ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ঘটন-অঘটনের ১০ ম্যানচেস্টার ডার্বি

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘটন-অঘটনের ১০ ম্যানচেস্টার ডার্বি

সব সময় আমিই কেন? মারিও বালোতেল্লির সেই অদ্ভুত উদযাপন

আবু হোসেন পরাগ :  মাস দেড়েক আগেই ম্যানচেস্টার ডার্বিতে পেপ গার্দিওলা ও হোসে মরিনহোর দ্বৈরথ দেখা হয়ে যেত ফুটবলপ্রেমীদের। কিন্তু গত জুলাইয়ে বেইজিংয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ম্যানচেস্টার সিটির প্রীতি ম্যাচটি খারাপ আবহাওয়ার কারণে বাতিল হয়ে যায়।

দুই কোচের দ্বৈরথ দেখতে অবশ্য ফুটবলপ্রেমীদের আর বেশিক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। আজই দুই নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচে গার্দিওলা-মরিনহোকে ডাগআউটে দেখা যাবে। এবারের প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যানচেস্টার ডার্বির ম্যাচটি শুর হবে বাংলাদেশ সময় আজ বিকেল সাড়ে ৫টায়।

তার আগে চলুন ফিরে দেখে যাক প্রিমিয়ার লিগ যুগে ঘটনাবহুল ১০টি ম্যানচেস্টার ডার্বি।

১. ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম, সিটির জালে ইউনাইটেডের পাঁচ গোল
সেবার লিগের শিরোপা নিষ্পত্তি হয়েছিল একবারে শেষ দিনে। অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট বেশি নিয়ে শিরোপা জিতেছিল ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। শিরোপা জিততে না পারলেও ‘রেড ডেভিল’ সমর্থকরা নিজেদের সবচেয়ে বড় ডার্বি জয় দেখেছিল সেবারই। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সিটিকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ইউনাইটেড। হ্যাটট্রিক করেছিলেন আন্দ্রেই ক্যানসেলেস্কি। এরিক ক্যান্তোনা ও মার্ক হিউজ করেছিলেন একটি করে গোল।

২. ২০০০-০১ মৌসুম, রয় কেনের মারাত্মক ট্যাকল এবং লাল কার্ড
ইউনাইটেডের মাঠে খেলতে গিয়েছিল সিটি। ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। কিন্তু ম্যাচের ফল ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার রয় কেনের মারাত্মক এক ট্যাকল। বল দখলের সময় তিনি আঘাত করে বসেন সিটির ডিফেন্ডার হাল্যান্ডের হাঁটুতে। লাল কার্ড দেখেন কেন। তাকে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ এবং ৫ হাজার পাউন্ড জরিমানাও করা হয়। সেখানেই শেষ নয়। পরে তাকে আরো পাঁচ ম্যাচ নিষিদ্ধ ও এক লাখ ৫০ হাজার ইউরো জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে হাঁটুর ওই চোট হাল্যান্ডের ক্যারিয়ারই শেষ করে দিয়েছিল! হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করলেও মাত্র চারটি ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে খেলার সুযোগ হয়েছিল তার। ২০০৩ সালে ফুটবলকেই বিদায় জানিয়ে দেন।

৩. ২০০২-০৩ মৌসুম, মেইন রোডে শেষ ডার্বি, শন গোটের গোলের সেঞ্চুরি
ম্যানচেস্টার সিটির আগের মাঠ মেইন রোড স্টেডিয়ামে শেষ প্রিমিয়ার লিগ ডার্বি। ম্যাচটি ৩-১ গোলের জয় দিয়ে রাঙিয়ে রাখে সিটি। ইউনাইটেডের বিপক্ষে সেদিন ১৩ বছরের জয়-খরাও কাটে তাদের। জোড়া গোল করেছিলেন সিটির ফরোয়ার্ড শন গোটার। দ্বিতীয় গোলটি ছিল সিটির জার্সিতে তার শততম গোল।

৪. ২০০৩-০৪ মৌসুম, ইউনাইটেডের জালে সিটির চার গোল
নিজেদের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ইউনাইটেডকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল সিটি। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, রায়ান গিগসরা মিলেও সেদিন ইউনাইটেডের বড় পরাজয় ঠেকাতে পারেননি। সিটির পক্ষে একটি করে গোল করেছিলেন রব ফলার, জন ম্যাকেন, ট্রেভর সিনক্লিয়ার ও শন রাইট-ফিলিপস।

৫. ২০০৭-০৮ মৌসুম, স্মৃতিতে মিউনিখ ট্র্যাজেডি
১৯৫৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখে এক বিমান দুর্ঘটনায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আটজন খেলোয়াড়সহ নিহত হন ২৩ জন। দিনটি তাই ইংল্যান্ডের ফুটবল ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। ডার্বির ম্যাচটি ছিল ১০ ফেব্রুয়ারি। ম্যাচ শুরুর আগে দুই দলের খেলোয়াড়রা মিউনিখে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানান। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে স্বাগতিকদের সেদিন ২-১ গোলে হারিয়েছিল সিটি।

