ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

দুর্ঘটনার খবর পেলেই ছুটে যান ‘আইকন’

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৯, ৮ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুর্ঘটনার খবর পেলেই ছুটে যান ‘আইকন’

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : নগরীতে সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেলেই ছুটে যান ‘আইকন’ কর্মীরা। আর মুহূর্তের মধ্যেই সড়কে পড়ে থাকা যানবাহলের ভাঙা ও টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া গ্লাস (কাঁচ) তুলে নেন।

কোনো দুর্ঘটনার পর সড়কে পড়ে থাকা টুকরো কাঁচ কুড়িয়ে স্থানটি পরিষ্কার করে পথচারী ও যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার ব্যতিক্রমধর্মী কাজে নিয়োজিত রয়েছে খুলনার ‘আইকন’ নামের এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বছরের পর বছর ধরে এ কাজটি করছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। নিজ খরচে মানুষের সেবায় এ কাজ করছেন আইকনের পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বেলাল।

সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেলে আইকন ব্রাশ, বালতি নিয়ে আইকনের কর্মীরা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। ইতোমধ্যে এমন উদ্যোগে সাড়াও পড়েছে বেশ। ‘দেশের সেবায়, দশের সাথে’ এই মন্ত্রকে ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

প্রতিনিয়ত নগরীতে ঘটছে ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা। এতে সড়কে পড়ছে বাস, ট্রাক, ইজিবাইক, মাহিন্দ্রাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের টুকরো গ্লাস (কাঁচ)। কাঁচের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহনের টায়ার এবং অসাবধানতায় কাটছে পথচারীদের পা। বিষয়টি বিবেচনায় এনে দুর্ঘটনার পর পড়ে থাকা টুকরো গ্লাস (কাঁচ) পরিষ্কার করতে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন ‘আইকন’ এর কর্মীরা। সচেতন জনতাও এ কাজে সামিল হচ্ছেন আইকনের ০১৯৭৭-৮৫৫৯০১ এই নম্বরে ফোন করে।

নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার মো. সাকিব হোসেন জানান, কয়েকদিন আগে সোনাডাঙ্গা মোড়ে ইজিবাইক দুর্ঘটনায় সড়কে ভাঙা কাঁচ পড়ে থাকতে দেখে মোড়ের দোকানদার ‘আইকন’র সংশ্লিষ্ট নম্বরে ফোন করেন। ১৫/২০ মিনিট পরে তিনজন লোক এসে কাচের টুকরোগুলো তুলে নিয়ে যান।

ট্রাফিক সার্জেন্ট চন্দন দাশ বলেন, ছোটবেলায় শিক্ষকদের কাছে শিখেছিলাম, রাস্তায় কলার খোসা বা কাটা পড়ে থাকলে সেটি সরিয়ে ফেলতে হবে। সকলে যাতে সুন্দরভাবে চলাচল করতে পারে। কিন্তু ক’জনে মানে। তবে কিছু কিছু লোক, আজও ছোটবেলার শিক্ষা মনে রেখে মানুষের কল্যাণে নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি আরো জানান, নগরীর কর্মরত ট্রাফিক সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ‘আইকন’ একটি পরিচিত নাম। নগরীর বিভিন্ন স্থানে ইজিবাইক, মাহেন্দ্রা, মাইক্রো একসিডেন্ট করলে এবং এর গ্লাস টুকরো রাস্তায় পড়ে থাকলে আইকনের লোকেরা কুড়িয়ে নিয়ে যায়।

ব্যতিক্রমধর্মী এই উদ্যোগের প্রধান উদ্যোক্তা আইকনের পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বেল্লাল রাইজিংবিডিকে জানান, ৭/৮ বছর আগে রাস্তায় পড়ে থাকা কাঁচের টুকরায় একটি পথ শিশুর পা কাটার দৃশ্য দেখেছিলাম। গত বছর আমি নিজেও রাস্তায় পড়ে থাকা টুকরো কাঁচের ওপর পিছলে পড়লে বিষয়টি আমাকে নাড়া দেয়। ভাবলাম, ভাঙা কাঁচের টুকরোয় অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন। পরবর্তীতে আমি আমার কাছের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে নেমে পড়ি রাস্তায়।

তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন প্রায় ৮/১০টা দুর্ঘটনা হচ্ছে নগরীতে। দু’জন লোক রেখেছি। তাদের বেতন, যাতায়াত খরচ দিতে হয়। পরিবারের খরচের পরিমাণ কমিয়ে এ কাজে ব্যয় করছি। এখন শুধু নগরী থেকে নয় মহাসড়ক এলাকা থেকেও ফোন আসে এবং আমার লোকেরা সেখানে কাজ করছে। একার পক্ষে একটু কষ্ঠসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। তবে একটি মটরসাইকেল হলে কাজটি অনেক সহজ হতো বলেও জানান তিনি।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ সাইফুল হক রাইজিংবিডিকে জানান, ভাল কাজে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে। আইকনের এ ধরণের কাজের দুর্ঘটনার পর আরো দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যাচ্ছে। এ ধরণের কাজ আসলেই প্রশংসনীয়।

 

রাইজিংবিডি/খুলনা/০৮ আগস্ট ২০১৯/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়