ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে কন্টেনার ভর্তি বালুর বস্তা!

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে কন্টেনার ভর্তি বালুর বস্তা!

চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সময় পণ্য আমদানির আড়ালে বারবার আসছে বালুর বস্তা।

এক সপ্তাহের মাথায় আবারো চীন থেকে ৪০ ফুট লম্বা কনটেইনার ভর্তি বালুর বস্তা এসেছে। অথচ এসব কন্টেনারে ৪৯ হাজার ৬৯৭ ডলারের সুতা আসার ঘোষণা ছিল। বন্দরের সিসিটি ইয়ার্ডে কনটেইনার পরীক্ষায় এসব বালুর বস্তা পাওয়া গেছে।

এর আগে ২৭ জানুয়ারী চীন থেকে সাড়ে ২৩ হাজার কেজি সুতা আমদানির পরিবর্তে কনটেইনার খুলে পাওয়া যায় বালুর বস্তা। এছাড়া ইট, পাথর, বালু বা মাটিভর্তি কনটেইনার আসার ঘটনাও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে খালি কনটেইনারও আসছে।

এছাড়া বেশি কিংবা কম মূল্য দেখিয়ে (আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিং) আমদানি-রপ্তানির ঘটনাও ঘটছে। ধারণা করা হচ্ছে বিদেশে অর্থ পাচারের উদ্যেশ্যে এসব ভূয়া পণ্য আসছে।

এ বিষয়ে জানতে চট্রগ্রাম বন্দর কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলমকে মুঠোফোনে কল দিলেও জবাব পাওয়া যায়নি।

তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, অনিয়ম প্রতিরোধ করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা আমাদের এই মহান দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি। সম্প্রতি বেশ কিছু এমন ভূয়া চালান আটক করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের এই কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।

সোমবার চীন থেকে আমদানি করা ৪৯ হাজার ৬৯৭ ডলারের সুতার বদলে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে ৪০ ফুট লম্বা কনটেইনার ভর্তি বালুর বস্তা। বন্দরের সিসিটি ইয়ার্ডে কনটেইনার পরীক্ষায় এসব বালুর বস্তা পাওয়া গেছে। বিষয়টি অর্থপাচার, চোরাচালান নাকি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ভুল বা প্রতারণা তা খতিয়ে দেখছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসব বালুর নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্টে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার নুর এ হাসনা সানজিদা অনুসুয়া জানান, সোহারা ফ্যাশনের নামে একটি প্রতিষ্ঠান পলিয়েস্টার সুতা ঘোষণা দিয়ে এ কনটেইনার আমদানি করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালানটি কাস্টম হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) টিম সোমবার পরীক্ষা করে। পরে সুতার পরিবর্তে বস্তা ভর্তি বালি পাওয়া যায়।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারী চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা দুইটি কনটেইনারে এসেছে আড়াইশ কেজি কপার ওয়েস্ট অ্যান্ড স্ক্যাপ বা তামার তার। আসার কথা ছিলো ৪২ টন। বন্দরের সিসিটি ইয়ার্ডে ঐ দিন সকালে একটি ও বিকেলে একটি কনটেইনার খোলার পর চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ধরা পড়ে। চালানগুলোর বিষয়ে আগেই গোপন সংবাদ ছিলো গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে।

কাস্টম কর্মকর্তারা বলেন, চট্টগ্রামের মেহেদিবাগের আমিরবাগ এলাকার ওয়েন্স মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের দুইটি কনটেইনার খোলার পর পাওয়া গেছে মাত্র আড়াইশ কেজি তামার তার। চালানটি খালাসের দায়িত্বে ছিলো চট্টগ্রামের চৌমুহনীর জাহান চেম্বারের মাল্টি ভিউ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। জেটি কাস্টমসের কর্মকর্তারা চালানটি খালাস পর্যায়ে পরীক্ষার সময় একটি কনটেইনারে মাত্র ১২৫ কেজি, অপরটিতে ১২৭ কেজি ঘোষিত পণ্য পেয়েছে। এটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণাও হতে পারে।

গত ২৭ জানুয়ারী চীন থেকে আসা কনটেইনারের বালুর বস্তা পেয়ে কাস্টমসের সন্দেহ হয় এতে বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার মেসার্স সোয়ারা ফ্যাশন সুতা আমদানির ঘোষণা দিয়ে বালু নিয়ে আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। এটি ছাড়ের দায়িত্বে ছিল চট্টগ্রামের বন্দরের ফকিরহাট এলাকায় তানসা ওভারসিস।

শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় এমন জালিয়াতির ধরা পড়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের হাতে। বিষয়টি আরো তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয় কাস্টমস।

সুতা আমদানির ঘোষণা দিয়ে আনা চালানের এক কনটেইনার বালু পেয়েছে কাস্টমসের কর্মকর্তারা। ঘোষণা করা চালানে সন্দেহ থাকায় পণ্যটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় এমন প্রতারণার সন্ধান পায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর ) শাখার কর্মকর্তারা।

২৫ হাজার ৫০৫ ডলার দিয়ে চায়না থেকে ২৩ হাজার ৪০ কেজি সুতা আমদানি করার কথা ছিল। কিন্তু আমদানিকারক সেটি না করে এনেছেন বালুর চালান। এতে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২২ লাখ টাকা চায়নাতে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করছেন কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিল অফ এন্ট্রি থেকে জানা যায়, গত ২২ জানুয়ারি কাস্টমস হাউসে বিল অব এন্ট্রি (সি নম্বর ১৪৩১৪২) দাখিল করা হয়। এ চালানের মাত্র ২৫ হাজার ৫০৫ ডলার ব্যয়ে ২৩ টন সুতা (কটন ও পলিস্টার ইয়ার্ন) আমদানির ঘোষণা দেয় আমদানিকারক নারায়ণগঞ্জের ফাতুল্লা এলাকার মেসার্স সোয়ারা ফ্যাশন।

ওই চালান ছাড়ের জন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে চট্টগ্রামের বন্দরের ফকিরহাটের সিএন্ডএফ তানসা ওভারসিস। চালানটি চায়নার জিংতাই ইয়ামজি টেক্সটাইল কোম্পানি থেকে আমদানি করে। এগুলো ‘এমভি মার্কস বিনতুলো’ জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। আমদানিকারক কোম্পানি এক্সিম ব্যাংক লিমিটেডের ১৯৬৪ শাখা থেকে ৪১৯০১০৫৪৩ নম্বর এলসি করেন। ওই চালান নিয়ে জাহাজ ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর সন্দেহ থাকায় ওই চালান কাস্টমসের বিশেষায়িত সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে ‘লক’ করে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় কাস্টমস অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখাকে।


ঢাকা/এম এ রহমান/নাসিম 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়