ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

খুন হওয়ার ৫ বছর পর ফিরে এসে রিমান্ডে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫১, ৩১ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুন হওয়ার ৫ বছর পর ফিরে এসে রিমান্ডে

মামুন খান: শিশুটি হারিয়ে গেছে বলে প্রথমে জিডি, পরে অপরহরণ ও হত্যা মামলার পর গোয়েন্দারা আসামিদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে। এমনকি সেই আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কিভাবে তারা শিশুটিকে হত্যা করেছে তার বিবরণও দেয়। পাঁচ বছর সেই ‘নিহত’ শিশুটিই ধরা খেল পুলিশের কাছে।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু সাঈদ হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল একটি জিডি করা হয়। ওই জিডির প্রেক্ষিতে ওই বছরের ৭ জুলাই সাঈদকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগে এক নারীসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) । জিজ্ঞাসাবাদের পর দুই আসামি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে চারজন বলে, শিশুটিকে বরিশালগামী লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে।

কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর পর সেই আবু সাঈদকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার আবু সাঈদসহ চারজনকে প্রতারণা ও অর্থ আদায়ের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাজারীবাগ থানার এসআই লন্ডন চৌধুরী আসামিদের আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থণা করেন।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডে যাওয়া অপর তিন আসামি হলেন সেই শিশু আবু সাঈদের বাবা মোহাম্মদ আজম, মা মাহিনুর বেগম ও আব্দুল জব্বার।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে আবু সাঈদ অপহরণ না হওয়া সত্ত্বেও অপহরণের নাটক সাজায়। মামলাটি প্রথমে হাজারীবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করে। এরপর মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তে নেমে ডিবি পুলিশ বরিশালের হিজলা থেকে আফজাল, সাইফুল, সোনিয়াসহ ৪ জনকে আটক করে। রিমান্ডের পর আদালতে পাঠিয়ে আফজাল এবং সাইফুলকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়। সাঈদকে মেঘনা নদীতে ফেলে হত্যা করে লাশ গুম করেছে বলে আসামিরা জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।

আবেদনে আরো বলা হয়, আসামিরা সোনিয়ার সাথে যোগাযোগ করে বলে ১০ লাখ টাকা দিলে তারা তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ব্যবস্থা করবে। সোনিয়া বিষয়টি তার আত্মীয়-স্বজন এবং তার এলাকার বিহঙ্গ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন খোকনকে অবহিত করেন। নাসির উদ্দিনের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ৫ লাখ ৫ হাজার টাকা আসামিদের দেন। তারপরও মামলাটি প্রত্যাহার বা আবু সাঈদকে হাজির না করায় গত ২৯ আগষ্ট নাসির উদ্দিন আসামিদের বলে, আবু সাঈদকে নিয়ে আসলে তাদের আরো ২ লাখ টাকা দেবেন। তখন আসামিরা আবু সাঈদকে সঙ্গে নিয়ে নাসির উদ্দিনের  বাসায় যান। আসামিদের বসিয়ে রেখে আফজাল হোসেনের মাধ্যমে পল্লবী থানায় জিডি করা হয়। পরে আসামিদের আটক করে পল্লবী থানা হতে হারাজীবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।

অপহরণ ও খুনের নাটক সাজানোর সঙ্গে জড়িত সাত জনের বিরুদ্ধে শুক্রবার সোনিয়া আক্তার বাদী হয়ে মিথ্যা মামলা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মাসাতের অভিযোগে রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা করেন। তবে মামলায় তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশের কাউকেই আসামি করা হয়নি। এ মামলায় চার জন গ্রেপ্তার হলেও মূলহোতা সোনিয়া আক্তারের সাবেক স্বামী মিরাজসহ এখনও তিন আসামি পলাতক রয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লন্ডন চৌধুরী বলেন, তদন্তে নেমে ডিবি পুলিশ সোনিয়া আক্তার, তার ভাই আফজাল, ফুফাতো ভাই সাইফুল ও আরেক আত্মীয় শাহীন রাজিকে গ্রেপ্তার করে এবং এই মামলায় চার্জশীটও দেয়। ঘটনার ৫ বছর পর গত বৃহস্পতিবার পল্লবী থানা পুলিশ ওই মামলার ভিকটিম আবু সাঈদ ও তার বাবা মো. আজম, মা মাহিনুর বেগম ও ফুফা আব্দুল জব্বারকে আটক করে হাজারীবাগ থানায় হস্তান্তর করে।

সোনিয়া আক্তার বলেন, ২০১৪ সালে আসামি মিরাজ হোসেনের সঙ্গে আমার বিয়ের পর তার আগের আরেকটি বিয়ের কথা জানতে পেরে তালাক দেই। এতে মিরাজ ক্ষুব্ধ হয়ে ডিবি পুলিশ ও আবু সাঈদের বাবা আজমসহ অন্যদের দিয়ে এমন ভয়ঙ্কর অপহরণ ও খুনের নাটক সাজিয়েছে। এ মামলায় আমিসহ অন্যরাও দীর্ঘ প্রায় তিন বছর কারাভোগ করেছি। আমি এবং আমার ভাই ও অন্য স্বজনদের ডিবি অফিসে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা তাদের শিখিয়ে দেয়া স্বীকারোক্তি আদালতে দিতে বাধ্য হয়েছি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে করা অপহরণ করে হত্যা মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এ বিচারাধীন। মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ধার্য রয়েছে। আমি এ ব্যাপারে আদালতে জানাব, ‘খুন হওয়া’ সেই সাঈদকে পাওয়া গেছে। এছাড়া যারা নির্দোষ, তাদের এভাবে অত্যাচারেরও বিচার চাইবো।’


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১আগষ্ট ২০১৯/মামুন খান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়