ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কমছে চিংড়ি পোনা উৎপাদন, কমছে রপ্তানি

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কমছে চিংড়ি পোনা উৎপাদন, কমছে রপ্তানি

কক্সবাজার প্রতিনিধি: দুর্দিন চলছে সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ির। কক্সবাজারের হ্যাচারিগুলোতে চিংড়ির পোনা উৎপাদন আগের মতো নেই। ফলে এ খাতে রপ্তানি আয়ও হ্রাস পেয়েছে।

নানা সমস্যায় দিন দিনই কমছে কক্সবাজারের হ্যাচারিগুলোতে চিংড়ির পোনা উৎপাদন। হ্যাচারি সংশ্লিষ্টরা সরকারের উদাসীনতা, চোরাইপথে রুগ্ন পোনার অনুপ্রবেশ, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকাকে এ জন্য দায়ী করছেন।

দেশে চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ৫৫টির বেশি চিংড়ি পোনা হ্যাচারি। এখান থেকে প্রতিবছর ১৫শ’ কোটির বেশি উৎপাদিত চিংড়ি পোনা চাষের জন্য সরবরাহ করা হতো খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট, চকরিয়া ও মহেশখালীতে। কিন্তু নানা সমস্যায় দিন দিন কক্সবাজারের হ্যাচারিগুলোতে কমে যাচ্ছে চিংড়ি পোণা উৎপাদন।

বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে ৩০টি হ্যাচারি। যাতে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র সাত শ’ কোটি পোনা। অর্থাৎ উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের কোয়ালিটি হ্যাচারির ম্যানেজার সাগর আহমেদ বলেন, ‘এখন চিংড়ি পোনা উৎপাদনের মূল মৌসুম। কিন্তু সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা রয়েছে। যার কারণে মাদার চিংড়ি আহরণ করতে না পারায় চিংড়ি পোনা উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এই ৬৫ দিনে দুটি সার্কেলে মোট ১৬ কোটি পোনা উৎপাদন করা সম্ভব হত। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। ফলে দুই কোটি টাকার অধিক লোকসান হচ্ছে হ্যাচারিতে।’

বেঙ্গল বে হ্যাচারির সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী পোনা সরবরাহ করতে পারছি না। ফলে কক্সবাজার উপকূল ছাড়াও বেকাদায় রয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোরে বর্তমানে চিংড়ি পোনা সরবরাহ করতে না পারায় চিংড়ি চাষিরা ।

বলাকা হ্যাচারির মোহাম্মদ রুবেল বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে গুণগত মানের চিংড়ি পোনা সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর ও বাগেরহাটে সরবরাহ করতে না পারায় চাষিরা চোরাইপথে ভারত থেকে রুগ্ন পোনা সংগ্রহ করছে। বাধ্য হচ্ছে ঘেরে এই চিংড়ি পোনা ছাড়তে। এতে ঘের গুলোর অনেক চিংড়ি মারা যাচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে চিংড়ি উৎপাদন।’

সামুদ্রিক মৎস্য বিশেষজ্ঞ সামশুল হাদী খান বলেন, ‘প্রতিবছরই চিংড়ি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ কমছে। যেহেতু আমাদের চিংড়ি পোনা উৎপাদন কমে গেছে সেহেতু রপ্তানিও কম। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ যারা ২০০৬-০৭ সালে ১ লাখ মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি করতো; সেখানে এখন রপ্তানি করছে ৬ লাখ মেট্রিক টন। শুধুমাত্র সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা ও সরকারের পরিকল্পনার কারণে তাদের চিংড়িখাত দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের উদাসীনতা, পরিকল্পনার অভাব, দেশ ছোট হওয়ায় জায়গার সাথে সামঞ্জস্য করতে না পারা ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের অভাবে দিন দিন চিংড়ি রপ্তানি কমে যাচ্ছে। তাই এখনি এই খাতকে রক্ষায় সরকারকে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে চিংড়ি রপ্তানি বৃদ্ধি হবে।’

কক্সবাজার মৎস্য অধিদপ্তরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান জানান, চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলাদা চিংড়ি চাষ জোন করা হচ্ছে। আগামী বছর থেকে এই চিংড়ি চাষ জোন হবার পর কক্সবাজারের হ্যাচারিগুলোকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পোনা উৎপাদনে আনা হবে। এতে মাদার চিংড়ি পোনা, পোনা চিংড়ি আহরণ সম্ভব হবে। এই এসপিএফ পোনা দেশের সব জায়গা ছড়িয়ে দিতে পারলেই চিংড়ির উৎপাদন অনেকাংশ বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৪৭ হাজার ৬শ ৩৫ মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি হয়। ওই অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৫৫ কোটি ডলার। এরপর ধারাবাহিক কমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ১শ ৬৮ মেট্রিক টন ও আয় হয় ৪০ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।

 

রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২ জুলাই ২০১৯/সুজাউদ্দিন রুবেল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়