ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

চা বাগানে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে যে স্কুল

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চা বাগানে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে যে স্কুল

তাহের-শামছুন্নাহার উচ্চ বিদ্যালয়

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : তাহের-শামছুন্নাহার উচ্চ বিদ্যালয়। সাত বাগানের চা শ্রমিকদের ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে এই স্কুল।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড় বেষ্টিত দেওরগাছ ইউনিয়নে চান্দপুর চা-বাগান। এ বাগানের প্রবেশপথে চান্দপুর বাজার। এ বাজারের পাশ দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়ক। এরমধ্যে তাকালেই দুই পাশে চা-বাগান। এক পাশে শ্রমিকদের বসতি। এর মাঝখানে বিদ্যাপীঠটির অবস্থান। এখানে শিক্ষাগ্রহণ করছে চা শ্রমিকদের সন্তানরা।

চন্ডিছড়া, বেগমখান, লস্করপুর, সাতছড়ি, রামগঙ্গা, কুটিয়াল, কাপাই- সাতটি চা বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য এই একটিই মাত্র স্কুল। এক সময় বিদ্যাপীঠের অভাবে চা-শ্রমিক সন্তানরা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে ঝরে যেত। আবার অনেক সন্তানরা স্কুলেই আসা ভুলে গিয়েছিল। এখানের চা-শ্রমিকদের সে আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিয়েছে তাহের-শামছুন্নাহার উচ্চ বিদ্যালয়।

প্রায় আড়াই একর জমির উপর ২০১২ সালে স্থাপিত স্কুলটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৩০। ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাশ চালু করা হয়েছে। দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষকদের কঠোর শ্রমে চলছে পাঠদান। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে এসে পাঠ গ্রহণ  করছেন। ভাল রেজাল্ট হওয়ায় অচিরেই ১০ম শ্রেণিও চালু হচ্ছে বলে জানালেন কর্তৃপক্ষ।

চা-শ্রমিকদের সন্তানরা ছাড়াও কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা বাগানের পাশের বস্তি এলাকার।স্কুলটিতে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। শত অভাব অনটনের মধ্যেও শ্রমিক সন্তানরা নির্ধারিত পোষাক পরে স্কুলে আসছে। তারা সুশিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদেরকে আলোকিত করে তুলছে।

স্কুলটি পরিদর্শনকালে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী চা-শ্রমিক কন্যা মনি মুন্ডা বলেন, ‘মা বাগানে চাকরি করে দৈনিক ৮৫ টাকা বেতন পান। এ টাকায় সংসার চালানো কঠিন। এরমধ্যে লেখাপড়া কঠিন ছিল আমার পক্ষে। তবে বাগানের মধ্যে স্কুলটি হওয়ায় লেখাপড়া করতে পারছি। এখানে লেখাপড়া করতে তেমন কোন খরচ করতে হচ্ছে না। স্যার-ম্যাডামরা নিয়মিত পাঠ নেওয়ায় প্রাইভেট পড়তে হয় না।’

এ শিক্ষার্থীর দাবী, স্কুলটি যেন অচিরেই সরকারী করা হয়। এখানে কলেজ চালু করা হলে আর বাইরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে না। মনির সহপাঠি রুপালী বাউতিয়া, রিপা সাধুরা এ দাবী-ই জানালেন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহিম বলেন, ‘স্কুলটি চালু হওয়ায় চা-শ্রমিক সন্তানদের লেখাপড়ার সুব্যবস্থা হয়েছে। লেখাপড়া থেকে তাদের আর ঝরে পড়তে হবে না।’

তিনি বলেন, ‘স্কুলের মধ্যে অচিরেই কম্পিউটার ল্যাব চালু করতে চাই। তাহলে শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তিতেও নিজেদের এগিয়ে নিতে পারবে।’

স্কুল শিক্ষক জালাল হোসেন, শিক্ষিকা ফারজানা আক্তার সুমী, শিক্ষিকা ঝর্ণা রাণী শীল জানালেন, স্কুলে আসবাবপত্রের তেমন কোন সংকট নেই। নেই বিশুদ্ধ পানির সংকট। রয়েছে খেলার মাঠ। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নেই কোন চিন্তা।  বাগানের প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে শিক্ষার্থীরা স্কুলে নিয়মিত এসে লেখাপড়া করছে। যার ফলে আসছে ভাল রেজাল্ট। শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে শৃঙ্খলা। তারা রাতে বাড়িতে লেখাপড়া করছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মেধাবী।

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের ও তার স্ত্রী দেওরগাছ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামছুন্নাহার বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নত হতে পারে না। তাই এসব দিক চিন্তা করে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছি। বিশেষ করে এ স্কুল চালু হওয়ায় বাগানের  চা-শ্রমিক সন্তানদের জন্য নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে।’



রাইজিংবিডি/ হবিগঞ্জ/২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬/মামুন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়