ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জিসানের বিরুদ্ধে দুই পুলিশ হত‌্যার বিচার শেষই হচ্ছে না

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০১, ৪ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জিসানের বিরুদ্ধে দুই পুলিশ হত‌্যার বিচার শেষই হচ্ছে না

শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর নুরুল আলম শিকদার এবং এসআই আলমগীর হোসেন হত্যা মামলার বিচারকাজ ১৬ বছরেও শেষ হয়নি। ২০০৩ সালের ১৫ মে রাতে রাজধানীর মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে পুলিশের এ দুই কর্মকর্তা শীর্ষসন্ত্রাসী জিসানের সন্ত্রাসীদের অতর্কিত গুলিতে নিহত হয়েছিলেন।

ওই ঘটনায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের বিরুদ্ধে ডিবির তৎকালীন ইন্সপেক্টর জিএম এনামুল হক মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটিতে ২০০৪ সালে চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে ৭৫ জনকে সাক্ষী করা হয়। ২০০৭ সালে ৭ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। চার্জগঠনের পর ১২ বছরে মাত্র ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলাটির বিচার কবে শেষ হবে সে বিষয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মাকছুদা পারভীনের আদালতে বিচারাধীন।

মামলা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু জানান, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। সাক্ষী আদালতে আসছে না। সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু পুলিশ সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না। মামলার ধীরগতির জন্য পুলিশকে দায়ী করে তিনি বলেন, দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করা নিঃসন্দেহে অনেক বড় ঘটনা। এটি খোদ দুই পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলা। আদালত থেকে সাক্ষীদের প্রতি সমন ও ওয়ারেন্ট পাঠানো হয়। তারপরও পুলিশ তা তামিল করছে না। পুলিশ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করলে মামলাটির বিচার অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত।

দুই পুলিশ হত্যা মামলার এজাহারে ডিবির তৎকালীন ইন্সপেক্টর জিএম এনামুল হক বলেন, ২০০৩ সালের ১৫ মে পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, সন্ত্রাসীরা মালিবাগের একটি হোটেলে অবস্থানরত ব্যবসায়ীদের অর্থ ও মুল্যবান দ্রব্য লুণ্ঠন করবে। পরে পুলিশ হোটেলের ১৩ ও ১৪ নম্বর কক্ষ ভাড়া নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন সন্ত্রাসীদের জন্য। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হঠাৎ হোটেলের দ্বিতীয় তলায় গোলাগুলি শুরু হয়। ৭-৮ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গুলি করতে করতে নিচে নামতে থাকে। ডিবি সদস্যরাও সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি করতে থাকে। গোলাগুলির এক পর্যায়ে এক সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিচে পড়ে যায়। অন্য সন্ত্রাসীরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। ডিবি সদস্যরাও তাদের পিছু নিয়ে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগোতে থাকে। কিন্তু কিছুটা সামনেই রামপুরার ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় ডিবি সদস্যরা গুলি বন্ধ করতে বাধ্য হন। পরে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসীদের মধ্যে নয়াটোলার জিসান, মগবাজারের উপল ও এজিবি কলোনির ইখতিয়ার ছিল। পরে পুলিশ সদস্যরা হোটেলে গিয়ে ১৪ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখেন, ইন্সপেক্টর নুরুল আলম ও এসআই আলমগীর হোসেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

মামলাটি তদন্ত করে ২০০৪ সালের ২ নভেম্বর ডিবির তৎকালীন ইন্সপেক্টর নূর মোহাম্মদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন জিসান আহমেদ জিসান, তার ভাই শামীম আহমেদ, ইখতিয়ারুল কবির, আরিফুল ইসলাম ওরফে এমরান, স্বপন ওরফে নাসির উদ্দিন, মেহেবুব চৌধুরী শান্ত ওরফে রুদ্র, জসিম উদ্দিন জাসু এবং বাশার ওরফে জামাই বাশার। ৮ আসামির মধ্যে প্রথম চারজন পলাতক রয়েছেন। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় কারাগারে থাকা অপর ৪ জন আসামি জামিনে আছেন।

এদিকে মামলা তদন্ত চলাকালে গ্রেপ্তার মো. বেলাল হোসেন, হাবিবুর রহমান, আব্দুল আলীম শাহীন, মোশারফ হোসেন সিদ্দিকী ওরফে রতন, সাইদুর রহমান বাচ্চু, ইশতিয়াক আহমেদ জিতু, স্বপন ওরফে শাহজাহান, খাজা মোহাম্মাদ, কামরুল হাসান ওরফে শোভন ওরফে তসলিম, শফিকুল ইসলাম, সুরুজ মিয়া, শাহজাহান রুবেল, পিয়ার আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিটে তাদের অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তিন বছর পর ২০০৭ সালের ২৭ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন।

আসামি নাসির উদ্দিনের আইনজীবী মো. শাহাজাহান খান জানান, ‘আমার আসামি ঘটনার সাথে জড়িত না। আসামি শান্ত ওরফে রুদ্র তার জবানবন্দিতে পুরান ঢাকার স্বপন নামে একজনের নাম বলেন। পুলিশ স্বপন নামে একজনকে গ্রেপ্তারও করেছিল। পরে চার্জশিটে সেই স্বপনকে অব্যাহতি দিয়ে তার আসামি নাসির উদ্দিনের নামের সঙ্গে স্বপন নাম যুক্ত করে তাকে আসামি বানিয়ে দিয়েছেন। সাক্ষী না আসায় মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে না। আর বিচার শেষ না হওয়ায় স্বপনকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারছি না।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ, তার নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিসও ছিল।


ঢাকা/মামুন খান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়