ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনা আক্রান্ত ইমান আলী: ১৩ দিনের বন্দিজীবনের কষ্ট

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ২৮ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনা আক্রান্ত ইমান আলী: ১৩ দিনের বন্দিজীবনের কষ্ট

‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিন ধরে পরিবার নিয়ে ঘরবন্দি হয়েছিলাম। চার বছরের মেয়ে আর আট বছরের ছেলে নিয়ে কখনো অর্ধাহারে, কখনো অনাহারে। প্রতিবেশীদের কাছেও আমরা চরম ঘৃণিত, একঘরে হয়ে পড়েছিলাম। চিকিৎসাতো দূরের কথা, একাধিকবার যোগাযোগ করলেও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনসহ কেউ সাড়া দেয়নি। এই কয়দিনে তারা একবার খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি। তবে সাংসদ খোকা সাবকে জানানোর পর পাশে দাঁড়িয়েছেন, পাঠিয়েছেন পর‌্যাপ্ত খাদ্য।’

নারায়নগঞ্জ সোনারগাঁও উপজেলার বৈদ্যের বাজার এলাকার সাতভাইয়া পাড়ায় পল্লী চিকিৎসক ডা. ইমান আলী মঙ্গলবার সকালে এভাবেই তার কষ্টের কথা তুলে ধরেন।

রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, চার বছরের মেয়ে ও আট বছরের ছেলে নিয়ে তার সুখের সংসার। নারায়নগঞ্জ-৩ সোনারগাঁও এলাকার বৈদ্যের বাজারে চেম্বার করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। ১৩ এপ্রিল হঠাৎ তার গলায় ইনফেকশন দেখা দেয়। গলা ব্যথা, কাশির সঙ্গে জ্বর অনুভব হলে তিনি ঢাকার গেন্ডারিয়া আজগর আলী হাসপাতালের ডা. আসিফ মোস্তবা মাহমুদকে দেখান। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে তার নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন উক্ত চিকিৎসক। নমুনা দিয়ে ইমান আলী চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। ১৬ এপ্রিল তার নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ ধরা পড়ে। ওইদিনই সোনারগাঁও উপজেলার সহকারী কমিশনার আল মামুনের নেতৃত্বে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাইকিং করে ইমান আলীর বাড়িসহ আরও পাঁচটি পরিবারকে লকডাউন ঘোষণা করে।

বন্দিজীবনের কষ্টের কথা তুলে ধরে উক্ত পল্লী চিকিৎসক বলেন, ‘লকডাউন ঘোষণা করে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে একেবারে আলাদা থাকার পরামর্শ দেন। এসময় আমাদের পাঁচ পরিবারকে খাদ্যসহ যে কোন সহায়তার প্রতিশ্রতি দিয়ে যান। সোনারগাঁও সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার কথা বলা হয়। কিন্তু পরে তারা আর কোন খোঁজ-খবর নেয়নি কেউ। আজগর আলী হাসপাতালের ‍উক্ত চিকিৎসকের পরামর্শে নিজে নিজেই বাসার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করি। এসময় লকডাউনের কারণে চরম বিপর্যয় নেমে আসে আমার ও বাকী পাঁচ পরিবারের ওপর। প্রতিবেশিরা কাউকেই আমাদের বাসাবাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। আত্মীয়-স্বজনদেরও কিছু আনতে দেয়নি। এভাবে ঘরে যা ছিল, তা কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।  অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে  আলাদা ঘরে আমি কী চিকিৎসা নেব, নাকি পরিবারের ছেলে-মেয়ের খাবার যোগাবো, তার চিন্তায় দিশেহারা হয়ে যাই। ’

আমার কারণে লকডাউনে পড়া পরিবারগুলোর অবস্থা আরও করুণ। তাদের মধ্যে গর্ভবতী মহিলা ছাড়াও কয়েকটি শিশু ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এবং এসিল্যান্ডকে বারবার ফোন দিয়ে গেছি, এসএমএস দিয়েছি, কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পাইনি। ফোন দিয়েছি, সাহায্য করবেন বলেও করেননি।  গত ২৫ এপ্রিল স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাকে রাত ১১টার দিকে ফোন দিয়ে আমাদের অসহায় অবস্থার কথা জানাই। পরের দিন ১২টার আগেই পাঁচ পরিবারের জন্য ৮টি বস্তায় চাল, ডাল, তেল-সবজি নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার, শিশুখাদ্য, ইফতারিসহ সবকিছু দিয়ে যান। এখন আমাদের খাবারের কষ্ট নেই। কিন্তু লকডাউনে আছি, পেরেশানিতে আছি কখন মুক্ত হবো এ চিন্তাই।’

ইমান আলী স্থানীয় সাংসদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের মানবিক বিপর্যয়ে এক এমপি ছাড়া কেউ এগিয়ে আসেননি। চরম দুঃসময়ে তার এই সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গেই স্মরণ করছি। ’

এখন কেমন আছেন, জানতে চাইলে করোনায় আক্রান্ত পল্লী চিকিৎসক জানান, এখন ইনশআল্লাহ আমি ৯৫ শতাংশ সুস্থ্য মনে করছি। কতটুকু সুস্থ্য তার জন্য আবারও নমুনা দিয়েছি। আশা করছি এবার নেগেটিভ আসবে।’

করোনা মহামারি থেকে সম্পূর্ণ সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান পল্লী চিকিৎসক ইমান আলী।


ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়