গরু দেখতে দেখতেই পার হলো জুমাবার
ধোলাইখাল মাঠে আসা কোরবানির গরু
রুহুল আমিন : পশুভর্তি ট্রাক এসে পৌঁছাচ্ছে ১ নং কাউন্টারের সামনে। হাটের স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে সেই পশু। পশুর মধ্যে নব্বইভাগ গরু। রাত তখন পৌনে ১২টা বাজে। ব্যাপারীরা জানিয়েছেন সারা রাতই গরু আসবে।
বলছিলাম ধোলাইখাল মাঠে (সাদেক হোসেন খোকা মাঠ) আসা কোরবানির হাটের পশুর কথা। এই পর্যন্ত মোটামুটি অনেক পশু উঠেছে হাটে। ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে ব্যাপারী ও ডেইরি ফার্মের মালিকরা এখানে গরু নিয়ে আসছেন। তবে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন থাকা সত্বেও বেচাবিক্রি একেবারে ছিল না বলেই জানান ব্যাপারীরা।
পুরান ঢাকায় শুক্রবারকে স্থানীয়রা বলেন জুমাবার। বলা যায় গতকাল এই জুমাবারটি গরু দেখতে দেখতেই কাটিয়ে দিলেন তারা। এরমধ্যেই বুঝে নিলেন বাজারের রকম-সকমও। সে অনুযায়ী বাজেট নিয়ে ঈদের দু-একদিন আগে আবার ভিড় জমাবেন হাটে। বেশ কজনের কাছেই জানা গেল এমন কথা।
ধোলাইখাল হাটে আসা ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদিন মানুষের সমাগমও খুব বেশি ছিল না। যারাই এসেছেন তাদের সবাই আবার ক্রেতাও না। অনেকে আবার হাট ঘুরে দেখতে এসেছেন। এ সময় বেশ কয়েকজন নারীকেও দেখা যায় হাটে। ছিল শিশুদের উপস্থিতিও । বড়দের চেয়ে শিশুদের উপস্থিতিই যেন বেশি ছিল।
পাবনা থেকে ২৯টি গরু নিয়ে এসেছেন তৈয়ব আলী। কথা হয় তার সঙ্গে। তৈয়ব আলী জানান, বুধবার রাতে এসেছেন। ২৯টি গরুর সঙ্গে সাতজন লোক এসেছেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার সঙ্গে আলাপ হয়। তখন পর্যন্ত একটি গরুও তিনি বিক্রি করতে পারেননি।
গরু বিক্রি করতে না পারায় হতাশ কি না জানতে চাইলে তৈয়ব আলী একগাল হেসে বলেন, হতাশ হওয়ার কিছু নাই। এই হাটে গত পাঁচ বছর যাবত গরু নিয়ে আসছি। ঈদের দুই দিন আগ থেকে বেচা বিক্রি শুরু হয়। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদের আগের রাতে। এখন তো মানুষজন আসছে গরু দেখে দেখে চলে যাচ্ছে। আর যারা আসছে তারা সবাই গরু কেনার জন্যও আসেনি।
কথা বলার এক ফাঁকে দুই ব্যক্তি তৈয়ব আলীর কাছে এসে লাল ও কালো রঙের দুটি মাঝারি আকারের গরু দেখিয়ে দাম জিজ্ঞেস করল। তৈয়ব আলী দুই গরুর দাম এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা হাঁকলেন।৯০ হাজার টাকা বলে ওই দুই ব্যক্তি চলে যান।
তৈয়ব আলীর মতো মাদারীপুর থেকে আসা বিল্লাল হোসেন, ফরিপুর থেকে আসা আলমগীর ও কুষ্টিয়া থেকে আসা মজিবর রহমান জানান, হাটে এদিন তেমন বেচাবিক্রি হয়নি। এই তিন ব্যাপারীর ৭৯টি গরুর মধ্যে বিক্রি হয়েছে মাত্র পাঁচটি।
হাটে আসা ব্যাপারীদের গরুর চেয়ে ডেইরি ফার্মের গরু সাইজে বেশ বড়। বিশেষ করে ধোলাইখাল মাঠের ভেতরে অবস্থান নেওয়া মাশাল্লাহ ডেইরি ফার্মের গরুগুলো বেশ মোটা তাজা ও বড়।
হাটের ১ নং কাউন্টারের ডান পাশে ঠিক পেছনে দেখলাম মানুষের জটলা লেগেই আছে। কাছে গিয়ে দেখি একটি বেশ বড় আকারের গরু। আশপাশের কয়েকজনের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম হাটের সবচেয়ে বড় গরু এটা। তারা জানান, মালিক এই গরুর দাম হাকছেন সাত লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত চার লাখ টাকা দাম উঠেছে গরুটির।
ধোলাইখালের আশপাশ এলাকার মানুষজন ঈদের দুএকদিন আগেই পশু কিনে থাকেন। ক্রেতাবেশে পশু দেখতে হাটে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেল। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জিগলি ও বাসা-বাড়িতে পশু রাখার জায়গা তেমন একটা নেই। তাছাড়া খড়কুটো, ভুসি থেকে শুরু করে দেখভালেরও একটা ব্যাপার আছে। তাই তারা ঈদের দুএকদিন আগে গরু কিনে থাকেন।
সূত্রাপুরের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান জানান, তিনি তার ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে হাটে এসেছেন। তবে পশু কেনার জন্য হাটে আসবেন রোববার রাতে। কারণ পশু রাখার মতো ভাল জায়গা নেই।
হাটে আসা আফিয়া সুলতানা নামের এক মধ্যবয়সী নারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি স্বামী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে প্যারীদাস রোড থেকে হাটে এসেছেন। তবে আজ গরু কিনবেন না। দেখে চলে যাবেন।
হঠাৎ মুরগীটোলা মোড় থেকে রায় সাহেব বাজারের দিকে ১০/১২টি মোটরসাইকেলের একটি বহর দেখলাম। পরে জানা যায় হাট কর্তৃপক্ষের লোক তারা। নিরাপত্তা ও হাটে আসা গরু ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে তারা কাজ করছেন।
ঈদের আর বাকি মাত্র দুইদিন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গরু ব্যবসায়ীদের আশা, এই কয়দিন গরু বিক্রি না হলেও আগামী দুইদিন পশু বিক্রি পুরোদমে চলবে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬/রুহুল/টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন