলানো টাওয়ারের চাইতেও তিন গুণ উচু একটি টাওয়ার। দ্বীপ, মরুভূমি সাফারি, একটি প্রাসাদ এবং এমনকি একটি বাজপাখি কেন্দ্র নিয়ে পুরো আবুধাবিই যেন একটি মনোমুগ্ধকর পার্ক।

আইবিজা দ্বীপের পরিবর্তে অ্যাগুয়া অ্যামারগাতেযান

আইবিজা এর অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য অনস্বীকার্য। ৫৬ কিলোমিটার  সুন্দর সৈকত নিয়ে গঠিত এই দ্বীপের চাইতে বেশি রোমান্টিক স্থান আর কি হতে পারে?

কিন্তু আপনি যদি স্প্যানিশ তটরেখা অ্যাগুয়া অ্যামারগাতে যান, তখন আপনার মনে হবে এই সাবেক মৎস আহরণের পোর্টটিই অনেক ঘনিষ্ঠ দর্শনীয় স্থান। এখানে আপনি একই সঙ্গে সৈকতের স্বচ্ছ জল এবং অদ্ভূত আগ্নেয়গিরি দেখতে পাবেন।

আইসল্যান্ডের পরিবর্তে নিউজিল্যান্ডে যান

আইসল্যান্ডের নাটকীয় দৃশ্য, গরম স্প্রিংস, লাভা ক্ষেত্র আপনাকে মুগ্ধ করতেই পারে। কিন্তু সমস্যা হল, আইসল্যান্ড প্রকৃতিগতভাবেই খুব শীতল। এই মুহূর্তে এটা অনুমান করাই যায় যে, আইসল্যান্ডে প্রকৃত আইসল্যান্ডীয় নাগরিকদের চেয়ে বেশি পর্যটক আছে।

সুতরাং যদিও আক্ষরিক বিপরীত মেরু এবং অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত, তথাপি নিউজিল্যান্ড নামের দ্বীপরাষ্ট্রটি আইসল্যান্ড ভ্রমণের নিখুঁত  বিকল্প হতে পারে। এর তুষারাবৃত পর্বত, সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, সবুজ বন, এবং উত্তেজনাপূর্ণ হিমবাহ আপনার ভ্রমণকে করবে আরো উপভোগ্য।

মহাশূণ্যে না গিয়ে অ্যান্টার্কটিকা যান

মহাশূণ্যে যাওয়ার ইচ্ছা কার না আছে? জিকা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে অনেকেই মহাশূণ্যে ভ্রমণে যেতে চাইতে পারে। এছাড়াও এতে আপনি একটি অনন্য ক্লাবের অংশও হতে পারছেন কারণ এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫৩৬ জন ব্যক্তি মহাশূণ্যে যেতে পেরেছেন। কিন্তু এর পিছনে খরচটাও কিন্তু নেহাতই কম নয় (২৫০,০০০ ডলার)।

তাই আপনি যদি কিছুদিন জগৎ সংসার এর সকল কিছু ছেড়ে থাকতে চান তাহলে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে বেছে নিতে পারেন। এছাড়াও আপনি এখানে দূরবর্তী বিচ্ছিন্ন লোকালয়ে গিয়ে ঘর বেধে থাকতে পারেন কারণ জিকা ভাইরাস এবং এবং জলবায়ু পরিবর্তন এখনও এই শীতল মহাদেশে প্রবেশ করতে পারেনি।

তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ  

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়