ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জের ৬টি আসনেই এখন ভোটের উত্তাপ

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কিশোরগঞ্জের ৬টি আসনেই এখন ভোটের উত্তাপ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থী এবং সমর্থকদের দৌড়ঝাঁপ ততই বেড়ে চলছে কিশোরগঞ্জের সবগুলো আসনে।

১৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ জেলায় মোট ৬ টি জাতীয় সংসদীয় আসন।

কিশোরগঞ্জ-১: কিশোরগঞ্জ সদর-হোসেনপুর নিয়ে গঠিত  এ  আসনে ভোট কেন্দ্র ১৬৬, ভোটার ৪ লক্ষ ৩০ হাজার ১৯৩ জন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। যিনি ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ সন পর্যন্ত ৪ বার বিপুল ভোটে এ আসনে জয় লাভ করেছেন। বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মনে করা হচ্ছে, এ আসনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কোন বিকল্প নেই।

অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি থেকে প্রথমবারের মত প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ মো. রেজাউল করিম খান চুন্নু। কিন্তু কোনভাবেই দলীয় নেতাকর্মীদের মন যোগাতে পারছেন না বিএনপির এ প্রার্থী।

এছাড়াও এ আসনে মো. এনামুল হক (সিপিবি), মুহ. আবদুর রহমান অ্যাডভোকেট (জেএসডি), মো. মহিউদ্দিন ( ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ-২: কটিয়াদি-পাকুন্দিয়া নিয়ে গঠিত এ  আসনে ভোট কেন্দ্র ১৬৫, ভোটার ৪ লক্ষ ১৭ হাজার ৪২০ জন। প্রার্থী ৭জন। এ আসনটিও আওয়ামীলীগের একটি শক্তঘাটি হিসেবে পরিচিত। যদিও ভোটের লড়াই হবে বড় দুই দলের প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে। দু’দলেরই নির্বাচনী দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ার মত।

এ আসনে নৌকার প্রার্থী পুলিশের সাবেক আইজিপি, সচিব ও রাষ্ট্রদূত নূর মোহাম্মদ। চাকরি জীবনে যখনই এলাকায় আসতেন সাধারণ মানুষের সাথেই তার চলাফেরা ছিল বেশি। বিগত দুই বছরে এলাকায় করেছেন উঠান বৈঠক, সমাবেশ ও গণসংযোগ। তৈরি করেছেন নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংক।

অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনীত বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। ২০০১ সালের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। আখতারুজ্জামান দলে বিভিন্নভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হলেও তার নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে।

তবে ভোটের যুদ্ধে সাধারণ ভোটাররা মহাজোট মনোনীত প্রার্থী পুলিশের সাবেক আইজিপি, সচিব ও রাষ্ট্রদূত নূর মোহাম্মদকেই এগিয়ে রাখছেন।

এছাড়াও নূরুল ইসলাম (সিপিবি),  মো. আব্দুল জব্বার (জাকের পার্টি), মো. সালাউদ্দিন রুবেল (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), তারেক মো. শহীদুল ইসলাম ( ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), মীর আবু তৈয়ব মো. রেজাউল করিম বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ-৩: করিমগঞ্জ-তাড়াইল নিয়ে গঠিত এ  আসনে ভোট কেন্দ্র ১৩৫। ভোটার ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ২০৯। এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। মহাজোটের প্রার্থী হয়ে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু আর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জেএসডির ড. সাইফুল ইসলাম। প্রচার-প্রচারণায় মহাজোট প্রার্থীর চেয়ে অনেক পিছিয়ে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী।
 


মহাজোটের প্রার্থী চুন্নু তার প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন অলিগলি, যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তবে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ড.সাইফুল বড় সভা-সমাবেশে না গিয়ে নীরবে প্রচার চালাচ্ছেন।

এছাড়াও আলমগীর হোসাইন (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ),  ডা. এনামুল হক ইদ্রিছ (সিপিবি),  দিলোয়ার হোসাইন ভূঁইয়া (গণতন্ত্রী পার্টি),  মো. শওকত আলী (জাসদ) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ-৪: ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম নিয়ে গঠিত এ  আসনে ভোট কেন্দ্র ১৩৪। ভোটার ৩ লক্ষ ২০ হাজার ২৪৬। এ আসনে বরাবরই আওয়ামীলীগের জয়জয়কার। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের জ্যেষ্ঠ পুত্র রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক এ আসনে নৌকার হাল ধরেছেন। ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে এ আসনটিতে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হোন রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি পুনরায় এ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হোন।

অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি থেকে চেয়ার পারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনিও এ আসনের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। বিভিন্ন সময়ে দলবদলের কারণে তার জনপ্রিয়তায় কিছু ভাটা পরলেও এ আসনে নির্বাচনী লড়াই বেশ জমে উঠবে বলে মনে করেন সাধারণ ভোটাররা। নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় নিয়মিত সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র বাইরেও মোহাম্মদ আহসানুল্লাহ (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ),  খায়রুল ইসলাম ঠাকুর (বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ-৫: নিকলী-বাজিতপুর নিয়ে গঠিত এ  আসনে ভোট কেন্দ্র ৯৮। ভোটার ২ লক্ষ ৭৮ হাজার ৭০৮। এ আসনটিও বরাবরই আওয়ামীলীগের দখলে রয়েছে। কিন্তু এবার আওয়ামীলীগের বিপক্ষে বিএনপি প্রার্থীর অবস্থান স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিচ্ছে এ আসনটিতেও লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। এ আসনে নৌকা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন বর্তমান সাংসদ মো. আফজল হোসেন। যিনি পরপর দু’বার এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। কিন্তু দলীয় রোষানলে এবার তার ভোট ব্যাংকে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

অন্যদিকে বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ভোট যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন এ আসনের জনপ্রিয় ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল। যিনি প্রথমবারের মত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়ায়, এ আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নির্বাচনী লড়াই হবে সমানে সমান।

এছাড়াও এ আসনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন মো. ফরিদ আহাম্মদ (সিপিবি),  খন্দকার মোছলেহ উদ্দিন (বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি), মো. ইব্রাহীম (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), শাহ আলম (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি) ও সেলিনা হোসেন (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ)।

কিশোরগঞ্জ-৬: ভৈরব-কুলিয়ারচর নিয়ে গঠিত এ  আসনে ভোট কেন্দ্র ১৩৭। ভোটার ৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৬৫১। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এক সময় এ আসনে রাজত্ব করেছেন। তারপর বিগত ২০০৮ সন থেকে তার পুত্র নাজমুল হাসান পাপন এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি নৌকার প্রার্থী।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে মো. শরীফুল আলম ধানের এ আসনে অংশ নিচ্ছেন। বিগত সংসদ নির্বাচনেও তিনি তুমুল ভোটের লড়াই করেছেন। এলাকায় তিনি বেশ জনপ্রিয় একজন সাদামাটা ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। সাধারণ মানুষের সাথে সহজে মিশে যাওয়ার একটা প্রবণতা তার মাঝে থাকায় তিনিও বেশ জনপ্রিয় প্রার্থী এ আসনের।

এ আসনে মাঠে আরো রয়েছেন নূরুল কাদের সোহেল (জাতীয় পার্টি), মোহাম্মদ মুছা খান (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) ও মো. রুবেল হোসেন (ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ) ।

 

 

রাইজিংবিডি/কিশোরগঞ্জ/২৬ ডিসেম্বর ২০১৮/রুমন চক্রবর্তী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়