ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনার গুরুত্বপূর্ণ ১০ শিক্ষা (প্রথম পর্ব)

খালেদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৫, ১২ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনার গুরুত্বপূর্ণ ১০ শিক্ষা (প্রথম পর্ব)

করোনাভাইরাসের মহামারির ঝক্কি সামাল দিতে নাকানিচুবানি খাচ্ছে পুরো বিশ্ব।

মহামারির এই সংকট আমাদেরকে নানা বিষয়ে নতুন করে ভাবতে শিখাচ্ছে। এটি রাষ্ট্র ও সমাজের মূলে আঘাত হেনেছে, অনেক দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তুলেছে। অর্থনীতি এমন কঠিন সময় পার করছে যে অনেকেই মনে করছেন এই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। অনেক শিল্পকারখানা আংশিক কিংবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

মানুষকে পুরোপুরি গৃহবন্দী জীবনযাপন করতে হচ্ছে। ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ যাদের আছে তারা রীতিমতো ভাগ্যবান, কিন্তু অন্যদের হাত গুটিয়ে বসে দিনগোনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

মহামারির এই সময়ে বিশ্বব্যাপী মানুষ যেসব বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে সেসব নিয়ে দুই পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ পড়ুন প্রথম পর্ব।

দেশগুলোর মহামারির জন্য মোটেও প্রস্তুতি নেই: করোনাভাইরাস বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহকে অনিশ্চয়তার মধ্যে নিপতিত করেছে। এর থেকে বলা যায়, এমন মহামারির জন্য সমগ্র বিশ্বের নেই কোনো প্রস্তুতি। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, যেহেতু বন্যপ্রাণীর সাথে আমাদের সংযোগ খুবই ঘনিষ্ঠ, তাই এই মহামারিই শেষ নয়। মানুষ যদি বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস করতে থাকে এবং তাদের মাংস ভক্ষণ করতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে আমাদেরকে আরো মহামারি মোকাবেলা করতে হবে। কারণ, অনেক বন্যপ্রাণী হাজার হাজার রোগজীবাণু বহন করে। আমাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। পরবর্তী মহামারির আগেই আমাদেরকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য গবেষণার পেছনে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে। কারণ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মহামারি আসবে কিনা তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, মহামারি কখন আসবে।

আমরা একটি গ্লোবাল ভিলেজ-এ বাস করি: আমরা যতটা না ভাবি, তার চেয়ে বেশি কাছাকাছি একটি বিশ্বে আমরা বাস করি। বিশ্বের যেখানেই আমরা কোনো কাজ করি না কেন, হাজার হাজার মাইল দূরে তার প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এর এক প্রান্তে কোনো কিছু ঘটলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা অন্যপ্রান্তেও নাড়া দেয়। মার্শাল ম্যাকলুহান ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘আমরা এমন এক গ্লোবাল ভিলেজ এ বাস করি, তার মধ্যে যতই দৃশ্যমান সীমানা থাকুক না কেন আমরা একত্রে যুক্ত হতে চলেছি।’

যখন শত্রু হয় অদৃশ্য তখন তা কোনো প্রাচীর দিয়ে আটকানো যায় না। তাই আমাদের কাজের ব্যাপারে অনেক বেশি দায়িত্ববান ও মনোযোগী হতে হবে। কারণ একটি সূক্ষ্ম ভুলের কারণে হাজার হাজার জীবন শেষ হতে পারে মূহুর্তেই এবং তা পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিতে পারে।

বেঁচে থাকার জন্য অনেক বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই: আমরা এখন শুধু মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটাচ্ছি। আমরা এটা অনুধাবন করছি যে, বেঁচে থাকার জন্য আমাদের অনেক বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। এখন আমরা শুধু খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং পানিতেই তুষ্ট থাকছি। ফলে আমরা বুঝতে পারছি যে, এসব মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে যেসব চাহিদা আমাদের রয়েছে সেগুলো নিতান্তই মেকি। দামি ব্যাগ, সৌখিন ঘড়ি, দামি আসবাবপত্র, আভিজাত্যপূর্ণ নতুন নতুন পোশাক, এমনকি জমকালো পার্টি এসবকিছুই আমাদের সামনে গোলকধাঁধা ছাড়া কিছু নয়। দিনশেষে সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য আমাদের প্রয়োজন খুবই সামান্য। কিন্তু আমরা চোখের সামনে জমকালো সব আয়োজন দেখে বিভ্রান্ত হয়ে সেগুলোকে প্রয়োজন ভেবে ভুল পথে পা বাড়াই।

জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং মূল্যবান: ভাইরাস ইতোমধ্যেই বহু জীবন কেড়ে নিয়েছে। অনেকেই আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছেন। অনেকেই তাদের প্রিয়জনকে হারাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে আমাদেরকে নতুনভাবে শিক্ষা দিচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি কত সহজেই আমরা নিঃশেষ হতে পারি, কিংবা আমাদের প্রিয়জনকে হারাতে পারি। এটি আমাদেরকে শেখাচ্ছে জীবন কত মূল্যবান এবং সময় থাকতেই এর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। কারণ, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং জীবন ক্ষণস্থায়ী। তাই আমাদের প্রিয় মানুষগুলোকে অনেক বেশি সময় দেওয়া উচিত।

বাড়িতে বসেও চাকরি করা যায়: অনেক কোম্পানিই অফিস বন্ধ রেখে তাদের কর্মীদেরকে ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। অনেকেই আগে থেকে এই সুযোগ দিয়ে আসলেও অনেক কোম্পানির জন্য এটি একদমই নতুন। একনাগাড়ে দীর্ঘদিন ঘর থেকে কাজ করার ফলে নতুনরাও অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। তারা বুঝতে পারছেন, শুধু ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই ঘরে বসেও তাদের কাজগুলো করা সম্ভব।

অনেক কোম্পানিই বুঝতে পারছে কর্মীদেরকে কাজের জন্য সারাদিন অফিসে বসিয়ে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। তার চেয়ে বরং কর্মীদেরকে ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ দিলে তাদের যাতায়াতের সময়ের অপচয় রোধ করা সম্ভব।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)



ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়