ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দেশের প্রথম বৈদ‌্যুতিক খুঁটিবিহীন শহর সিলেট (ভিডিও)

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৬, ৭ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেশের প্রথম বৈদ‌্যুতিক খুঁটিবিহীন শহর সিলেট (ভিডিও)

সিলেটে পর্যটকরা প্রথমেই আসেন হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার এলাকায়। সেখান থেকেই অন‌্য গন্তব‌্যে যান। এ কারণে সব সময়ই মাজার এলাকায় ভিড় লেগে থাকে। মঙ্গলবার সম্পূর্ণ নতুন চেহারার দরগাহ এলাকা দেখে অনেকেই চমকে গেছেন।

এক পর্যটক বলেন, ‘দরগায় প্রবেশের সড়ক বদলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম। বিশ্বাস হচ্ছিল না, এটি দরগাহ এলাকা। বিদ্যুতের খুঁটি নেই, নেই তারের জঞ্জালও। তবু জ্বলছে সড়ক বাতি।’

সিলেট নগরীকে জিজিটাল স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এর অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ বোর্ডের অর্থায়নে ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, সিলেট’ নামে একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে নগরের বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচে নেয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সাত কিলোমিটার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন মাটির নিচে নেয়া হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা।

এ প্রকল্পের অধীনে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারের প্রধান ফটক থেকে মাজার পর্যন্ত সড়কের বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচে নেয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে দুই সপ্তাহ এ কার্যক্রম পরিচালনার পর সোমবার পুরোপুরিভাবে সড়কটি বৈদ্যুতিক খাম্বামুক্ত করা হয়। এরপর বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ঝুলে থাকা তার ও বৈদ্যুতিক খুঁটিবিহীন শহর হিসেবে সিলেটের নাম উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দরগাহ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে নেই তারের জঞ্জাল। নেই বিদ্যুতের খাম্বাও। সড়কে নতুন করে পিচ ‌ঢালার কাজও চলছে। এর মাঝেই সড়কে সেলফি উৎসবে মেতেছেন পর্যটকরা। কেউ কেউ ফেসবুকে লাইভ করছেন, তুলছেন ছবি। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও আসছেন বিদ্যুৎ লাইন আর খাম্বাবিহীন এ সড়কের সৌন্দর্য দেখতে।

কুমিল্লা থেকে আসা আশরাফ আলী বলেন, ‘আমি মঙ্গলবার সকালে সিলেটে এসেছি। রাতে ফেসবুকে ছবি দেখে বিশ্বাস হয়নি। তবে আজ সন্ধ্যায় মাজার এলাকায় এসে মুগ্ধ হই। বাংলাদেশ উন্নতির পথে আছে, এটি তার প্রমাণ।’

চট্টগ্রামের শাহাদত হোসেন বলেন, ‘বিদেশে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন নেয়ার কথা শুনেছি। এখন সিলেটে এভাবে লাইনগুলো মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে এলাকাটি ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। তারের জঞ্জাল ও বিদ্যুতের খাম্বা না থাকায় সৌন্দর্য আরো বেড়েছে।’

নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা কানন চন্দ বললেন, ‘বন্ধুর কাছ থেকে শুনে দরগাহ এলাকায় ঘুরতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে। বাংলাদেশ এখন আর পিছিয়ে নেই। সবদিক থেকেই উন্নয়ন হচ্ছে। মুজিববর্ষে এটি সিলেটবাসীর জন্য অন্যতম উপহার।’

এ প্রকল্পের বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন চালু করা চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। তা অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। এ কাজে বিদ্যুৎ বিভাগকে সিটি করপোরেশন সার্বক্ষণিকভাবে সহযোগিতা করছে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘১০-১৫ দিন ধরে পরীক্ষামূলক বিদ‌্যুৎ সরবরাহ পর্যবেক্ষণের পর পূর্ণ সরবরাহ শুরু হয়েছে। শাহজালাল (রহ.) মাজার এলাকা থেকে কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত পাইলট প্রকল্পে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতের লাইন চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে পুরো নগরের বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচে নেয়া হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘উন্নত রাষ্ট্রের আদলে দেশে প্রথম সিলেটে মাটির নিচের বিদ্যুৎ লাইন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এজন্য রাস্তার দুই পাশের বিদ্যুতের খাম্বা ও অন্যান্য সার্ভিস লাইনের তার সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ কারণে মাজার এলাকা তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত হয়েছে, সৌন্দর্যও বেড়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ইলেকট্রিক ক্যাবল প্রসেস’ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে কাজটি আটকে যায়। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হয় প্রকল্পের কাজ।

প্রকল্পের আওতায় নগরীর ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই এলাকার বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন কেন্দ্র থেকে ভূগর্ভস্থ বিদুৎ সরবরাহের লাইন আম্বরখানা হয়ে যাবে চৌহাট্টায়। চৌহাট্টা থেকে একটি লাইন জিন্দাবাজার হয়ে কোর্ট পয়েন্টে হয়ে সিলেট সার্কিট হাউজ পর্যন্ত যাবে। আরেকটি লাইন চৌহাট্টা থেকে সিলেট ওসমানী মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত যাবে। এছাড়া, শাহজালাল উপশহর এলাকায় কয়েকটি ব্লকেও এ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচ নেয়া হবে।

ভিডিও :

 

সিলেট/নোমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়