৬. ২০০৯-১০ মৌসুম, মাইকেল ওয়েনের গোলে ইউনাইটেডের নাটকীয় জয়
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সেদিন ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই ওয়েইন রুনির গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইউনাইটেড। কিন্তু ১৬ মিনিটে গোল করে সিটিকে সমতায় ফেরান গ্যারেথ বেরি। বিরতির পর ৪৯ মিনিটে ড্যারেন ফ্লেচার আবার এগিয়ে দেন স্বাগতিকদের। ৩ মিনিট পর ক্রেইগ বেলামির গোলে ম্যাচে ফেরে সিটি (২-২)। ৮০ মিনিটে ফ্লেচার আবার গোল করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষ মিনিটে বেলামি সিটিকে সমতায় ফেরান নিজের দ্বিতীয় গোল করে। ইউনাইটেড তিন-তিনবার এগিয়েও ৯০ মিনিট পর স্কোরলাইন ৩-৩। অতিরিক্ত সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে গোল করে স্বাগতিকদের নাটকীয় জয় উপহার দেন ওই মৌসুমেই নিউক্যাসল থেকে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নাম লেখানো মাইকেল ওয়েন। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে এটা তার প্রথম গোল।

৭. ২০১০-১১ মৌসুম, ওয়েইন রুনির অসাধারণ ওভারহেড কিক গোল
নিজেদের মাঠে ম্যাচের ৪১ মিনিটে নানির গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইউনাইটেড। প্রথমার্ধে ১-০ গোলের লিড ধরেও রেখেছিল তারা। কিন্তু বিরতির পর ৬৫ মিনিটে গোল করে সিটিকে সমতায় ফেরান ডেভিড সিলভা। আর ৭৮ মিনিটে ওভারহেড কিকে চোখ ধাঁধানো এক গোল করে স্বাগতিকদের ২-১ গোলের জয় এনে দেন রুনি।

৮. ২০১১-১৩ মৌসুম, হোয়াই অলওয়েজ মি?
৬-১ গোলের হার যেকোনো দলের জন্যই লজ্জার। সেই হারটি নিজেদের মাঠে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে হলে তো কথাই নেই। ২০১১ সালে যেটি হয়েছিল ইউনাইটেডের। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ইউনাইটেডকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল সিটি। ফলের পাশাপাশি ম্যাচটি সবাই মনে রাখবে অন্য কারণে। মনে রাখবে মারিও বালোতেল্লির অদ্ভুত উদযাপনের কারণে। সিটির ইতালিয়ান স্ট্রাইকার গোল করার পরই জার্সিটা টেনে বুকের ওপরে তুললেন। নিচের জামায় একটা লেখা ফুটে উঠল- ‘হোয়াই অলওয়েজ মি।’? সব সময় তাকে নিয়ে বিতর্কিত খবর বেরোনো কারণেই হয়তো বালোতেল্লি সেদিন ফুটবল বিশ্বের সামনে এমন প্রশ্ন রেখেছিলেন- সব সময় আমিই কেন?।

৯. ২০১২-১৩ মৌসুম, ফন পার্সির শেষ মুহূর্তের গোলে ইউনাইটেডের জয়
ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথমার্ধেই রুনির জোড়া গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল ইউনাইটেড। তবে বিরতির পর দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে সিটি। ৬০ মিনিটে ইয়াইয়া তোরে ব্যবধান কমান। আর নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হওয়ার চার মিনিট আগে পাবলো জাবালেতার গোলে সমতায় ফেরায় স্বাগতিকরা। দুই গোলে এগিয়ে থাকা ম্যাচে কি তাহলে ড্র নিয়ে ফিরবে ইউনাইটেড? না, ইউনাইটেডের আছেন যে রবিন ফন পার্সি। যোগ করা সময়ে ডাচ ফরোয়ার্ডের দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিক গোলই সেদিন অতিথিদের দারুণ এক জয়ে এনে দিয়েছিল।

১০. ২০১৫-১৬ মৌসুম, রাশফোর্ডের চমক, রাশফোর্ডের রেকর্ড
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে অভিষেকেই জোড়া গোল করে সবার নজর কেড়েছিলেন। মার্কাস রাশফোর্ড চমক দেখালেন নিজের প্রথম ম্যানচেস্টার ডার্বিতেও। গত মার্চে ১৮ বছর বয়সি এই তরুণের একমাত্র গোলেই ইতিহাদ স্টেডিয়াম থেকে জয় নিয়ে ফেরে ইউনাইটেড। প্রিমিয়ার লিগ যুগে ম্যানচেস্টার ডার্বিতে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা তিনিই (১৮ বছর ১৪১ দিন)।

তথ্যসূত্র: ডেইলি মেইল, বিবিসি, গোল ডটকম।  

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬/আবু হোসেন পরাগ/আমিনুল 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়