ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

গৃহঋণের আবেদনে ধীর গতি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গৃহঋণের আবেদনে ধীর গতি

গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের ভর্তুকির রেকর্ড রাখা নিয়ে জটিলতার কারণে সরকারি চাকরিজীবীরা ঋণ নিতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

জানা গেছে, চাকরিজীবীদের বেশিরভাগই অনলাইনে বেতন বিল দাখিলের আওতায় না আসায় গৃহঋণের জন্য আবেদন করতে পারছেন না। এ কারণে গৃহঋণ বিতরণের যে সুযোগ সরকার দিয়েছে তা নেয়ার হার খুব ধীর গতিতে এগুচ্ছে। সাড়ে ১২ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর মধ্যে গত আট মাসে মাত্র ১৫০ জন গৃহঋণ নিতে পেরেছেন।

দেশে বর্তমানে সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিজীবী প্রায় ২৪ লাখ। এদের মধ্যে আপাতত সাড়ে ১২ লাখ চাকরিজীবী গৃহনির্মাণ ঋণ-সুবিধা পাবেন। গত ৩০ জুলাই গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে অর্থ বিভাগ।

নীতিমালা অনুযায়ী, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে এবং সর্বোচ্চ ৫৬ বছর বয়স পর্যন্ত গৃহঋণের জন্য আবেদন করা যাবে। বেতন স্কেলের গ্রেডভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা ঋণ নেয়া যাবে। ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে ওই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি চাকরিজীবী রাইজিংবিডিকে বলেন, সরকার যে ঋণ-সুবিধা দিয়েছে তা আমাদের মতো নিম্ন পদের চাকরিজীবীদের কোনো কাজে আসবে না। ঋণ-সুবিধা পেতে যেসব শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে তা অনেকের পক্ষেই পরিপালন করা সম্ভব হবে না।

জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে অনেক সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী গৃহঋণের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনো অনেকের বেতন-ভাতা ব্যবস্থা সনাতন পদ্ধতিতে থাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণের সুদের ভর্তুকি রেকর্ড রাখা সম্ভব হয় না। ফলে এসব চাকরিজীবীর গৃহঋণের আবেদন ফেরত পাঠাচ্ছে অর্থ বিভাগ। বলা হচ্ছে, তাদের বেতন-ভাতার রেকর্ড অনলাইনে থাকতে হবে।

সূত্র জানায়, বেতন ব্যবস্থা সনাতন পদ্ধতি থেকে ইলেক্ট্রনিক ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে রূপান্তরে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের আওতায় অর্থ মন্ত্রণালয় এবং মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনলাইন বেতন বিল দাখিলের আওতায় আনা হয়েছে। প্রায় ৪৭টি মন্ত্রণালয় এখনো ইএফটির আওতায় আসেনি। বিভাগীয় শহরগুলোতে কর্মকর্তাদের ইএফটির আওতায় আনা হলেও কর্মচারীরা এখনো ইএফটির আওতায় আসেনি।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব সরকারি চাকরিজীবীকে অনলাইনে বেতন বিল দাখিলের আওতায় আনতে কয়েক বছর সময় লাগবে। বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে না পারলে কেউ ঋণ নিতে আগ্রহী হবেন না। বেতন ব্যবস্থার অটোমেশন ছাড়া এ ঋণ পাওয়াও যাবে না।

সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিজীবীদের অনলাইনে বেতন বিল দাখিলের আওতায় আনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সময় চিঠি দেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ বিষয়ে তেমন সাড়া দিচ্ছে না। ফলে বেশিরভাগ চাররিজীবী গৃহঋণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন যেহেতু সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তাই বেতন-ভাতা অটোমেশন ব্যবস্থার আওতায় বাধ্যতামূলকভাবে আসতে হবে।  আশা করা যায়, প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় এখন নিজেদের আগ্রহে এ ব্যবস্থার আওতায় আসবে।

সরকার চলতি অর্থবছরে বাজেটে গৃহঋণের জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকা ঋণের সুদের ভর্তুকি দেয়া হয়েছে।

তবে অর্থ মন্ত্রণালয় ধারণা করছে, চলতি অর্থবছরে চাকরিজীবীরা এই পরিমাণ অর্থ ঋণ নেবেন না। গৃহঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ১০ শতাংশ। এর মধ্যে ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবে ঋণগ্রহীতা, বাকি ৫ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করবে। 


ঢাকা/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়