ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কুয়াশা শিকারি!

মো. রায়হান কবির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কুয়াশা শিকারি!

মো. রায়হান কবির :  কি শিরোনাম পড়ে দ্বিধায় পরে গেছেন? মৎস্য শিকারি শুনেছেন, পাখি শিকারি শুনেছেন এমনকি বাঘ বা প্রাণী শিকারিও শুনেছেন, কিন্তু কুয়াশা শিকারি, অসম্ভব!

কিন্তু হ্যাঁ, রীতিমতো জাল দিয়েই কুয়াশা শিকার করা হচ্ছে। বিশ্বাস না হওয়ারই কথা। প্রথম কথা হচ্ছে, ধোঁয়াচে টাইপ কুয়াশা কিভাবে বড় বড় ফোঁকরওয়ালা জাল দিয়ে শিকার করা হয়? এর দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, কি হবে এই কুয়াশা দিয়ে?

সব প্রশ্নের উত্তর একটাই ‘পানি’র জন্যেই এই অভিনব ব্যবস্থা। আমরা জন্মগতভাবে পানিবান্ধব বা নদীমাতৃক দেশে বেড়ে ওঠায় পানির কষ্ট বুঝিনা। পানির কষ্ট বলতে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ বা কয়েকদিন পানি সংকটকেই বুঝি।

কিন্তু বিশ্বজুড়ে এমন দেশ আছে যাদের সারাদিন চলতে হয় মাত্র কয়েক লিটার পানি দিয়ে। অথচ আপনি সকালের মুখ ধোয়াতেই ব্যবহার করেন কয়েক লিটার পানি। অথবা খাবারের পর শুধু হাত ধোয়াতেই চলে যায় কয়েক লিটার পানি এমন মানুষও আমাদের সমাজে অহরহ। তাই পানির আসল অভাব আমরা কখনই টের পাইনা।

যারা মরুনিবাসী একমাত্র তারাই বুঝে পানির কষ্ট কি! এক লিটার পানির জন্যে কত মাইল যে হাঁটতে হয় তা শুধু মরুবাসীই জানে। তাই সেসব অঞ্চলে পানির সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা হয় কুয়াশা। প্রথম এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় চিলিতে ১৯৫০ সালে। সেখানে দুই ভাইয়ের জালে একদিন কুয়াশা জমে বেশ কিছু পানির দেখা মেলে। এটা দেখে মার্কোস কারকুরো এবং তার ভাই চিন্তা করলেন কাকতালীয়ভাবে পাওয়া এই ধারণাকে প্রতিদিন কিভাবে ব্যবহার করা যায়। তারা মাছ ধরার জালকে এরপর থেকে ব্যবহার করলেন পানি ধরতে!

কুয়াশা মণ্ডিত এলাকায় তারা এই জাল ঝুলিয়ে পানি সংগ্রহের প্রথম আইডিয়া বের করেন। এরপর থেকে যেসব এলাকায় পানির সংকট এবং যেখানে ভারী কুয়াশার দেখা মেলে সেখানেই সবাই নেমে পরেন কুয়াশা শিকারে।

সম্প্রতি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে মরোক্কোর মরু অঞ্চলে। সেখানে একটি এনজিও তাদের প্রকল্প হিসেবে খাবার পানি এবং চাষের জন্যে ব্যবহারের জন্য জাল দিয়ে কুয়াশ ধরে পানি সংগ্রহ করছে। এবং তারা এই পানি বিক্রিও করছে। যদিও তা সরকারি পানির চেয়ে ২০% কম দামে।

নারী নেতৃত্বে পরিচালিত এনজিও দার সি হামদের পরিচালক ড. জামিলা বারগাচকে মরোক্কোর ওই এলাকায় ‘কুয়াশার রানী’ বা ফগ কুইন নামে ডাকা হয়। জামিলা জানান, ‘দেখুন পৃথিবীর ফ্রি বা বিনে পয়সায় পাওয়া যায় এমন সব কিছুর মূল্যই আমরা বুঝিনা। এমনকি সেটা যদি পানিও হয় না কেন? তাই আমরা এর মূল্য নিচ্ছি। তাছাড়া এই প্রকল্প দেখভাল বা মেইনটেনেন্সের জন্যেও খরচ দরকার।’ এভাবেই তার এনজিও মরু অঞ্চলে পানি সরবরাহ করছে।

এ পদ্ধতিতে ১৪০ স্কয়ার মিটারে গড়ে ৮৪০ লিটার পানি পাওয়া সম্ভব। তবে জামিলাদের প্রকল্পে প্রতি স্কয়ার মিটারে ২২ লিটার পানি পাওয়া সম্ভব। কারণ তারা আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন নতুন জাল ব্যবহার করেন।

আমাদের পার্বত্য অঞ্চলগুলোতেও কিন্তু প্রচুর পানি সংকট। বিশেষ করে খাগড়াছড়ির পাহাড় বা সদ্য জনপ্রিয় ‘সাজেক’ পর্যটন স্পটে বেশ পানি সংকট আছে। সেখানে কৃত্রিম উপায়ে পানি সংগ্রহ না করে, চাইলে এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে ভূগর্ভস্থ পানি মজুদ থাকবে যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়