ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

তাসলিমার চোখে এখন পুরো পৃথিবীটাই অন্ধকার

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
তাসলিমার চোখে এখন পুরো পৃথিবীটাই অন্ধকার

‘‌স্বামী ক্যান্সারে মইরা গেল, ঝড়ে ভাইঙ্গা গেল মাথা গুঁজার ঠাঁই। সাথে অহন ছেলে মেয়ের স্কুল যাওন বন্ধ। স্বামীর চিকিৎসা করাইতে গিয়ে যা ছিল সব শ্যাষ।'

বলছিলেন পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচার যুদ্ধে লড়তে থাকা কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের মাঝবাড়ী গ্রামের তাসলিমা বেগম।

স্বামী দরিদ্র ফেরিওয়ালা বাদশা শেখ দীর্ঘ প্রায় এক বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে গত ৭ জুন না ফেরার দেশে চলে যান। স্ত্রী তাসলিমার চোখে এখন পুরো পৃথিবীটাই অন্ধকার।

গত বছরের মে মাসে ছোট ছোট টিউমারে ভরে যায় স্বামী বাদশার গোটা শরীর। দিশেহারা তাসলিমা তখন ফকির-কবিরাজ থেকে শুরু করে স্বামীকে নিয়ে ছুটতে থাকেন এ ডাক্তার সে ডাক্তারের কাছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জণক্ষম ব্যক্তির এই অবস্থায় বাড়তে থাকে ধার দেনা। এমনকি সংসারের অবলম্বন একমাত্র গরুটিও বিক্রি করে দেন স্বামীর চিকিৎসা করতে। গত ডিসেম্বরে গোপালগঞ্জের চিকিৎসকেরা জানান বাদশা শেখ মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। কিভাবে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাবেন? মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তাসলিমার।

ছোট মেয়ে তখন মাঝবাড়ী হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী । সামনে বার্ষিক পরিক্ষা। স্বামীর চিকিৎসার জন্য মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে ঢাকায় কাছের এক আত্মীয়ের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে পাঠিয়ে দেন। বাড়ির জায়গা বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে ঢাকায় ছোটেন স্বামীর চিকিৎসা করাতে।

স্বামীকে ভর্তি করান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। ঢাকায় নিজেও বিভিন্ন বাসায় শুরু করেন গৃহপরিচারিকা কাজ। আশায় বুক বাঁধেন সুস্থ হয়ে উঠবেন প্রিয় স্বামী। কিন্তু দিন যতই যায় ততই খারাপের দিকে যেতে থাকে। অর্থের সাথে কুলিয়ে উঠতে না পেরে গত ২৯ মে স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাসলিমা।

বাড়িতে এসে দেখেন ভাঙ্গা ঘরটি ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ঝড়-বৃষ্টির সাথে কোনভাবে বসবাস শুরু করেন।  ৭ জুন মারা যান বাদশা শেখ। ছোট ৩ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে কিভাবে চলবে সংসার, আর কিভাবেই বা ঠিক করবেন মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই ঘরটুকু। কিভাবে পরিবারের দু'মুঠো খাবারের সংস্থান হবে- এসব ভেবে এখন দিশেহারা তাসলিমা।

তার আক্ষেপ- ছেলে মেয়েদেরও আর স্কুলে যাওয়া হবেনা। তাসলিমা বলেন, ‘‌যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সমাজের বিত্তবানরা একটু দৃষ্টি দেন তাহলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে অন্তত একটু বাঁচার পথ খুঁজে পাইতাম।'

এ অবস্থায় দিশেহারা তাসলিমা বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় ‘‌জ্ঞানের আলো পাঠাগার' নামে একটি সংগঠন। তারা তাসলিমার পরিবারের সহায়তার জন্য একটি সহায়তা তহবিল খুলেছে। সহায়তা পাঠানোর বিকাশ নম্বর ০১৯৮৫-৬২৭ ৬৯০ (বিকাশ পার্সোনাল, জ্ঞানের আলো পাঠাগার)। এছাড়াও তাসলিমা বেগমের সাথেও যোগাযোগ বা বিকাশ করা যাবে ০১৯৬৫-১৮০ ৪৭৫ এই নম্বরে।

‘‌জ্ঞানের আলো পাঠাগার' এর সভাপতি সুশান্ত মন্ডল বলেন, ‘যদি প্রধানমন্ত্রী বা সমাজের বিত্তবানরা একটু সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে হয়তো এ পরিবারটি অভাব অনটনের হাত থেকে রেহাই পাবে। স্কুলে যেতে পারবে ছোট ছোট ছেলে মেয়েগুলো।'

 

বাদল /টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়