ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘চারপাশে সবাই এত সন্তুষ্ট, শুধু আমিই সুখী না’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১১, ৭ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৯:১৩, ৭ এপ্রিল ২০২১
‘চারপাশে সবাই এত সন্তুষ্ট, শুধু আমিই সুখী না’

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহরে ফারহান তৌহিদ ও তার ভাই ফারবিন তৌহিদ পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করেছেন। তারাও বেছে নিয়েছেন আত্মহননের পথ। মানসিক বিষণ্নতায় ভুগছিলেন ওই দুই সহোদর। হত্যাকাণ্ডের আগে ফারহান তৌহিদ ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ ‘সুইসাইড নোট’ পোস্ট করেছেন। বিষণ্নতা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা এই নোটে ফুটে উঠেছে। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য সেই ‘সুইসাইড নোট’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।বিশাল সেই নোটের তৃতীয় পর্ব এখানে।

(ফারহানের নোটের শিরোনাম ছিল—পরিবারের সবাইকে হত্যার পর আমি আত্মহত্যা করলাম)

মানুষ এটা কীভাবে করে সেই বিষয়টি আমার জীবনের সঙ্গে কখনোই তুলনা করতে পারিনি।  ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনারা লেকচার শুনে কাটাতে পারবেন, হোমওয়ার্ক করতে পারবেন এবং অন্তত চার বছর পড়াশোনা করতে পারবেন যাতে চাকরি এবং টাকা কামাতে পারেন। জীবনের এক তৃতীয়াংশ ওই কাজের পরিকল্পনা  করেন, এক তৃতীয়াংশ ঘুমাতে এবং বাকিটা কী করেন তা ঈশ্বরই জানেন।  আপনারা কী করে এগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট। এসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আপনারা কখনো বিরক্ত কিংবা হতাশ হননি? আপনাদের কাছে মনে হয়নি যে আপনারা সময়ের অপচয় করছেন?

এটা ন্যায্য নয়। আমি সবকিছু ঠিকঠাক করেছি, প্রত্যেকটি জিনিস ঠিক ছিল এবং আমি এখনও উদাসীন (নিস্পৃহ)।  প্রত্যেকেই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে পারে এবং অস্তিত্ত্বের সংকটে টিকে থাকা ছাড়া আগামীকাল আমি কি করবো তা নিয়েও আমি ভাবতে পারি না। এটা ন্যায্য নয় যে, যেখানে আমি সুখই অনুভব করতে পারি না, সেখানে কী করে সবাই এতটা সন্তুষ্ট হয়।  যা হোক, স্রেফ আমি সুখী হতে পারি না।

আমার ভেতরে নরক গুলজার হচ্ছিল। আমি ক্লাসে খারাপ করতে শুরু করলাম এবং প্রথম সেমিস্টার শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই আমি প্রথম ভেঙে  পড়লাম। আমি শুধু কাঁদতাম, নিজে নিজে হাসতাম এবং ঘণ্টায় ঘণ্টায় দেয়ালে ঘুষি মেরে নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলতাম। অন্য সময়ের তুলনায় এটা খুব খারাপ ছিল না।

এই সময়ে আমার দুই রুমমেট জানতো যে আমি চরম বিষণ্নতায় ভুগছি। মানে, যদি ওরা সেটা না জানতো তাহলে সেটা হয়তো বাজে কিছু হতো।  আমার এক রুমমেট এমন ভাব দেখাতো যে, আমি একটা ভাঁড়।  সে দেখাতো তারও বিষণ্নতা আছে। তবে এর জন্য আমাকে ওষুধ খেতে হবে কিন্তু তার খেতে হবে না।  এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, তার ইচ্ছাশক্তি আছে। আমার ধারণা, একভাবে সে সঠিক ছিল?

আমার দ্বিতীয় পয়েন্ট শুরু একটি প্রশ্ন দিয়ে, প্রধানত তাদের প্রতি যারা নিজেদের বিষণ্ন ভাবে : কেন? ১০ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আপনার সম্পর্ক ভেঙে গেছে? আপনার পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা খারাপ হয়েছে? এখানে আমি শপথ করে বলছি, আপনি নিজেকে বিষণ্ন বলে দাবি করতে পারেন যদি আপনি ‘কান্নার চেষ্টা করো না’ দেখার পর যদি আপনি একফোটা চোখের জল ফেলেন।  সিনিয়র বর্ষের একটি ঘটনা মনে পড়ছে। যখন স্কুলে গেলাম তখন আমরা এক বন্ধু বলেছিল, ‘আমি আত্মহত্যা করতে যাাচ্ছি।’ কারণ ওই দিন তাদের পদার্থবিজ্ঞানের পরীক্ষা ছিল। সেরা অংশটি হচ্ছে, তারা জানতো আমার বিষণ্নতা আছে। সত্যিকারের বিষণ্নতা।

পড়ুন: সুইসাইড নোট (১)

         সুইসাইড নোট (২)

ঢাকা/শাহেদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