ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

‘দ্যাশে করোনা আইলো, আমাদেরও খাওয়ার পথ বন্ধ হইলো’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ২৯ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘দ্যাশে করোনা আইলো, আমাদেরও খাওয়ার পথ বন্ধ হইলো’

এক বেলা খাবারও জুটছে না মরিয়াম, সফুরা, জাহানারার। মানুষের দেখা নেই, ভিক্ষা চাইবেন কার কাছে। তাই অনেকটা না খেয়েই পড়ে আছেন এই তিন বৃদ্ধা। তিনজনই ছিন্নমূল, খোঁজ নেওয়ার মতো স্বজন নেই। এদের মধ্যে জাহানারা মানসিক ভারসাম্যহীন। সফুরা রোগে-শোকে কাতর। মরিয়ামের চিন্তা—তিনি মারা গেলে কে তার কবর দেবে?

রোববার (২৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় এই তিন ছিন্নমূল বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে করোনা আতঙ্কের সময় তাদের দুর্দশার কথা জানা যায়। 

তীব্র রোদের মধ্যে মতিঝিলের ওয়াপদা ভবনের সামনে সড়কের আইল্যান্ডের ওপর বসে ছিলেন জাহানারা। একা একা বিড়বিড় করছিলেন। পায়ের অধিকাংশ জায়গা ঝলসানো। গায়ে ময়লা জামা। জট বেঁধেছে চুলে।

কাছে যেতেই জাহানারা বলেন, ‘আসছিস? কিছু তো খাইনি, খাবার দে।’

সকালে খেয়েছেন কি না, জিজ্ঞেস করলে বৃদ্ধা মুখ ফিরিয়ে বলেন, যা যা।

ফিরে আসার সময় আবার ডেকে বলেন, দে দে, খাওন দে।

মধুমিতা সিনেমা হলের গলি দিয়ে বস্তা হাতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে অস্থির হয়ে হাঁটছিলেন এক নারী। বাড়ি রংপুরে। কাছে গিয়ে নাম জানতে চাইলে ক্ষয়ে যাওয়া দাঁতে দাঁত চেপে তিনি বলেন, ‘নাম দিয়ে কী হবে? নাম তো আছে একটা। মায়ে রাখছে। হে তো মইরা গেছে।’

তাকেও জিজ্ঞাসা করা হয়, খাওয়া হয়েছে কি না? তিনি বলেন, ‘বাবা কেউ তো নাই, কে দিবে খাওন? সকাল থেকে কিছুই খাইনি। দূরের এক বাসায় যাই, দেখি তারা খাওন দেয় কি না।’

তার হাতে কিছু টাকা দিলে তিনি বলেন, ‘এখন টাকা দিয়েও তো খাওন পাওয়া যায় না। সব বন্ধ। কই পামু খাবার?’

তিনি নিজের কাছে থাকা ১০ টাকার একটি নোট বের করে বলেন, ‘টাকা আছে, খাওন নাই। না খেয়ে আছি। কষ্টে হাঁটতে পারছি না।’

মতিঝিলের সোনালী ব্যাংক কলোনির পাশে ময়লার স্তূপের পাশে ঝুপড়ির মধ্যে মরিয়ামের বসবাস। স্বজনহীন এ বৃদ্ধার বয়স প্রায় ৭০। বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে। জমির খাজনা দিতে না পারায় ভিটেবাড়িসহ সবকিছু হাতছাড়া হয়ে যায়। বিয়ের পরপরই স্বামী মারা যান। এলাকায় থাকার জায়গা পাননি। বাঁচার তাগিদে ঢাকায় এসেছিলেন।

মরিয়াম বলেন, ‘হে সময় তো জোয়ান ছিলাম। এক ব্যাটা বিয়ার কথা কইয়া ঢাকায় লইয়া আসে। সোনালী ব্যাংকের পিছনে আঁরে হালায় থুই চলি গেছে।  চলতি চলতি বুড়ি হয়ে গেলাম। অহন আর কেউ খোঁজ-খবর নেয় না।’

তিনি বলেন, ‘দ্যাশে করোনা আইলো আর আমাদেরও খাওয়ার পথ বন্ধ হইলো। চুলায় আগুন জ্বলে না কয়েক দিন। অহন মরি গেলে কবর দিবে কে? আঁর তো আপন কেউ নাই।’

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থাবা দিয়েছে বাংলাদেশেও। এতে আতঙ্কিত মানুষ। দেশে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষের চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ। জনসাধারণকে বাসায় থাকতে বলা হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন মরিয়াম, সফুরা, জাহানারার মতো হাজার হাজার ছিন্নমূল মানুষ।


ঢাকা/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়